গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বিল নিয়ে কেন সই করেননি তা নিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের দফতরের হলফনামা জমা নিল না কলকাতা হাই কোর্ট। মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে পরবর্তী শুনানি হবে বলে জানিয়েছে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ। পুজোর ছুটির পরে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলে জানানো হয়েছে।
যদিও এর আগে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় এবং হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ এ বিষয়ে রাজ্যপালের হলফনামা চেয়েছিল। জানাতে বলা হয়েছিল, কেন রাজ্যপাল বিলে সই করেননি? কিন্তু সোমবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যপালের আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্তকে জানিয়ে দিয়েছে, দুই বিচারপতির ওই নির্দেশ এখনই কার্যকর হবে না।
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় আইন (সংশোধন) বিল সংক্রান্ত মামলায় গত ১২ সেপ্টেম্বর রাজ্যপালের দফতরের হলফনামা চেয়েছিল বিচারপতি মুখোপাধ্যায় এবং বিচারপতি ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। ওই বিলের বিরুদ্ধে দায়ের করা জনস্বার্থ মামলার শুনানিপর্বে রাজভবনের হলফনামা চাওয়া হয়েছিল।
দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশে জানিয়েছিল, এই মামলায় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৬৩ অনুযায়ী রাজভবনকে হলফনামা পেশ করে জবাব দিতে হবে ৪ অক্টোবরের মধ্যে। ১৬ অক্টোবর মামলার পরবর্তী শুনানি বলে জানিয়েছিল দুই বিচারপতির বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানমের অনুপস্থিতিতে সে দিন মামলার শুনানি হয়েছিল দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। প্রধান বিচারপতি ফিরে আসায় সোমবার ফের তাঁরই বেঞ্চে মামলার শুনানি হয়।
ওই মামলার শুনানি পর্বে রাজ্য সরকারের তরফে দুই বিচারপতির বেঞ্চকে জানানো হয়, গত বছর ৭ জুন পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় আইনের (সংশোধন) বিল ২০২২ রাজ্য বিধানসভায় পাশ হয়েছে। ওই বছর ১৫ জুন রাজ্যপালের কাছে ওই বিল পাঠানো হয়। কিন্তু ওই বিলে এখনও পর্যন্ত সই করেননি রাজ্যপাল বোস। রাজ্য বিধানসভার কোনও বিল আইনে পরিণত করতে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২০০ অনুযায়ী রাজ্যপাল তিনটি পন্থা অবলম্বন করতে পারেন। প্রথমত, রাজ্যপাল নিজেই বিলে সম্মতি দেবেন। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রপতির কাছে বিলটি বিবেচনার জন্য পাঠাবেন। তৃতীয়ত, পুনর্বিবেচনার জন্য বিধানসভায় সংশোধনের জন্য বিলটি ফেরত পাঠাতে পারেন। রাজ্যের অভিযোগ, রাজ্যপাল কোনও পথই বেছে নেননি। ফলে বিলটি রাজভবনেই পড়ে রয়েছে।
দুই বিচারপতির বেঞ্চে রাজ্যের যুক্তি ছিল, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৬৩ অনুসারে রাজ্যপাল মন্ত্রিসভার কাজে সাহায্য এবং পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু এ ভাবে সহযোগিতা না করে বিল আটকে রাখতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ ছিল, কোনও একটি পথ বেছে নিতে পারতেন রাজ্যপাল। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কোনও নির্দেশ তো এ ভাবে দিতে পারে না আদালত। কিন্তু সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হলেও কি আদালত প্রশ্ন করতে পারে না? হাই কোর্টের মতে, নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে রাজ্যপাল সময় নিতে পারেন। এ বিষয়ে রাজ্যপালের উত্তর দেওয়া উচিত বলে মনে করছে আদালত।
শুনানিপর্বে রাজ্যের আইনজীবী জানিয়েছিলেন, গত ৩১ মে’র মধ্যে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ওই বিলের মাধ্যমে রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনকে একই ছাতার তলায় নিয়ে আসা হয়েছে। এখন ওই বিল আটকে থাকার ফলে উপাচার্য নিয়োগে সমস্যা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করছেন রাজ্যপাল। অন্য দিকে, মামলার শুনানিতে কেন্দ্রের আইনজীবী, ডেপুটি সলিসিটর জেনারেলের দাবি, জনস্বার্থ মামলকারী ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’ রয়েছে। তিনি একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। তা ছাড়া রাজ্যপালের বিরুদ্ধে এই মামলার শুনানি হাই কোর্টে হতে পারে না। কারণ, সংবিধান অনুযায়ী বিধানসভার কার্যপদ্ধতি নিয়ে আদালত কোনও নির্দেশ দিতে পারে না। কিন্তু সেই যুক্তি কার্যত খারিজ করে দিয়ে রাজভবনের কাছে হলফনামা চেয়েছে বেঞ্চ। প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন নিয়ে বিধানসভার বিলে রাজ্যপাল যাতে সই করেন তা নিয়ে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন সায়ন মুখোপাধ্যায়-সহ কয়েক জন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy