—ফাইল চিত্র
রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজোর অনুমতি পেতে সরকারি তরফে সর্বোচ্চ আদালতে দৌড়োদৌড়ির নেপথ্যে কি আগাগোড়াই ভোটের সমীকরণ? যে সমীকরণের সামনে গৌন হয়ে যাচ্ছে পরিবেশ রক্ষা, রবীন্দ্র সরোবরের জীববৈচিত্রের অস্তিত্ব এবং সেখানকার দূষণ-সহ যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়? পরিবেশবিদ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একটি বড় অংশ বলছেন, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে নির্দিষ্ট কিছু আসনে জয় নিশ্চিত করতেই সরকারের এমন ‘মরিয়া চেষ্টা’।
যদিও কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান তথা পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ‘মরিয়া চেষ্টা’-র অভিযোগ মানতে চাননি। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘আমরা কারও ধর্মীয় আবেগে আঘাত দিতে চাই না। এটাই মূল কারণ। এর মধ্যে ভোট সমীকরণের কোনও প্রশ্নই নেই।’’
কিন্তু তাই বলে পরিবেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে অনুমতি আদায়ের চেষ্টা করতে হবে?
ফিরহাদের কথায়, ‘‘একদমই নয়। পরিবেশের গুরুত্ব না থাকলে আমরা শহরের বায়ুদূষণ রোধে বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করি না। পরিবেশের গুরুত্ব আমাদের কাছেও রয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে কারও ধর্মীয় আবেগ যাতে আহত না হয়, সেটাও সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন। বছরের পর বছর তো ওখানে ছটপুজো হয়েছে!'’
কেএমডিএ-র সিইও অন্তরা আচার্যকে একাধিক বার ফোন, মেসেজ এবং হোয়াটসঅ্যাপ করা হলেও এ দিন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে কেএমডিএ আধিকারিকদের একাংশ জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়া যাবে না ধরে নিয়ে ছটপুজোর জন্য ইতিমধ্যেই ৪৪টি ঘাট তৈরি করা হয়েছে। রবীন্দ্র সরোবরের পরিবর্তে সেখানে যাতে পুণ্যার্থীরা যান, আজ, বুধবার থেকে তার প্রচার করা হবে। ফ্লেক্সও লাগানো হবে। পুরমন্ত্রীর কথায়, ‘‘রাজনীতি করলে নিশ্চয়ই আমরা এই কাজগুলো করতাম না। তার পরে আদালত যা রায় দেওয়ার, তা দেবে।’’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, বিহার, ঝাড়খণ্ড তো বটেই, এমনকি উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশ থেকে আসা প্রায় ৭০ লক্ষ বিহারি ভোটার রয়েছেন এ রাজ্যে। যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশই গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র পক্ষে গিয়েছে। ফলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে এই ‘ভোট-ব্যাঙ্ক’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের কথায়, ‘‘ব্যারাকপুর, আসানসোল, আলিপুরদুয়ার-সহ একাধিক আসন বিজেপি জিতেছে গত লোকসভায়। কারণ, ওখানে বিহারি-সহ অবাঙালি ভোটারদের সংখ্যা বেশি।’’
রাজ্যে ২৫ শতাংশের বেশি বিহারি-সহ অবাঙালি ভাষাভাষী ভোটার রয়েছেন, ২০১৯ সালের নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে এমন ১০টি লোকসভা কেন্দ্রের ফলাফল বিশ্লেষণ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী। তিনি জানাচ্ছেন, ওই ১০টি কেন্দ্রের মধ্যে আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, রায়গঞ্জ, ব্যারাকপুর, বর্ধমান-দুর্গাপুর ও আসানসোল, এই ছ’টি কেন্দ্রই বিজেপি দখল করেছে। সেখানে শাসকদলের দখলে গিয়েছে কলকাতা দক্ষিণ, কলকাতা উত্তর, হাওড়া ও উলুবেড়িয়া কেন্দ্রগুলি। বিশ্বনাথবাবুর কথায়, ‘‘বিহারি ভোট কমছে। তাই যে কোনও মূল্যে শাসকদল চাইছে বিহারি ভোটারদের সঙ্গে একটা সমঝোতা করতে। সেই কারণেই জাতীয় পরিবেশ আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরেও রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজোর অনুমতি পাওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের এই সক্রিয়তা!’’
পরিবেশবিদেরাও সরোবরে ছটপুজোর অনুমতি পাওয়ার জন্য সরকারি তৎপরতা লক্ষ করে ওই ভোট-সমীকরণের কথাই বলছেন। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘২০১৮ এবং ২০১৯ সালে রবীন্দ্র
সরোবরে ছটপুজোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তখন রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে যায়নি। কারণ, তখনও ভোটের দামামা বাজেনি। কিন্তু আগামী বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই সরোবরে ছটপুজো করিয়ে বিহারি ভোটারদের কাছে সরকার বার্তা দিতে চাইছে যে, আমরা
তোমাদের পাশেই রয়েছি। তাই চেষ্টা করেছি।’’ আর এক পরিবেশকর্মী সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দেবে, তাই মানতে হবে। তার বাইরে তো
কেউ যেতে পারবেন না।’’ পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সম্পাদক নব দত্ত আবার বলছেন, ‘‘পরিবেশের কোনও মূল্য আদৌ সরকারের কাছে রয়েছে কি না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। না হলে শুধু ছটপুজো কেন, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে এ ভাবে বাজি ফাটতে পারে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy