ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পে রাজ্যের প্রস্তাবিত রুট-ই মেনে নিল রেল। বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পর রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু সাংবাদিক বৈঠকে জানান, ওই রুটে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো তৈরি করতে যে অতিরিক্ত খরচ হবে, তা-ও বহন করবেন তাঁরা। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পে এ বার থেকে রাজ্য ও রেল হাতে-হাত মিলিয়ে কাজ করবে। প্রতি মাসে বৈঠকে বসবে দু’পক্ষ।
সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহ, বৌবাজার, লালদিঘি হয়ে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত মেট্রো রুটের প্রস্তাব দিয়েছিল রেল। ২০০৮ সালের ২৭ অক্টোবর সেই প্রকল্পের অনুমোদন মেলে। কিন্তু পুরনো মেট্রোর সেন্ট্রাল স্টেশনের কাছে নতুন স্টেশন করা নিয়ে জমি জট তৈরি হয়। মহাকরণের কাছেও স্টেশন তৈরি করা নিয়ে সমস্যা হয়। তার ফলে সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহ স্টেশন পর্যন্ত কাজ হয়ে থমকে যায়। শুরু হয় রাজ্য ও কেন্দ্রের চাপান-উতোর। এখনও বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারাধীন।
রাজ্য প্রস্তাব দিয়েছিল, সেন্ট্রাল স্টেশনের আগেই বৌবাজার থেকে হিন্দ সিনেমার সামনে দিয়ে এসএন ব্যানার্জি রোড, ধর্মতলা ট্রাম ডিপো হয়ে লালদিঘির কাছে পৌঁছক ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছিল, এই ঘুরপথে মেট্রো রুট করলে অতিরিক্ত ৭৬৪ কোটি টাকা খরচ হবে। সেই টাকার দায়ভার নেবে কে? কলকাতা হাইকোর্টে ইস্ট-ওয়েস্ট মামলার সর্বশেষ শুনানিতেও একই প্রশ্ন উঠেছিল। এ দিন প্রভুর ঘোষণায় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, রেলই সেই অতিরিক্ত খরচের ভার নেবে। তবে রেল এ দিন জানিয়েছে, কামরা তৈরি হয়ে না আসায় সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহ থেকে মেট্রো চালু হতে ২০১৮ সালের জুন মাস গড়িয়ে যাবে।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের জট কাটলেও জমি জটে আটকে রয়েছে রাজ্যের অন্যান্য রেলপ্রকল্পগুলি। সেই প্রকল্পগুলি নিয়ে কোনও আশার আলো কিন্তু এ দিনের বৈঠক থেকে মিলল না। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন নিজেই স্বীকার করেছেন, রাজ্যে রেলের বহু প্রকল্পের কাজ অল্প কিছু জমি বা কিছু মানুষের দাবিদাওয়া না মেটানোর কারণে আটকে রয়েছে। সেই জট ছাড়াতে রেলকে সাহায্য করবে রাজ্য। কিন্তু সেই সাহায্য মানে যে জমি অধিগ্রহণ নয়, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়ে মমতা ফের বলেন, ‘‘আমরা জোর করে কারও কাছ থেকে জমি নেব না। জমি নীতি বিল এখনও তৈরি হয়নি। প্রয়োজনে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করা হবে।’’ এই প্রসঙ্গে নোয়াপাড়া থেকে দক্ষিণেশ্বর রুটের মেট্রো প্রকল্পের উদাহরণ দিয়েছেন মমতা। তিনি জানান, ওই রুটে অল্প জমির জন্য প্রকল্প আটকে রয়েছে। সেখানে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য রেল পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। প্রয়োজনে রাজ্য সরকার ১১ কোটি টাকা দেবে।
ইস্ট-ওয়েস্ট ছাড়াও কলকাতা শহরে মেট্রোর পাঁচটি প্রকল্প চলছে। কিন্তু কোনও প্রকল্পের কাজই ৪০ শতাংশের কোঠা পেরোয়নি। মুখ্যমন্ত্রীও বলেন, ‘‘কাজে দেরি করা একটা ব্যাধি। এটা কাটাতে হবে। তাই একসঙ্গে কাজ করব।’’ রেলকর্তাদের মতে, এই ‘ব্যাধির’ কারণ মমতার জমি নীতি। রেলকর্তারা বলছেন, জোকা-বিবাদী বাগ ছাড়া বাকি সব ক’টিতেই জমি জট রয়েছে। জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রোয় টাঁকশাল ও সেনাবাহিনীর অনুমতি না মেলায় কাজ এগোচ্ছে না।
এ দিন সাড়ে ছ’টায় সপার্ষদ নবান্নে পৌঁছন রেলমন্ত্রী। তাঁকে স্বাগত জানান পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তার পর প্রভু সোজা চলে যান পনেরো তলায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব-সহ রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে প্রায় সওয়া ঘণ্টা বৈঠক করেন রেলমন্ত্রী ও রেলকর্তারা।
বৈঠকের সময় পাশাপাশি চেয়ারে বসেন মমতা ও প্রভু। সাংবাদিকদের সামনেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সুরেশ আমার ভাই। দীর্ঘদিন ধরে ওঁকে চিনি। আমরা একই সরকারে কাজ করেছি। আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড।’’ প্রভুও বলেন, ‘‘রেল প্রকল্প উনি খুবই ভাল বোঝেন। নিজেও তো রেলমন্ত্রী ছিলেন। তাই ওঁর কাছেই এসেছি।’’
রেল জানিয়েছে, খনি, বন্দর এবং পর্যটন এলাকায় যাতে যোগাযোগ বাড়ানো যায়, সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ রাজ্যেও সেই পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। মডেল স্টেশন গড়ার জন্য রাজ্যের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে
সংস্থা গড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দেশের ১৭টি রাজ্য ইতিমধ্যেই রেলের সঙ্গে এমন সংস্থা গড়েছে। রাজ্য জানিয়েছে, এই প্রস্তাব খতিয়ে দেখা হবে। মমতা রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ময়নাগুড়ি-যোগীঘোপা এবং তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রুটে লাইন পাতা এবং বুনিয়াদপুর ও কাঁচরাপাড়ায় রেল কারখানার কাজ শুরু করেছিলেন। সেগুলি নানা কারণে আটকে রয়েছে। ওই প্রকল্পগুলি শেষ করার জন্য প্রভুকে অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রকল্পগুলি শেষ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রভু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy