আইনজীবীদের খরচ কী ভাবে যোগাচ্ছে কেষ্ট...প্রশ্ন। — ফাইল চিত্র।
অগস্ট থেকে চার মাসের বন্দিদশার মধ্যে তাঁর অগাধ সম্পত্তি তো বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, ফ্রিজ় করা হয়েছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও। তা হলে গরু পাচার কাণ্ডে অন্যতম মূল চক্রী হিসেবে অভিযুক্ত অনুব্রত মণ্ডলের হয়ে আইনি লড়াইয়ে নামা নামজাদা সব আইনজীবীর খরচের জোগান আসছে কোথা থেকে? প্রশ্নটা শুধু আর মোটেই বিরোধী শিবিরে আটকে নেই। এই প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছে সিবিআই, ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তদন্তকারীদের মধ্যেও। এবং সেই প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে অর্থাৎ অনুব্রত-মামলার সেই ‘গৌরী সেন’-কে খুঁজতে তদন্ত শুরু করেছে ইডি।
বোলপুরের নিচুপট্টির বাড়ি থেকে ১১ অগস্ট বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রতকে গ্রেফতারের সকালে সিবিআইয়ের মূল অভিযোগ ছিল, তিনি গরু পাচার কাণ্ডে মূল চক্রীদের অন্যতম। তদন্ত এগোতেই বেআইনি চালকলের মালিকানা থেকে আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন সম্পত্তি— তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ক্রমেই বেড়েছে। তবে হাজতবাসের চার মাসে আসানসোল ও কলকাতার বিভিন্ন আদালতে হাজিরার পর্বে অনুব্রত দাবি করে এসেছেন, ‘আমি নির্দোষ। আমার আয়ও তেমন নয়!’ বিরোধীদের দাবি, যাঁর ‘আয় তেমন নয়’, আদালতে তাঁর হয়ে মামলা লড়ছেন সেই সব প্রথিতযশা আইনজীবী, যাঁদের মধ্যে কারও কারও এক দিনের ‘অ্যাপিয়ারেন্স ফিজ়’ বা হাজিরা বাবদ পারিশ্রমিক ৩৫ লক্ষ টাকা! অনুব্রত ওরফে কেষ্টর হয়ে আইনি লড়াইয়ের এই বিপুল ‘ব্যয়ভার’ তা হলে কে বা কারা সামাল দিচ্ছেন? সেই সন্ধান অনিবার্য হয়ে পড়েছে ইডি-র কাছে।
কেষ্ট-কন্যা সুকন্যাও রয়েছেন সিবিআইয়ের আতশ কাচের তলায়। তাঁরও সব ব্যাঙ্ক আ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার পরেও কী ভাবে মামলার বিপুল খরচের জোগান আসছে, প্রশ্ন তুলছেন তদন্তকারীরা। দিল্লির এক কংগ্রেস নেতার দাবি, অনুব্রতের হয়ে সওয়াল করা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কপিল সিব্বলের এক দিনের হাজিরার পারিশ্রমিক প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। সেটা দিল্লিতে। আর দিল্লির বাইরে কোথাও সওয়াল করতে গেলে খরচ পড়ে ৩০ লক্ষেরও বেশি। তদন্তকারীদের প্রশ্ন, ‘‘ওই সব আইনজীবী তো নিখরচায় অনুব্রতের হয়ে লড়াই করছেন না। তা হলে খরচটা জোগাচ্ছে কে?’’ আইনজীবী মহল জানাচ্ছে, অনুব্রতের হয়ে সওয়াল করা অন্য এক কৌঁসুলিও দৈনিক হাজিরায় প্রায় দেড় লক্ষ টাকা নিচ্ছেন। বীরভূমের এক প্রাক্তন বাম সাংসদ বলছেন, ‘‘রাখে হরি মারে কে! কিন্তু এ ক্ষেত্রে হরি কে? জেলা তৃণমূল কি এই টাকার জোগান দিচ্ছে, না, অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ অন্য কেউ— তদন্ত করলে সাপ না বেরিয়ে আসে!’’
অনুব্রতকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে দিল্লি উড়ে যেতে চাইছে ইডি। তৃণমূলের এক অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ নেতা বলছেন, ‘‘কেষ্টদাকে দিল্লি নিয়ে গেলে, ইডি-সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা লড়েছেন, এমন আইনজীবীদের নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু সেইটাকার জোগান দেওয়ার সাহস এই অবস্থায় কে দেখাবে, সেটাই প্রশ্ন।’’ বীরভূম তৃণমূলের অন্দরে কানাঘুষো, অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদেরঅনেকেই মামলার খরচ চালাতে আগ্রহী। কিন্তু কে বলতে পারে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আড়াল থেকে সেই সব গৌরী সেনের উপরেও নজরদারি চালাবে না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy