Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

বেঙ্গল কেমিক্যালস: বিলগ্নিকরণের পথে কেন্দ্রীয় সরকার

আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বেঙ্গল কেমিক্যালস অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস-সহ দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ওষুধ সংস্থার কৌশলগত বিলগ্নিকরণের বিষয়ে চার বছর আগেই নেওয়া সিদ্ধান্ত এ বার কার্যকর হবে।

শতাব্দী প্রাচীন বেঙ্গল কেমিক্যালস।—ফাইল চিত্র।

শতাব্দী প্রাচীন বেঙ্গল কেমিক্যালস।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৯ ০৪:১৭
Share: Save:

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠিত শতাব্দী প্রাচীন বেঙ্গল কেমিক্যালসের বিলগ্নিকরণের পথে আরও এক ধাপ এগোল নরেন্দ্র মোদী সরকার।

আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বেঙ্গল কেমিক্যালস অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস-সহ দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ওষুধ সংস্থার কৌশলগত বিলগ্নিকরণের বিষয়ে চার বছর আগেই নেওয়া সিদ্ধান্ত এ বার কার্যকর হবে। এ জন্য মন্ত্রীদের নিয়ে একটি কমিটি হবে। অন্য দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বন্ধ করে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে বিষয়েও যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে এই কমিটি। এই সংস্থাগুলির অতিরিক্ত জমি বিক্রি করে টাকা তোলা হবে।

গত অর্থ বছরেই বেঙ্গল কেমিক্যালস ২৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। যা সর্বকালীন রেকর্ড। বেঙ্গল কেমিক্যালস-এর কার্যনির্বাহী ম্যানেজিং ডিরেক্টর পি এম চন্দ্রাইয়ার দাবি ছিল, সব কিছু ঠিক চললে ২০২২-এর মধ্যে সংস্থাটি ঋণ মুক্ত হয়ে ২০২৩ সালে ‘মিনিরত্ন’-র স্বীকৃতি পাবে। তবু কেন বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত, তা নিয়ে সংস্থার কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও ঝুলে রয়েছে। হাইকোর্টের এক বিচারপতির বেঞ্চ বিলগ্নিকরণের বিরুদ্ধেই রায় দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে কেন্দ্র ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করে। সেই শুনানি এখনও হয়নি।

চন্দ্রাইয়া জানান, তিনি এখনও কেন্দ্রের কোনও নির্দেশ পাননি। সিটু সমর্থিত বেঙ্গল কেমিক্যালস শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মৃণাল রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘২০১৬ সালেই সংস্থার বিলগ্নিকরণ ও উদ্বৃত্ত জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। আমরা তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করি। সিঙ্গল বেঞ্চের রায় আমাদের পক্ষে যাওয়ার পরে কেন্দ্র তার বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করে। তার শুনানি এখনও হয়নি। ফলে মামলাটি এখনও বিচারাধীন।’’ আগামী সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে বলে এ দিন জানিয়েছেন কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল কৌশিক চন্দ।

১৯০১ সালে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দেশের প্রথম এই ওষুধ সংস্থাটি। দীর্ঘ লোকসানের জেরে ১৯৭৭ সালে এটির জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত কেন্দ্র। তবে ১৯৯২-এ বিআইএফআরে চলে যায় সংস্থাটি। ২০০৭-এর পরে আর কেন্দ্রের সাহায্য মেলেনি— এই দাবি করে মৃণালবাবু বলেন, ‘‘এর পর সংস্থা নিজেই ঘুরে দাঁড়িয়ে পর পর তিন বছর লাভের মুখে দেখেছে। কোনও জমিও বিক্রি করতে হয়নি। তা হলে বিলগ্নিকরণ বা জমি বিক্রির দরকার কী? আসলে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে বেসরকারি হাতে তুলে দিতে চাইছে কেন্দ্র। সব ওষুধ সংস্থাকেই পরিকল্পিত ভাবে রুগ্ণ করার চেষ্টা করছে।’’

বাজেটেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন স্পষ্ট করেছিলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বিলগ্নিকরণের বিষয়ে মোদী সরকার এ বার ঝড়ের গতিতে এগোতে চায়। প্রয়োজনে সরকারি মালিকানার ভাগ ৫১ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনতেও সরকারের আপত্তি নেই। তার পর থেকেই তৃণমূল সংসদের ভিতরে-বাইরে পশ্চিমবঙ্গের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বিলগ্নিকরণের প্রতিবাদে সরব হয়েছে। বিধানসভায় সর্বদলের সম্মতিতে মোদী সরকারের বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে প্রস্তাবও পাশ হয়েছে।

আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, ‘‘বেঙ্গল কেমিক্যালস ও হিন্দুস্তান অ্যান্টিবায়োটিকসের স্ট্র্যাটেজিক সেল হবে। ইন্ডিয়ান ড্রাগস ও রাজস্থান ড্রাগস বন্ধ করে দেওয়া হবে। সংস্থাগুলির অতিরিক্ত জমি বেচে টাকা তোলা হবে।’’ বেঙ্গল কেমিক্যালস বাদে বাকি তিনটি সংস্থার কর্মীদের বকেয়া ও ভিআরএস প্রকল্পের জন্য আজ মন্ত্রিসভা ৩৩০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy