উমেশচন্দ্র মাহাতো। নিজস্ব চিত্র
গাড়ি উল্টে মৃত্যু হল এক ছৌশিল্পীর। মৃতের নাম উমেশচন্দ্র মাহাতো (৪৯)। বাড়ি পুরুলিয়ার বোরো থানার বারি গ্রামে। শুক্রবার ভোরে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে, পশ্চিম বর্ধমানের বুদবুদের ভিড়সিন মোড় লাগোয়া একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন ছৌশিল্পী আহত হয়েছেন। তাঁরা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, ঘন কুয়াশার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। চার জন এখনও বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি। তাঁরা হলেন, গদাধর মাঝি, রাজেশ মাহাতো, কার্তিক মাহাতো রামকৃষ্ণ মাহাতো। রামকৃষ্ণবাবুকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়।
দলের ম্যানেজার আনন্দ মাহাতো জানান, বারি অগ্রগামী ছৌনৃত্য দলের সদস্য ছিলেন উমেশচন্দ্রবাবু। তিনি ধামসা বাজাতেন। প্রায় দেড় দশক ধরে এই ছৌ-দল জেলা ও জেলার বাইরে তাদের নাচ পরিবেশন করে এসেছে। তিনি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাত আটটা নাগাদ দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে একটি পণ্যবাহী গাড়িতে করে চালক-সহ ২৭ জনের একটি দল পুরুলিয়া থেকে কলকাতার দিকে যাচ্ছিল। ওই দলে উমেশবাবুও ছিলেন। বাদ্যযন্ত্র ও মুখোশের ওপর যাতে চাপ না পড়ে, তার তদারকি করছিলেন উমেশবাবু।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক ধরে যেমন ঠান্ডা পড়েছে, তেমনি কুয়াশার দাপটও রয়েছে। ঘন কুয়াশায় কিছু বুঝতে না পেরে ভিড়সিন মোড়ের কাছে গাড়িটি ডানদিকের ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে উল্টে যায়। গাড়িতে যাঁরা ছিলেন তাঁরা ছিটকে পড়েন। সঙ্গে থাকা ছৌনাচের মুখোশ-সহ অন্য সামগ্রীও ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। সামনেই পুলিশের টহলদারি গাড়ি ছিল। দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধারকাজ শুরু করেন পুলিশকর্মীরা। সকল আহতদের উদ্ধার করে গলসি ১ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে উমেশচন্দ্রবাবুকে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে বর্ধমান মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা করা হয়। এ দিন দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে উমেশবাবুর দেহের ময়না-তদন্ত হয়।
এই দুর্ঘটনার পরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বারি গ্রামে। উমেশবাবুর বাড়ির আশপাশে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন প্রতিবেশীরা। ওই গ্রামের বাসিন্দা শ্রীমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভোরেই আমরা দুর্ঘটনার খবর পাই। সকাল হতেই জানতে পারি উমেশ আর নেই।’’ উমেশবাবুর বাড়িতে অভাব-অনটনের ছাপ। মাটি দিয়ে ইট গাঁথা দেওয়াল। দেওয়াল থেকে ছেঁড়া কাঁথা ঝুলছে। হংসেশ্বর, রমেশ ও উমেশ তিন ভাই। উমেশবাবুর দুই মেয়ে। দেড় বছর আগে এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। আর এক মেয়ে দশম শ্রেণিতে ও ছেলে দীনবন্ধু নবম শ্রেণিতে পড়ে। দুই পড়শি মহিলা উমেশবাবুর স্ত্রী ভাগ্যবতীদেবীকে দু’টো ভাত খাওয়ানোর চেষ্টা করছিলেন। দরজায় পড়শিদের ফের ভিড় তিনি নিজের কান্নাকে আটকাতে পারলেন না।
পুরুলিয়া জেলার সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতোর দাদা শতদল মাহাতো বারি গ্রামেই থাকেন। শতদলবাবু বলেন, ‘‘উমেশের জমিজমা নেই। বিপিএল শ্রেণিভুক্ত। ছৌদলের পালায় ধামসা বাজাতেন। তাতে খাওয়া বাদ দিয়ে ২০০-২৫০ টাকা মিলত। অন্য সময় দিন মজুরি করতেন।’’ তাঁর পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূলের মানবাজার ২ ব্লকের যুব সভাপতি শান্তি গঙ্গোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy