সন্তোষ গঙ্গোয়ার এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
বিমান বিভ্রাট, সেনা মহড়ার পরে এ বার চিটফান্ড বিতর্ক। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সংঘাত ক্রমেই বাড়ছে।
নবান্নের খবর, এ রাজ্যে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা চিটফান্ডগুলির বিরুদ্ধে তদন্ত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার প্রশ্নে রাজ্য সরকার কী করেছে, নতুন করে তা জানতে চেয়েছে কেন্দ্র। এবং এ নিয়ে আমলা স্তরে চিঠি চালাচালি না-করে খানিকটা নজিরবিহীন ভাবেই খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে সরাসরি জবাব চেয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ার। সেই চিঠি পেয়ে বেজায় চটেছেন মুখ্যমন্ত্রী। গঙ্গোয়ারের চিঠির কড়া জবাব দেওয়ার জন্য অর্থ দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলকে চাপে রাখতে চিট ফান্ড তদন্ত নিয়ে তৎপরতা বাড়িয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপুল জয়ের পরে সে সবে ধামাচাপা পড়ে যায়। বিজেপির সঙ্গে যোগসাজশের ফলেই সিবিআই চিট ফান্ড তদন্তে তেমন গা লাগাচ্ছে না, এমন অভিযোগও উঠেছিল। তদন্ত নিজের পথে চলছে বলে সিবিআই দাবি করলেও কার্যক্ষেত্রে তাদের বিশেষ তৎপরতা দেখা যাচ্ছিল না। এখন নোট নাকচ নিয়ে তৃণমূল নেত্রী পথে নামার পরে ফের তারা গা ঝাড়া দিয়েছে, এমনটাই অভিমত অনেক রাজনীতিকের। ইতিমধ্যেই নোটিস পাঠানো হয়েছে একাধিক তৃণমূল নেতাকে। আর তার পর গঙ্গোয়ারের এই চিঠি।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মমতাকে লিখেছেন, চিটফান্ড সংস্থাগুলির রমরমার পরিণামে বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রাজ্য সরকারের দাঁড়ানোর কথা। সেই কাজ কতটা হয়েছে? যাঁরা টাকা খুইয়েছেন, তাঁরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন কি না, তা-ও জানতে চেয়েছেন তিনি। চিটফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্তে রাজ্যের সহযোগিতা জরুরি বলেও উল্লেখ করে গঙ্গোয়ার লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশা তদন্তে সাহায্য করেছে। তাদের কাজে কেন্দ্র খুশি।
কেন্দ্রের এই চিঠি রাজ্য প্রশাসনের ক্ষোভের আগুনে ঘি ফেলেছে। অর্থ দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, চিটফান্ড মামলার তদন্ত করছে সিবিআই, সেবি, এসএফআইও, আয়কর দফতরের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থা। এ ব্যাপারে রাজ্যের তো কিছু করার নেই। তাঁরা আরও জানান, চিটফান্ড কেলেঙ্কারি সামনে আসার পর শুধু এ রাজ্যেই নিজস্ব আইন তৈরি হয়েছে। সিনিয়র পুলিশ অফিসারকে এই ধরনের অভিযোগ বা মামলাগুলি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। রাজ্য সরকারই সারদা কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গড়েছিল। তৈরি হয়েছিল বিচারপতি শ্যামল সেন কমিশন। প্রায় ২০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়াও হয়েছে। কিন্তু আদালতের নির্দেশে ক্ষতিপূরণ দেওয়া বন্ধ করতে হয়েছে।
গঙ্গোয়ারের চিঠি নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি মুখ্যমন্ত্রী। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর কাছে ওই চিঠির কোনও গুরুত্ব নেই। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, চিটফান্ডের রমরমার শুরু আশির দশকে সিপিএম জমানাতেই। তিনি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির উপরে নিয়ন্ত্রণ এনেছেন। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছেন। সে সব জেনেও এই চিঠি পাঠিয়ে কেন্দ্র নোংরা রাজনীতি করতে চাইছে।
২০১১ সালের অগস্ট মাসে চিটফান্ডের রমরমা নিয়ে রাজ্যের কাছে প্রথম বার বিশদ রিপোর্ট চেয়েছিল কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে মুখ্যসচিবকে সেই সব চিঠি লিখেছিলেন সংশ্লিষ্ট অফিসারেরা। বার ছয়েক তাগাদার পরেও সেই চিঠির জবাব পাঠায়নি রাজ্য। তা সত্ত্বেও সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জবাব চাননি মনমোহন সিংহ সরকারের কোনও মন্ত্রী।
গঙ্গোয়ারের চিঠি পেয়ে ক্ষুব্ধ নবান্ন পুরোপুরি উপেক্ষা নয় জুতসই জবাব দেওয়ার পথেই হাঁটছে। অন্য দিকে রাজ্যের জবাব পাওয়ার আগে এ নিয়ে কিছু বলতে নারাজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
• কেন্দ্রের প্রশ্ন
চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর কাজ কতটা হল?
ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন কি?
তদন্তে রাজ্যের তেমন সহযোগিতা মিলছে না কেন?
• রাজ্যের বক্তব্য
ক্ষতিপূরণ দিতে রাজ্যই বিশেষ কমিশন গড়েছিল। তৈরি করা হয় ৫০০ কোটির তহবিলও।
আদালতের নির্দেশেই বন্ধ রয়েছে ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
তদন্ত তো করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। রাজ্য কী করবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy