কোচবিহারে বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে ৫৪৯ কিলোমিটার। প্রতীকী ছবি।
কথায় বলে, দুষ্ট গরুর থেকে শূন্য গোয়াল ভাল। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কোচবিহারে এই সব এলাকায় অবশ্য গরুকে কেউ দুষ্টু বলেন না। তাঁদের কথায়, ‘‘গবাদিপশু কি দুষ্টু হয়? তাদের যারা ধানি জমির উপর দিয়ে দৌড় করিয়ে নিয়ে সীমান্ত পার করিয়ে দেয়, তারাই দুষ্টু।’’ সেই ‘পারাপার’ এখন এত কমে গিয়েছে যে অনেক গোয়াল শূন্য হয়ে পড়ে আছে।
কী হত এই গোয়ালগুলিতে? গোয়ালের মালিকেরাই জানাচ্ছেন, এগুলি তাঁরা ভাড়া দিতেন। গরু পিছু পাওনা ছিল হাজার টাকা। রাতে সময় ও পরিস্থিতি বুঝে সেখান থেকে গরু নিয়ে পাচার করা হত বলে অভিযোগ। কোচবিহারের গীতালদহ সীমান্তের তেমনই এক গোয়ালের মালিক বললেন, ‘‘বছর দুয়েক আগেও গরু রেখে মাস গেলে ৩০-৩৫ হাজার টাকা আয় হত। কিন্তু গরু এখন তেমন আসছে না। তাই ভাড়া আদায় নেই বললেই চলে।’’
সে সব গরু গোয়াল শূন্য করে কোথা দিয়ে ও-পারে যেত?
কোচবিহারে বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে ৫৪৯ কিলোমিটার। তার অনেকটা অংশে কাঁটাতার নেই। সেই সুবাদে দিনহাটার একাধিক জায়গা, সিতাই, শীতলখুচির কিছুটা অংশ, মেখলিগঞ্জ, তুফানগঞ্জের কিছু এলাকা ছিল গরু পাচারের ‘রুট’। সুটুঙ্গা, তিস্তা, ধরলা নদীপথেও গরু পাচার হয় বলে অভিযোগ। শীতের সময়ে কুয়াশার আড়ালে পাচার বেশি হয়। ওই সময়ে সপ্তাহে অন্তত পাঁচ-ছ’কোটি টাকার লেনদেন হয় বলে দাবি পুলিশ সূত্রের।
পাচারের এই কারবারের ‘সাপ্লাই-চেন’-এর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে একাধিক হাতে। সীমান্ত লাগোয়া জেলার প্রত্যেক ব্লকে এই কারবারের এক জন করে ‘মাথা’ রয়েছে বলে শোনা যায়। তাদের উপরে জেলা স্তরে রয়েছে এক জন ‘চাঁই’। যার হাতে গোটা জেলায় গরু পাচারের কারবারের যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তবে সেই লোকটি কে, তা এখনও তারা জানে না বলে দাবি পুলিশ এবং বিএসএফের। এই দুই সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের এনামুল হক, আনারুল শেখ এবং গোলাম মুস্তাফাদের হাত ছিল কোচবিহার পর্যন্ত ‘বিস্তৃত’। বিহারের মহম্মদ সরফরাজের ‘দাপট’ ছিল উত্তরবঙ্গের বিহার লাগোয়া এলাকায়। তুফানগঞ্জে গরু পাচারের অভিযোগ ছিল বাপি রহমান, মমিজুল হক ও আয়নাল হকের বিরুদ্ধে। এরা বেশিরভাগই ধরা পড়েছে।
কোচবিহার দিয়ে কি এখনও গরু পাচার চলছে?
সরাসরি জবাব না দিয়ে জেলার পুলিশ সুপার সুমিত কুমার বলেন, ‘‘আমাদের কড়া নজরদারি রয়েছে। কোথাও কোনও অভিযোগ পেলে, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মাথাভাঙা) অমিত বর্মা বলেন, ‘‘পাচার রুখতে পুলিশ নিয়মিত নাকা-তল্লাশি ও অভিযান করছে। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।’’ তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসএফের এক কর্তার দাবি, ‘‘জেলার বেশ কিছুটা অংশে কাঁটাতার নেই। সে সব জায়গায় পাচারকারীরা কিছুটা হলেও সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু ধারাবাহিক অভিযানের ফলে, এখন পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।’’
তাতে অবশ্য রাজনীতির অভাব নেই। রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহ অভিযোগ করেছেন, ‘‘বিএসএফ সীমান্ত পাহারা দেয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে বিএসএফ। তাদের বিরুদ্ধে কোথায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? অথচ, জেলা থেকে কেন্দ্রীয় সরকারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী (নিশীথ প্রামাণিক) রয়েছেন!’’ পাশাপাশি তাঁর নালিশ, এর পরে হয়তো গরু পাচারের দায়ে তাঁকেও জেলে ভরে দেওয়া হতে পারে। এই নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিজেপির তরফে বলা হয়েছে, উনি তো নিজেই বলছেন ‘ঠাকুর ঘরে কে’! তৃণমূলের যুব নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য পাচারের ব্যাপারে নিশীথ প্রামাণিকের দিকে আঙুল তুলেছেন। নিশীথ ফোন ধরেননি। জবাব মেলেনি মেসেজের। বিজেপির কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক বিরাজ বসু বলেন, ‘‘গরু পাচারের পিছনে কারা রয়েছে, তা মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। সে দলেরই নেতাকে (অনুব্রত) ধরেছে সিবিআই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy