Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Chit fund

স্বখাত সলিলে কেন বার বার ডোবে বাঙালি

সমাজকর্মীরা দেখেছেন, ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলো নব উদ্যমে গ্রামীণ জনতাকে নিশানা করছে। যদিও তাদের লাগাম পরানোর আইনে বিভিন্ন নিয়ামক সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব থাকছে।

সুদীপ্ত সেন।—ফাইল চিত্র।

সুদীপ্ত সেন।—ফাইল চিত্র।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২০ ০৪:১৭
Share: Save:

মেকিরাম আগরওয়ালা ভাগ্যবান। বিরিঞ্চিবাবার আশীর্বাদে সটান পাড়ি দিয়েছিলেন নাইন্টিন ফোর্টিনে। তার পরে জলের দরে লোহা কিনে পাঁচ বছর বাদে যুদ্ধ পরবর্তী চড়া বাজারে পদার্পণ করতেই কেল্লা ফতে। পরশুরামের গল্পের পাঠক সে-কাহিনি জানেন।

ব্যাঙের আধুলির মতো যৎসামান্য রোজগার জমা রেখে যাঁরা সুদ বাবদ দেড় গুণ, দু'গুণ আশা করেছিলেন তাঁদের সঙ্গে আগরওয়ালার ফারাক থাকতে পারে। কিন্তু আমানতে চলতি বাজার দরের তুলনায় এত বেশি সুদের আশা পূরণ করতে হলে আজও কোনও ‘বিরিঞ্চিবাবার’ আশীর্বাদ ছাড়া গতি নেই। এই সারসত্যটুকু এখনও বুঝেও বোঝেনি আমবাঙালি। হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ব্যাঙ্কের চলতি সুদের হারের থেকে অস্বাভাবিক দরে সুদ কেউ দিতে চাইলে তাঁকে বিশ্বাস করা চলবে না। কিন্তু নানা ধরনের লোভ বা অসহায়তায় তা অনেকেরই খেয়াল থাকে না।

১৯৭০-৮০-র দশকের সঞ্চয়িতা কেলেঙ্কারি, ১৯৯০এর দশকের সঞ্চয়িনী, ভেরোনা, ওভারল্যান্ড বা হাল আমলের সারদা কেলেঙ্কারি—পর পর আর্থিক কেলেঙ্কারির ধারাবাহিকতা তারই প্রমাণ। বিচারপতি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় সঞ্চয়িতা-কাণ্ডের সময়ে আইনজীবী থেকে বিচারপতি হয়েছিলেন। সঞ্চয়িনী-কাণ্ডের পরে হাইকোর্টে তাঁর বিখ্যাত রায় সুপ্রিম কোর্টও বহাল রাখে। বিভিন্ন ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার কুকাজের প্রতিকারেই যে কোনও রাজ্য সরকার জনস্বার্থ মামলা করতে পারবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে বলে তিনি রায় দেন। সেই বিচারপতি সমরেশবাবুর পর্যবেক্ষণ, সঞ্চয়িতার পরে সঞ্চয়িনী এবং পরবর্তী কালের সারদা-কাণ্ড পর্যন্ত বার বার দেখেও মানুষের ঠেকে শেখার নামগন্ধ নেই।

আরও পড়ুন: প্রায় গৃহবন্দি রইলেন শুভেন্দু, রবিবার কী বলবেন মহিষাদলে, জল্পনা তুঙ্গে

বরং সঞ্চয়িতার প্রভাব কলকাতা ও আশপাশেই ছড়িয়েছিল, সারদার সময়ে তা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। আমানতকারী ও এজেন্ট সুরক্ষা মঞ্চের মুখপাত্র তারক সরকার বলছেন, ‘‘সঞ্চয়িতার কেলেঙ্কারির বহর ৫০০০ কোটি টাকার হলে সারদা এবং অন্য সব অর্থলগ্নি সংস্থার জমানায় তা দু'লক্ষ কোটি টাকা ছুঁয়েছে।’’ ১৪৭টি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা চলছে। হাইকোর্টের নির্দেশে গড়া বিচারপতি এসপি তালুকদার কমিশনের মাধ্যমে সাত বছরে সবেমাত্র ৫৪টি সংস্থার থেকে প্রাপ্য টাকা বিনিয়োগকারীদের কাছে হস্তান্তর শুরু হয়েছে। ছিটেফোঁটা টাকা ফেরত দেওয়া গিয়েছে। সঞ্চয়িতা, সঞ্চয়িনীর টাকাও অনেকেই এখনও ফেরত পাননি।

আরও পড়ুন: কাঁচা পাটের দাম বেঁধে দিল রাজ্য

মহাভারতে যুধিষ্ঠিরের পাশা খেলায় বারবার সর্বস্বান্ত হওয়ার মধ্যে মহাকাব্যের নায়কের মহতী ট্র্যাজিক দোষ খুঁজে পান অনেকেই। কিন্তু বার বার বোকা হয়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার পিছনে নানা আর্থসামাজিক কারণ। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘চটজলদি লাভের আশায় সঞ্চয়ের লগ্নি সবারই স্বাভাবিক প্রবণতা। এটা বুঝেই মানুষকে বোকা বানানো চলে।’’ বিচারপতি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বেশির ভাগ মানুষের ‘স্বল্পমেয়াদি স্মৃতির’ কথা বলছেন। তবে পুরনো কেলেঙ্কারি ভুলে যাওয়াতেই সমস্যাটার শেষ নয়। ব্যাঙ্ক পরিষেবার বাইরে নাগরিকদের একটা অংশ। সরকারি প্রকল্পের জন্য অ্যাকাউন্ট খুললেও টাকা ব্যাঙ্কে রাখা অনেকের ধাতে নেই। সমাজকর্মীরা দেখেছেন, ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলো নব উদ্যমে গ্রামীণ জনতাকে নিশানা করছে। যদিও তাদের লাগাম পরানোর আইনে বিভিন্ন নিয়ামক সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব থাকছে। যার ফলে পুনরাবৃত্তি প্রতারণার এবং ঠকতে চাওয়ার!

অন্য বিষয়গুলি:

Chit fund Microfinance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy