ফাইল চিত্র।
বেশ কিছু দিন ধরেই সেখানে নিয়মিত উড়ান নেই। মাঝেমধ্যে বিশেষ কোনও বিমানের ওঠানামার জন্য কোচবিহার বিমানবন্দর ব্যবহৃত হয়। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার ওই বিমানবন্দরের লাইসেন্স তুলে নিচ্ছে। আগামী বছরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত সেখানকার লাইসেন্স বহাল থাকবে বলে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে। তার পরে আর সেই লাইসেন্সের নবীকরণ হবে না।
এখন প্রতিদিন সকালে দু’ঘণ্টার জন্য কোচবিহার বিমানবন্দরের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল খুলে রাখা হয়। সপ্তাহ দুয়েক আগে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে নিয়ে সেখানে
হেলিকপ্টার ওঠানামা করেছিল। মাসখানেক আগে এক অসুস্থ ব্যক্তিকে সেখান থেকে ছোট বিমানে উড়িয়ে আনা হয় কলকাতায়। কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ওই বিমানবন্দরে কর্মীদের বসিয়ে রেখে অনর্থক বেতন গুনতে হচ্ছে। প্রতি বছর লাইসেন্স ফি দিতে হচ্ছে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ)-কে। দিল্লি জানিয়েছে, ২০২১-এর ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত কোচবিহার বিমানবন্দরের লাইসেন্স বহাল থাকবে। “কোভিড পরিস্থিতিতে সর্বত্র খরচ কমানোর চেষ্টা চলছে। কোচবিহারের কর্মীদের অন্যত্র কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। লাইসেন্স নবীকরণের বিষয়টি ডিজিসিএ জানে,” শনিবার বলেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অরবিন্দ সিংহ। বিমান মন্ত্রক সূত্রের খবর, বিমানবন্দরে কর্মী না-থাকলে লাইসেন্স পাওয়ার প্রশ্নই নেই।
আশির দশকে কলকাতা থেকে কোচবিহারে ছোট বিমান চালাত তৎকালীন ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের সহযোগী সংস্থা বায়ুদূত। কিন্তু নব্বইয়ের গোড়ায় তা বন্ধ হয়ে যায়। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ফের কোচবিহার বিমানবন্দর চালু করার চেষ্টা করেন। কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। ১৭৩ একর জমিতে রানওয়ে বাড়িয়ে প্রায় এক কিলোমিটার করা হয়, যাতে ১৯-২০ আসনের ছোট বিমান অনায়াসে ওঠানামা করতে পারে। কিন্তু বুদ্ধবাবুর আমলে আর চালু হয়নি কোচবিহার। ২০১১-য় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে সেই বছরের অগস্টে কোচবিহার বিমানবন্দর ফের চালু হয়। নর্থ-ইস্ট শাটল নামে উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি বেসরকারি উড়ান সংস্থা কলকাতা ও গুয়াহাটির সঙ্গে যুক্ত করে কোচবিহারকে। বেশ কিছু দিন চালানোর পরে যাত্রীর অভাবে সংস্থাটি পরিষেবা বন্ধ করে দেয়। তার পরে ডেকান-সহ বেশ কিছু সংস্থা কোচবিহার থেকে নিয়মিত উড়ান চালানোর আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। কেন্দ্রের উড়ান প্রকল্পে যখন দেশের ছোট ছোট বিমানবন্দর থেকে উড়ান চালানোর পরিকল্পনা হয়, তখনও কোচবিহারের নাম উঠেছিল। কিন্তু কোচবিহার থেকে নিয়মিত যাত্রী-বিমান চালাতে রাজি হয় না কেউই। অথচ ২০১১-য় নতুন করে চালু হওয়ার সময় যে-লাইসেন্স পাওয়া গিয়েছিল, প্রতি বছর নিয়মিত তার নবীকরণ করা হচ্ছিল।
কোচবিহারের স্থানীয় বিজেপি সাংসদ নিশীথ অধিকারী ২০১৯-এর অগস্ট নাগাদ একটি ছোট বিমান কোচিবিহারে নিয়ে আসেন এবং নিয়মিত যাত্রী-উড়ান চালানোর কথা ঘোষণা করেন। তা নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের সংঘাত শুরু হয়। বিমানবন্দর চালানোর জন্য যে-নিরাপত্তা ও দমকল বাহিনী থাকার কথা, কোচবিহার বিমানবন্দরকে তা দিচ্ছিল রাজ্য সরকারই। ওই ঘটনার পরে সেই নিরাপত্তা ও দমকল তুলে নেয় রাজ্য। লাইসেন্স বহাল রাখা হবে কি না, প্রশ্ন উঠে যায়। পরে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে সমস্যার সমাধান হয়। এখন সেখানে নিরাপত্তা ও দমকল পরিষেবা দিচ্ছে রাজ্যই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy