ফাইল চিত্র।
কত বার লটারিতে পুরস্কার জিতেছেন অনুব্রত মণ্ডল বা তাঁর মেয়ে সুকন্যা? এক বারের কথা অনেকেই জানেন লটারি সংস্থাটির বিজ্ঞাপনের সৌজন্যে, যদিও সেটা কখনওই সরাসরি মানতে চাননি অনুব্রত। এখন সিবিআইয়ের দাবি, শুধু অনুব্রত নন, তাঁর মেয়ে সুকন্যার দু’টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লটারির পুরস্কার বাবদ ৫১ লক্ষ টাকা ঢুকেছে। বছর তিনেক আগেও অনুব্রতের অ্যাকাউন্টে লটারির ১০ লক্ষ টাকা এসেছিল বলে সিবিআই সূত্রের খবর। এত বার লটারি জেতা নেহাত তাঁদের চওড়া কপালের জোরে, না কি এর পিছনে অন্য কোনও ‘অভিসন্ধি’ ছিল— জানতে ময়দানে নেমেছে সিবিআই।
এ বছর জানুয়ারিতে রাজ্যের এক জনপ্রিয় লটারি সংস্থার ওয়েবসাইটে ১ কোটি টাকার লটারি বিজেতা হিসেবে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নাম ও ছবি দেখা যায়। অনুব্রত নিজে লটারি জেতার কথা সরাসরি স্বীকার করেননি কখনও। ওই ঘটনার তদন্তে নেমে গত শুক্রবার বোলপুর চৌরাস্তা সংলগ্ন রাহুল লটারি কাউন্টারে হানা দেয় সিবিআই। দোকান মালিক শেখ আইনুল-সহ আরও দুই লটারি ব্যবসায়ীকে শান্তিনিকেতনের রতনকুঠিতে, সিবিআই অস্থায়ী ক্যাম্পে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। লটারি জয়ের রহস্য ফাঁসে আসানসোল সংশোধনাগারে গিয়েও তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতিকে জেরা করেছেন তদন্তকারীরা।
তদন্তে নেমে সিবিআই আরও তিনটি লটারির হদিস পেয়েছে বলে সূত্রের খবর। অনুব্রত ও সুকন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য খতিয়ে দেখতে গিয়ে ওই তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। সেই তিনটি লটারির টিকিটও বোলপুর ও লাগোয়া এলাকা থেকে কেনা হয়েছিল। সিবিআইয়ের দাবি, সেই লটারি দরুন সুকন্যার অ্যাকাউন্টে দু’দফায় ২৫ লক্ষ ও ২৬ লক্ষ টাকা মিলিয়ে মোট ৫১ লক্ষ টাকা এসেছে। অন্য দিকে, ২০১৯ সালে অনুব্রতের অ্যাকাউন্টেও লটারির মাধ্যমে ১০ লক্ষ টাকা ঢোকে বলে সিবিআই সূত্রের খবর। তবে ওই লটারি অনুব্রত সরাসরি কিনেছিলেন, না কি অন্য কারও জেতা টিকিট কিনে নিয়েছিলেন— তা স্পষ্ট নয়। বোলপুরের এক লটারি ব্যবসায়ী বলছেন, ‘‘লটারিতে ১ কোটি টাকার বিজেতা ছাড়া বাকি জয়ীদের নাম কিংবা ছবি কিছুই প্রকাশিত হয় না। ফলে, ১ কোটির চেয়ে কম অঙ্কের পুরস্কারের ক্ষেত্রে জানাও কঠিন হয়ে যায় যে, কে ওই পুরস্কার জিতেছেন।’’
বিরোধীদের দাবি, লটারির মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রায়গঞ্জে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘অনুব্রত আর ওঁর মেয়ে কোন জ্যোতিষীকে দেখাতেন, সেটা আমি জানতে চাই! এত টাকা লটারিতে পেয়েছেন তাঁরা! বাবার দৌলতে মেয়ের বদনাম হয়েছে। আসলে লটারির নামে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করে টাকা লুট করা হয়েছে। কালো টাকাকে লটারির মাধ্যমে সাদা টাকা করা হয়েছে।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী আবার লটারি জয়ের বিষয়টিকেই বিঁধে দাবি করেছেন, পুরোটার পিছনে চিটফান্ডের মতো প্রতারণা চক্র কাজ করে, যাতে গরিবের টাকায় অনেকে বড়লোক হচ্ছেন। কী ভাবে? তাঁর দাবি, ‘‘গরিব মানুষ যেমন চিটফান্ডে টাকা রেখে প্রতারিত হয়েছেন, তেমনই লটারির টিকিটও তাঁরা কেটেছেন। গরিব মানুষের টাকা আবার লুট হয়ে গেল? লুটের প্রক্রিয়ায় লটারিও যুক্ত হল?’’ তাঁর প্রশ্ন, তৃণমূলের নেতা, তাঁর মেয়ে, কাউন্সিলরের বাড়ির লোক— এই ভাবে কত জন পুরস্কার পেয়ে গেলেন! সব কি কাকতালীয়? সুজনের মতে, ‘‘এর পিছনে কালো টাকা সাদা করার ব্যাপার আছে, দেখা দরকার। তদন্ত অত্যন্ত জরুরি।’’
তৃণমূলের বীরভূম জেলা সহ-সভাপতি তথা দলের মুখপাত্র মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই মামলা আদালতের বিচারাধীন রয়েছে। তাই তদন্তকে তদন্তের মতো করতে দেওয়া হোক। এ নিয়ে অযথা জল ঘোলা করতে মাঠে নেমে পড়েছে বিরোধীরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy