রাঁধুনি এবং তাঁর সহযোগীদের খরচ বাবদ কেন্দ্র ৬০০ টাকা দিলে রাজ্যকে দিতে হয় ৯০০ টাকা। প্রতীকী ছবি।
টাকা দিচ্ছে বলে খবরদারি, না রাজ্যকে তাদের প্রদেয় অর্থ খরচে বাধ্য করানো— বিতর্ক আছেই। মূল উদ্দেশ্য যা-ই হোক, স্কুলপড়ুয়াদের খাবার বাবদ খরচে নজরদারির রাস্তায় হাঁটছে কেন্দ্র। তাই মিড-ডে মিল খাতে টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়াতেও বদল আনছে তারা। এমনিতেই কেন্দ্রীয় অনুদানযুক্ত বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ ও খরচের ধরনে পরিবর্তন আসছে। তার অঙ্গ হিসেবেই মিড-ডে মিল প্রকল্পের বরাদ্দ ব্যবস্থাপনায় বদল আনা হচ্ছে।
শিক্ষা দফতরের ব্যাখ্যা, এ বার মিড-ডে-মিলের জন্য একটি জ়িরো ব্যালান্স অ্যাকাউন্ট খোলা হবে। তাতে কেন্দ্র ৬০% এবং রাজ্য দেবে ৪০% টাকা দেবে। বছরের শেষে যদি দেখা যায়, কেন্দ্রের বরাদ্দের টাকা অবশিষ্ট আছে, তা হলে পরের কিস্তিতে সেই মোট বরাদ্দ থেকে অবশিষ্ট টাকা বাদ দিয়ে বাকি টাকা পাঠাবে কেন্দ্র।
প্রশাসনিক কর্তাদের বক্তব্য, প্রকল্পের খরচে শৃঙ্খলা আনতে চাইছে কেন্দ্র। বরাদ্দ অর্থ অব্যবহৃত থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা আটকাতেই এই ব্যবস্থা। তবে অনেকের ধারণা, রাজ্য তাদের অংশের বরাদ্দ ঠিকমতো খরচ করছে, নাকি কেন্দ্রীয় বরাদ্দেই পুরো প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে— সেটাই দেখতে চাইছে কেন্দ্র। শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, "টাকা দিচ্ছে, তাই এতে কর্তৃত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্র। রাজ্য সরকার যাতে তাদের অংশের টাকা ঠিকমতো দেয়, সেই চাপ সৃষ্টি করতেই এই পদক্ষেপ।"
প্রশাসনিক সূত্রের ব্যাখ্যা, মিড-ডে মিলের নতুন বন্দোবস্তে ব্যাঙ্কে একটি জ়িরো ব্যালান্স অ্যাকাউন্ট খোলা হবে। একটি ব্যাঙ্কই এই প্রকল্পে নোডাল ব্যাঙ্ক হিসেবে কাজ করবে। রাজ্য ছাড়াও জেলা, ব্লক ও স্কুল স্তরে এই তহবিল কার্যকর হবে। রাজ্য থেকে জেলা স্তর হয়ে আসা টাকা স্কুলের চাহিদামতো পাওয়া যাবে ব্লক থেকে। অব্যবহৃত অর্থ স্কুল, ব্লক, জেলা হয়ে ফিরে যাবে রাজ্য স্তরের মূল তহবিলে। সব জেলা প্রশাসনকে জ়িরো ব্যালান্স অ্যাকাউন্টের বিষয়টি জানিয়েছে রাজ্য। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের কাজ দ্রুত করার নির্দেশও দিয়েছে।
এক প্রশাসনিক কর্তা বলেন, “আগে রাজ্য স্তর থেকে জেলায় টাকা পৌঁছে যেত সরাসরি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রকল্পের জেলা-ভিত্তিক বরাদ্দের পুরোটা খরচ হয়নি। উদ্বৃত্ত টাকা জেলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে থেকে যায়। স্বাভাবিক নিয়মে ব্যাঙ্কের তহবিলে টাকা জমা থাকলে তাতে সুদ যোগ হয়। ফলে কালক্রমে তা বিপুল অঙ্কে পরিণত হয়। সম্ভবত এই প্রবণতা ঠেকাতেই নতুন পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। তা হলে প্রকল্পের টাকা প্রকল্পেই খরচ করতে হবে। উদ্বৃত্ত থাকলে তা ফিরে যাবে মূল তহবিলে।”
প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, এই প্রকল্পে চাল বাবদ বরাদ্দের ১০০% কেন্দ্রের। রান্নার অন্যান্য সামগ্রী খাতে বরাদ্দে কেন্দ্রের ভাগ ৬০%, রাজ্যের ৪০%। রাঁধুনি এবং তাঁর সহযোগীদের খরচ বাবদ কেন্দ্র ৬০০ টাকা দিলে রাজ্যকে দিতে হয় ৯০০ টাকা। রান্নার বাসনপত্রে কেন্দ্রের ভাগ ৬০%, রাজ্যের ৪০%। রান্নাঘর, ভাঁড়ারঘরের খরচের ক্ষেত্রে কেন্দ্র-রাজ্য অংশীদারি ৬০:৪০। খাবারের ঘর তৈরির পুরো খরচ রাজ্যের। পড়ুয়াদের জলের ব্যবস্থা, থালাবাটি বাবদ খরচেরও পুরোটা দিতে হয় রাজ্য সরকারকে। স্কুলে বাগান করে প্রকল্পের জন্য আনাজ ফলানোর ৬০% খরচ দেয় কেন্দ্র, রাজ্য দেয় ৪০%।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy