(বাঁ দিক থেকে) আকাশি, সুপার ও বুলেট। —নিজস্ব চিত্র।
বাজারে আকাশি লঙ্কার প্রভাব কমছে। সেখানে জায়গা নিচ্ছে সুপার লঙ্কা। গাঢ় সবুজ রঙের সরু ছুঁচলো এই লঙ্কার চাহিদা বাড়ছে। কৃষকরা এই লঙ্কার দামও ভাল পাচ্ছেন। এত দিন পর্যন্ত হলদিবাড়ি বাজারে একচেটিয়া রাজত্ব করে এসেছে আকাশি লঙ্কা। তাকে বাদ দিয়ে হলদিবাড়ির কৃষকেরা এখন এই সুপার লঙ্কা চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
হলদিবাড়ির পাইকারি সব্জি ব্যবসায়ী এবং কৃষকেরা জানিয়েছেন এ রকম চলতে থাকলে আগামী তিন বছরের মধ্যে পুরোপুরি ভাবে আকাশি লঙ্কার বাজার নিয়ে নেবে সুপার লঙ্কা। কারণ সুপার লঙ্কায় ঝাল বেশি হয়। তুলনায় আকাশি লঙ্কায় ঝাল কম হয়। হলদিবাড়ি ব্লকের কৃষি আধিকারিক সঞ্জীব মৈত্রী বলেন, “সুপার লঙ্কার ঝাল বেশি। সুপার লঙ্কার মধ্যে ক্যাপসাইসিন নামে এক ধরনের পদার্থ থাকার জন্য ঝাল বেশি হয়। চাহিদা বেশি থাকায় হলদিবাড়ি ব্লকে এখন এই সুপার লঙ্কার চাষ বেশি হচ্ছে।”
কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, হলদিবাড়িতে এ বছর মোট ২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে লঙ্কার চাষ হয়েছে। তার মধ্যে ১ হাজার হেক্টর জমিতে সুপার লঙ্কার চাষ হয়েছে, ৭০০ হেক্টর জমিতে আকাশি এবং ৬০০ হেক্টর জমিতে বুলেট লঙ্কার চাষ হয়েছে। আকাশি লঙ্কা সুপার লঙ্কার মত সরু ছুঁচলো হয় না। সামান্য মোটা এবং লম্বা দেখতে হয়। বুলেট লঙ্কা বেঁটে-মোটা হয়। বুলেট লঙ্কার ঝালও আকাশি লঙ্কার তুলনায় বেশি হয়। তবে সুপার লঙ্কার তুলনায় ঝাল কম হয়।
চাহিদা এবং দামে এই দু’ধরনের লঙ্কাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে সুপার লঙ্কা। হলদিবাড়ি পাইকারি সব্জি বাজারে মঙ্গলবার সুপার লঙ্কা প্রতি কিলোগ্রাম ১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আকাশি লঙ্কা বিক্রি হয়েছে ১০ টাকা কিলোগ্রাম দরে এবং বুলেট লঙ্কার দাম ছিল ৭ টাকা ৫০ পয়সা।
হলদিবাড়ি পাইকারি সব্জি বাজার সূত্রে জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে এই সুপার লঙ্কার চাহিদা আছে। হলদিবাড়ি পাইকারি সব্জি বাজার থেকে প্রতি দিন ৪০টি চার চাকার ছোট ট্রাক তিন টন করে সুপার লঙ্কা নিয়ে ১০ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের যে কোনও জায়গায়। আরও কম সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে গঙ্গার এপারে উত্তরবঙ্গের সমস্ত জায়গায়। তা ছাড়া প্রতি দিন বড় ৩৫টি ট্রাকের প্রতি ট্রাকে ১৩ টন মাল নিয়ে ট্রাকগুলি পাড়ি দিচ্ছে উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লিতে। তার মধ্যে ১০টি ট্রাকে ফরিদাবাদ, জৈনপুর এবং আজমগড়ে যাচ্ছে সুপার লঙ্কা। বাকি ট্রাকে আকাশি লঙ্কা এবং বুলেট লঙ্কা যাচ্ছে দিল্লি এবং উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায়। হলদিবাড়ি পাইকারি সব্জি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক দিগ্বিজয় সরকার বলেন, “এখন সবুজ ঝাল লঙ্কার চাহিদা থাকায় সুপার লঙ্কাই বেশি বাইরে যাচ্ছে। তবে দিল্লি সমেত উত্তরপ্রদেশের কয়েকটি জায়গায় এখনও কম ঝালের আকাশি লঙ্কার চাহিদা আছে।” হলদিবাড়ির দেওয়ানগঞ্জের হুদুমডাঙা গ্রামের কৃষক সাত্তার আলি সরকার, বিজয়নগরের কৃষক মনোরঞ্জন সরকার বলেন, “সুপার লঙ্কা চাষ করে দাম ভাল পাওয়া যাচ্ছে। আমরা ঠিক করেছি পরের বার থেকে আরও বেশি জমিতে সুপার লঙ্কা চাষ করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy