বছরে অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষকদের মাত্র দু’তিন বার বৈঠকই যথেষ্ট নয়। বরং সারা বছর ধরেই বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকদের সঙ্গে অভিভাবকদের বৈঠক করতে হবে। সেখানে অভিভাবকেরা শুধু সন্তানদের পড়াশোনা নয়, তাদের সার্বিক বিকাশ নিয়েও আলোচনা করবেন। প্রয়োজনে আলোচনায় বসতে হবে স্কুলের অধ্যক্ষ বা মনোবিদের সঙ্গেও। সম্প্রতি একটি বিজ্ঞপ্তিতে এমনটাই জানিয়েছে সিবিএসই বোর্ড। শিক্ষক এবং অভিভাবকদের মধ্যে সারা বছরের বিভিন্ন সময়ে বৈঠক করতে সিবিএসই-র স্কুলগুলিকে ‘পেরেন্টিং ক্যালেন্ডার’ তৈরি করার কথাও বলেছে বোর্ড।
ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, জাতীয় শিক্ষা-নীতি ২০২০-তে পড়ুয়াদের সার্বিক উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, পড়াশোনার পাশাপাশি পড়ুয়ার মানসিক বিকাশ, বৌদ্ধিক বিকাশ কতটা হচ্ছে, সে সাধারণের সঙ্গে কতটা মিশতে পারছে— সবটাই নজরে রাখতে হবে। বোর্ড জানাচ্ছে, এক জন পড়ুয়া বাড়িতে পড়াশোনায় কতটা মনোযোগী থাকে, লেখাপড়া ছাড়া কী কী বিষয়ে তার উৎসাহ আছে, সেই সংক্রান্ত তথ্য সব থেকে ভাল দিতে পারবেন তার মা-বাবা। আবার স্কুলে থাকার সময়ে সে অন্য বন্ধুদের সঙ্গে কতটা মিশতে পারছে, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা কেমন, কারও বিপদে সে সাহায্যের হাত বাড়ায় কিনা, সেই সব তথ্য ভাল জানবেন শিক্ষকেরা।
সিবিএসই বোর্ডের কর্তাদের কথায়, ‘‘এখন শিক্ষক ও অভিভাবকদের বৈঠকে শুধুমাত্র পড়ুয়ার পড়াশোনার মান, পরীক্ষার ফলাফল, কোন বিষয়ে কত ভাল বা খারাপ নম্বর পেল— তা নিয়েই আলোচনা হয়। কিন্তু এ বার থেকে পড়াশোনা বাদে পড়ুয়ার সার্বিক বিকাশ নিয়েও উভয় পক্ষকে আলোচনা করতে হবে। এর জন্য একাধিক বার শিক্ষকদের সঙ্গে অভিভাবকদের আলোচনায় বসতে হবে।’’
তবে, শুধুমাত্র স্কুলের ঠিক করা নির্দিষ্ট সময়েই শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করা নয়। কোনও অভিভাবক যদি ছেলে-মেয়ের মধ্যে দ্রুত আচরণগত কোনও পরিবর্তন বা অবসাদ লক্ষ করেন, সে ক্ষেত্রে তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে বসতে হবে। প্রয়োজনে স্কুলের মনোবিদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারবেন। এমনকি, স্কুলের অধ্যক্ষের মতামতও নিতে পারবেন। কী ভাবে স্কুলে ‘পেরেন্টিং ক্যালেন্ডার’ চালু করতে হবে, তার একটি ভিডিয়ো-ও প্রকাশ করেছে সিবিএসই বোর্ড।
‘পেরেন্টিং ক্যালেন্ডার’-কে স্বাগত জানিয়েছেন অধিকাংশ স্কুলের অধ্যক্ষেরা। সল্টলেকের ভবনস গঙ্গাবক্স কানোরিয়া বিদ্যামন্দিরের অধ্যক্ষ অরুণ দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘ভাল উদ্যোগ। তবে এই পেরেন্টিং ক্যালেন্ডার অনুযায়ী যদি এক জন শিক্ষক বা শিক্ষিকাকে মাসে এক বার করে বসতে হয়, তা হলে তিনি কখন বসবেন? স্কুলের পঠনপাঠনের পরে, না কি স্কুল চলাকালীন? এক জন শিক্ষকের পক্ষে কি সব অভিভাবককে ঘন ঘন সময় দেওয়া সম্ভব? এখন তো অভিভাবকেরাও খুব ব্যস্ত। অনেকেরই মা-বাবা দু’জনেই চাকরিরত। তাঁদের পক্ষেও ঘন ঘন শিক্ষকদের সঙ্গে বসার সময় হবে কি? তাই পেরেন্টিং ক্যালেন্ডার তৈরি করার সময়ে এই সব বিষয় মাথায় রাখতে হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)