মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের দফতরে হানা সিবিআই আধিকারিকদের। —ফাইল চিত্র।
পুরসভায় নিয়োগ ‘দুর্নীতি’র তদন্তে এ বার রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের দফতরে হানা দিল সিবিআই। বুধবার সকাল থেকে টানা তল্লাশির পর রাত ৯টা নাগাদ প্লাস্টিকের ব্যাগে গুচ্ছ গুচ্ছ নথিপত্র নিয়ে সেখান থেকে বেরোতে দেখা যায় তদন্তকারীদের। সল্টলেকে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অফিস ছাড়াও সিবিআই আধিকারিকেরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে মোট ১২টি পুরসভায় হানা দেন বুধবার। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত অয়ন শীলের বাড়ি এবং অফিসেও তল্লাশি চালান সিবিআই আধিকারিকেরা। এই তল্লাশি ঘিরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তবে কি স্কুলের পর এ বার বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগ নিয়েও আদালতের নির্দেশে তদন্তে নতুন মোড় আসতে চলেছে? তা-ই যদি হয়, তবে বাংলার রাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়বে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, গত ১৯ মার্চ অয়নের গ্রেফতারির আগে তাঁর সল্টলেকের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে রাজ্যের একাধিক পুরসভার বিভিন্ন পদে চাকরিপ্রার্থীদের ওএমআর শিট (উত্তরপত্র) পাওয়া গিয়েছিল। ওএমআর শিট খতিয়ে দেখে যে সব পুরসভার নিয়োগে অনিয়মের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল, সেই পুরসভাগুলিতেই তল্লাশি চালানো হয়।
বুধবার এই তল্লাশি শুরু হওয়ার পর পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। বুধবারই বিকেলে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে করমণ্ডল দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে আর্থিক সহায়তা দিতে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, রেলকাণ্ড ধামাচাপা দিতেই পুরসভার নিয়োগ তদন্তে সিবিআইকে নামিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
অয়নের বাড়ি-অফিসে হানা
বুধবার চুঁচুড়ার জগুদাস পাড়ায় অয়নের বাড়ি ও অফিসে হানা দেন সিবিআই আধিকারিকেরা। সকাল ১০টা নাগাদ ১০ জনের একটি দল চুঁচুড়ায় যায়। তারা ২টি দলে ভাগ হয়ে বাড়ি এবং অফিসে তল্লাশি শুরু করে। ৪ ঘণ্টা তল্লাশির পর দুপুরে অফিস থেকে কিছু নথি নিয়ে বেরিয়ে যান তদন্তকারীরা। অন্য দলটি প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা অয়নের বাড়িতে ছিল। তদন্তকারীদের একটি সূত্রে খবর, অয়নের বাবা ও মা-কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সূত্রেই তাঁর ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়নের নাম উঠে আসে। এর পরেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তল্লাশি অভিযান চালিয়ে অয়নকে গ্রেফতার করে। তাঁর সল্টলেকের অফিসে তল্লাশি অভিযানে মেলে রাজ্যের একাধিক পুরসভার বিভিন্ন পদে চাকরিপ্রার্থীদের ওএমআর শিট (উত্তরপত্র)। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘এবিএস ইনফোজোন’ নামে অয়নের সংস্থার মাধ্যমে একাধিক পুরসভায় নিয়োগ হয়েছে। ইডি সূত্রের দাবি, জেরায় অয়ন তদন্তকারীদের জানিয়েছেন যে, বিভিন্ন পুরসভায় চাকরি পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে তিনি মোট ২০০ কোটি টাকা তুলেছিলেন। অয়নই পুরসভায় সাফাইকর্মী, অ্যাম্বুল্যান্স চালক, পিওন, পাম্পচালক-সহ বিভিন্ন পদের জন্য দর রাখতেন। ৪ থেকে ৭ লক্ষ টাকায় সেই সব চাকরি ‘বিক্রি’ হত।
বিভিন্ন পুরসভায় হানা
বুধবার যে ১২টি পুরসভায় সিবিআই আধিকারিকেরা হানা দেন, তার মধ্যে রয়েছে— দমদম, দক্ষিণ দমদম, হালিশহর, বরাহনগর, টিটাগড়, পানিহাটি, কামারহাটি, কাঁচরাপাড়া, নব ব্যারাকপুর, টাকি পুরসভা। দক্ষিণ দমদম পুরসভায় প্রায় ৯ ঘণ্টা তল্লাশি চলেছে। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, পুরসভার ৩টি আলমারি ঘেঁটে বহু নথিপত্র বার করে খতিয়ে দেখা হয়। রাতে সেখান থেকে বেরোনোর সময় বেশ কিছু নথি সঙ্গে করে নিয়েও গিয়েছেন গোয়েন্দারা।
সিবিআই হানা নিয়ে ফিরহাদ
পুরসভা এবং পুর দফতরে সিবিআই হানা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, বিষয়টি সম্পর্কে না জেনে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, “পুরোটাই রাজনীতি চলছে।”
সিবিআই হানা নিয়ে মমতা
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, রেল দুর্ঘটনা থেকে নজর ঘোরাতেই বিভিন্ন পুরসভায় সিবিআইকে দিয়ে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে। মমতা বলেন, ‘‘কেন দুর্ঘটনা ঘটল? কেন এত জন মারা গেল? কোনও ক্রিমিনাল কেস হলে তো সিবিআই করবে। পুলওয়ামা দেখেননি, তখনকার রাজ্যপাল কী বলে দিয়েছেন। আজকেও ব্যাপারটা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আসল দুর্ঘটনার কোনও তদন্ত হল না। সব সাফ হয়ে গেল। কোনও প্রমাণ নেই। আমি চাই প্রকৃত সত্য বাইরে আসুক। রেলে দুর্ঘটনার তদন্ত না করিয়ে সকাল থেকে পাঠিয়ে দিয়েছে দিল্লি। কলকাতায় এসে ১৪টা থেকে ১৬টা পুরসভায় এসে ঢুকে গিয়েছে। নগরোন্নয়নে ঢুকে গিয়েছে। এ বার কি বাথরুমেও ঢুকবে নাকি? ওটুকুই বাকি রয়েছে। এ সব করে এত বড় দুর্ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া যায় না। মিথ্যে কথা বলে আগুনকে ছাই বলে চালানো যায় না।’’
কটাক্ষ সুকান্তের
সুকান্ত বলেন, ‘‘২০১১ সালের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গে সব চাকরিই বিক্রি হয়েছে। কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্ত করছে। সত্য প্রকাশ্যে আসবে। স্পষ্ট হয়ে যাবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল চোর। জেলায় জেলায় অয়ন শীল এবং কুন্তল ঘোষেরা রয়েছেন। এঁদের কাজ ছিল তোলা আর কাটমানি আদায়।’’ ফিরহাদ প্রসঙ্গেও বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশে তদন্ত হচ্ছে। ফিরহাদবাবু কি বলতে চাইছেন যে, মহামান্য আদালত এবং বিচারপতিরা রাজনীতি করছেন? আমার মনে হয়, এটা আদালত অবমাননার সমান! উনি ভয় পাচ্ছেন, যদি তদন্তে আস্তে আস্তে তাঁর নাম চলে আসে। অনুব্রতের মতো তখন তাঁকেও তো তিহাড় যাত্রা করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy