ফাইল চিত্র।
নারদ মামলায় চার্জশিটে সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নাম উল্লেখ করার জন্য রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছে অনুমতি চাইল সিবিআই। সিবিআইয়ের দাবি, নারদ মামলায় তদন্ত গুটিয়ে আনতে চাইছে তারা। ফলে, দ্রুত চূড়ান্ত চার্জশিট জমা দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। নারদে যাঁরা অভিযুক্ত, সকলের নামেই এ বার চার্জশিট দেওয়া হবে বলে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার দাবি।
যে সময়ে এই মামলা শুরু হয়, তখন ওই চার জন রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন। সিবিআইয়ের বক্তব্য দুর্নীতি দমন আইনের ১৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’দের বিরুদ্ধে কোনও আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে গেলে তাঁর নিয়োগকর্তার (অ্যাপয়েন্টিং অথরিটি) অনুমতি প্রয়োজন। এখানে মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে রাজ্যপাল আনুষ্ঠানিক নিয়োগকর্তা বলে তাঁর অনুমতি চাওয়া হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী, রাজ্যপালের যেহেতু মন্ত্রিসভার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করার কথা, সে কারণে তিনি এই আর্জি রাজ্য সরকারের সম্মতির জন্য পাঠাতে পারেন। কিন্তু সিবিআইয়ের দাবি, সুপ্রিম কোর্টে বেশ কিছু মামলার রায় অনুযায়ী, রাজ্যপাল চাইলে সরাসরি সেই অনুমতি দিতেও পারেন। রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘মন্ত্রীরা সকলেই বিধায়ক। তাই কোনও মন্ত্রীর নামে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে গেলে স্পিকারের অনুমতিও প্রয়োজন।’’
সুব্রত ও ফিরহাদ — এই দু’জন এখনও রাজ্যের মন্ত্রী। সারদা মামলায় কিছু দিন কারাবাসে থাকার পরে মদন মিত্রকে এখন সক্রিয় ভাবে আবার তৃণমূলের হয়ে পথে নামতে দেখা যাচ্ছে। শোভন তৃণমূল ছেড়ে এখন বিজেপিতে। একই সঙ্গে তৃণমূল বিধায়ক ইকবাল আহমেদের নাম চার্জশিটে রাখার জন্য বিমানবাবুর কাছেও অনুমতি চাওয়া হবে বলে সিবিআই জানিয়েছে।
সিবিআই সূত্রের খবর, অসুস্থ থাকায় ইকবালের কণ্ঠস্বর এখনও মেলানো সম্ভব হয়নি। বাকিদের ‘ভয়েস ম্যাচিং’–এর পরই চার্জশিটে নাম দেওয়ার আগে প্রয়োজনীয় অনুমতি চাওয়া হচ্ছে। নারদে অভিযুক্ত এই চার নেতার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে রাত পর্যন্ত কেউ ফোন ধরেননি। তাঁদের মোবাইলে পাঠানো বার্তারও জবাব দেননি।
নারদে অভিযুক্ত তিন সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার, সৌগত রায় ও প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আগেই লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লার কাছে অনুমতি চেয়েছিল সিবিআই। প্রায় এক বছর কেটে গিয়েছে। সিবিআই সূত্রের খবর, সেই অনুমতি আজও আসেনি। সিবিআই সেই অনুমতির জন্য অপেক্ষা করে নারদে অভিযুক্ত বাকিদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি তা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে শুনানি হয়।
হাইকোর্ট সিবিআইকে কার্যত ভর্ৎসনা করে দ্রুত পদক্ষেপ করার নির্দেশ
দেয়। তার পরেই শুক্রবার রাজ্যপালের কাছে চিঠি দিয়ে ওই অনুমতি
চাওয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও, এই মামলায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত আইপিএস অফিসার এসএমএস মির্জা-র নাম চার্জশিটে রাখার জন্য ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে বলে সিবিআই জানিয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি, রাজ্য ক্যাডারের অফিসার বলে রাজ্যের অনুমতি নিয়ে তবেই সিবিআইকে অনুমতি দিতে পারবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। রাজ্যের কাছ থেকে সেই অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে সিবিআই। উল্লেখ্য, নারদ মামলায় একমাত্র মির্জাই গ্রেফতার হয়েছিলেন। নারদে আর এক অভিযুক্ত অপরূপা পোদ্দারের নাম সরাসরি চার্জশিটে উল্লেখ করা হবে বলেও এ দিন সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে।
২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে কলকাতায় আসেন কেরলের বাসিন্দা, পেশায় সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েল। রাজ্যে ব্যবসা করবেন বলে তিনি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করে সুবিধা চাইতে শুরু করেন এবং তার পরিবর্তে মোটা টাকা উৎকোচ হিসেবে দিতে থাকেন। সেই টাকা লেনদেনের ছবি গোপন ক্যামেরায় তুলে রাখেন তিনি। পরে ২০১৬ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেই ছবি তিনি বৈদ্যুতিন মিডিয়ায় সম্প্রচার করেন। রাজনৈতিক মহলে তা নিয়ে ব্যাপক হইচই শুরু হয়ে যায়। আদালতে মামলা গড়ায় এবং আদালতের নির্দেশে সিবিআইয়ের হাতে তদন্তের ভার যায়।
সিবিআইয়ের বক্তব্য, তাদের কাছে ম্যাথু দাবি করেন, এই পুরো ‘স্টিং অপারেশন’-এর জন্য টাকা দিয়েছিলেন তৃণমূলেরই রাজ্যসভার সাংসদ কে ডি সিংহ। সম্প্রতি সেই কে ডি-কে দিল্লিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট গ্রেফতার করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy