Advertisement
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
RG Kar Hospital Incident

চক্রসন্ধানে সিবিআই! টানা তল্লাশি আর জেরা চলছে সকাল থেকে, সন্দীপ-সহ অনেকে আতশকাচের নীচে

দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, প্রাক্তন সুপার সঞ্জয় বশিষ্ঠ-সহ একাধিক ব্যক্তির বাড়িতে রবিবার সকাল থেকে যে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছিল, তা এখনও চলছে।

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৪ ২০:৫৮
Share: Save:

আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় গোটা রাজ্য। তার মধ্যেই মধ্যে হাসপাতালে ‘নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি’র অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাঁড়াশি অভিযান চালাল সিবিআই। দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, প্রাক্তন সুপার সঞ্জয় বশিষ্ঠ-সহ একাধিক ব্যক্তির বাড়িতে রবিবার সকাল থেকে যে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছিল, তা এখনও চলছে। অন্তত ১৫টি ঠিকানায় হানা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা। তার মধ্যে দু’-তিনটি জায়গা বাদে সব ক’টি জায়গাতেই রয়েছেন গোয়েন্দারা।

রবিবার সকালে একাধিক দলে ভাগ হয়ে নিজ়াম প্যালেস থেকে বেরোন সিবিআই কর্তারা। বেলেঘাটা থেকে টালা, কেষ্টপুর থেকে হাওড়া— বেশ কয়েক জনের বাড়ি ও অফিসে হানা দেন তাঁরা। সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে সন্দীপের বেলেঘাটার বাড়িতে পৌঁছয় সিবিআইয়ের দল। কিন্তু তখনই তারা ভিতরে ঢুকতে পারেনি। বাইরে ৭৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছিল সিবিআই আধিকারিকদের। এর পর সকাল ৮টা ০১ মিনিট নাগাদ বাড়ির দরজা খোলেন সন্দীপ। তার পরেই ভিতরে প্রবেশ করেন গোয়েন্দারা। রাত ৯টা নাগাদ সন্দীপের বাড়ি থেকে বেরোন তাঁরা।

সন্দীপ ছাড়াও আরজি করের প্রাক্তন সুপার সঞ্জয়ের এন্টালির বাড়িতে গিয়েছিল সিবিআইয়ের দল। পরে দুপুর নাগাদ সঞ্জয়কে নিয়ে ট্যাংরার একটি ফ্ল্যাটে যান তদন্তকারীরা। সিবিআই সূত্রে খবর, ফ্ল্যাটটি সঞ্জয়ের স্ত্রীর। রাত পর্যন্ত সেখানেই রয়েছেন গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকেরা। সিবিআইয়ের দল আরজি করের প্রশাসনিক ভবন ও হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিনের শিক্ষক দেবাশিস সোমের কেষ্টপুরের বাড়িতেও হানা দিয়েছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ প্রশাসনিক ভবন ছেড়ে সিবিআইয়ের দল যায় হাসপাতালের অ্যাকাডেমিক ভবনে। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ দেবাশিসের কেষ্টপুরের বাড়ি থেকেও বেরিয়ে যায় সিবিআইয়ের দল। তবে দেবাশিসকে সঙ্গে নিয়েই বেরিয়েছে তারা। সিবিআই সূত্রে খবর, দেবাশিসকে নিজ়াম প্যালেসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, দেবাশিস ‘সন্দীপ-ঘনিষ্ঠ’। সিবিআইয়ের দল হাওড়ার এক ওষুধ সরবরাহকারী বিপ্লব সিংহ, বেলগাছিয়ার এক ক্যাফে মালিক ও টালার এক ব্যবসায়ী চন্দন লৌহের বাড়িতেও হানা দেয়। এই তিন জায়গাতেও তল্লাশি অভিযান চলছে, রাত ৯টা পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী।

এর মধ্যে রবিবার রাতেই সাঁকরাইলের বাসুদেবপুরে বিপ্লবের বাড়ির কাছাকাছি শিবতলা এলাকার জনৈক সুমন হাজরার বাড়িতে হানা দেয় তদন্তকারী সংস্থার সাত সদস্যের একটি দল। স্থানীয় সূত্রে খবর, সুমনের একটি ওষুধের দোকান রয়েছে মৌড়ি মিলগেট এলাকায়। আরজি কর হাসপাতালে দীর্ঘ দিন ধরেই তাঁর যাতায়াত রয়েছে। তাঁর সূত্রেই আরজি করে ওষুধ সরবরাহের কাজ শুরু করেছিলেন বিপ্লব। সিবিআই আধিকারিকেরা যখন সুমনের বাড়িতে পৌঁছন, তখন তিনি বাড়িতে ছিলেন না। খবর পাওয়ার পর বাড়িতে ফেরেন তিনি।

আরজি কর-কাণ্ডে নাম জড়িয়ে যাওয়ার পরেই সন্দীপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। গত বছর আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি সন্দীপের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ তুলেছিলেন। তার মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা বর্জ্য দুর্নীতি, সরকারি টাকা নয়ছয়, ভেন্ডর নির্বাচনে স্বজনপোষণ, নির্মাণে আইন ভেঙে ঠিকাদার নিয়োগ ছাড়াও বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম। সেই সব অভিযোগ নিয়ে তখন কোনও উচ্চবাচ্য হয়নি। এখন কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তে নেমেছে সিবিআই। ঘটনাচক্রে, আখতারের অভিযোগপত্রে সন্দীপ, সঞ্জয়, দেবাশিস ও বিপ্লবের নাম ছিল। এর থেকেই অনেকের অনুমান, আখতার যে কথা চক্রের প্রকাশ্যে আনতে চেয়েছিলেন, সেই চক্র বা চক্রের মাথারা এখন কেন্দ্রীয় সংস্থার আতশকাচের নীচে।

আরজি কর হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৬ অগস্ট রাজ্য সরকার একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করেছিল। নেতৃত্বে ছিলেন আইপিএস অফিসার প্রণব কুমার। রাজ্য পুলিশের সিটের উপর আস্থা নেই বলে জানিয়ে আর্থিক দুর্নীতির মামলার তদন্তভার ইডিকে দেওয়ার আর্জি কলকাতা হাই কোর্টে জানান আখতার। সেই মামলায় শুক্রবার বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ জানান, একাধিক সংস্থা তদন্ত করলে বিষয়টি আরও জটিল ও সময়সাপেক্ষ হতে পারে। এর পরেই সিবিআইকে আর্থিক দুর্নীতি মামলার তদন্তভার দেয় উচ্চ আদালত। সেই নির্দেশ পাওয়ার পরে শনিবার এফআইআর দায়ের করে সিবিআই। তার পরেই ‘দুর্নীতির চক্রসন্ধানে’ নেমেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE