নিথর। মাদারিহাটে দুর্ঘটনার পরে রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।
বৌভাত থেকে ফিরছিলেন ওঁরা। নবদম্পতি আর আত্মীয়স্বজনরা সকলে ছিলেন। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে গাড়ির সঙ্গে একটি ট্রাকের একেবারে মুখোমুখি ধাক্কা। শুক্রবার ভোরে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় ডুয়ার্সের মাদারিহাটে নবদম্পতি-সহ ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও ৯ জন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জলপাইগুড়ির বানারহাট থানা এলাকার মোঘলকাটা চা বাগানের বাসিন্দা আকাশ মঙ্গরের (২২) সঙ্গে মঙ্গলবার বিয়ে হয় আলিপুরদুয়ারের কালচিনি ব্লকের চুয়াপাড়ার মানি কিসানের (১৯)। মোঘলকাটা কুলি লাইনে বৃহস্পতিবার রাতে বৌভাতের আয়োজন করেছিলেন পিতৃমাতৃহীন আকাশ। তিনি ওই বাগানেরই চা শ্রমিক। মানির মা ফুলমণি কিসানও (৩৫) চা শ্রমিক। বৌভাতের অনুষ্ঠানে নাচগান-খাওয়াদাওয়ার পরে স্থানীয় প্রথা অনুযায়ী নবদম্পতির আবার চুয়াপাড়া যাওয়ার কথা ছিল। সেই মতো রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ মোঘলকাটা থেকে একটি ছোট গাড়িতে উঠে ২২ জন চুয়াপাড়া রওনা হন।
জাতীয় সড়কে উঠে গাড়ির গতি বাড়ে। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন তার মালিক বিনোদ শাহ (৩০)। ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই মাদারিহাট থানার কাছে উল্টো দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা লাগে গাড়িটির। ট্রাকটি অসম থেকে উত্তরপ্রদেশ যাচ্ছিল। তার চালক ও খালাসি পলাতক। ঘটনাস্থলেই মারা যান নবদম্পতি, নববধূর মা ও চালক-সহ ১১ জন। বাকি যাত্রীদের প্রথমে বীরপাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সকলকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। পথেই মারা যান আরও দু’জন। আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডেভিড ইমন লেপচা বলেন, ‘‘মৃত ১৩ জনের মধ্যে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯ জনকে শনাক্ত করা গিয়েছে।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৌভাতে আলিপুরদুয়ার ১ নম্বর ব্লকের মথুরা চা বাগান থেকেও নিমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন কয়েক জন। তাঁদের চার জনও এ দিন মারা গিয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোহন শর্মা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে দেবেন বলে সরকারি ভাবে আমাকে জানানো হয়েছে।’’ আহতদের চিকিৎসার সমস্ত খরচ সরকার বহন করবে বলেও তিনি জানান। মোহনবাবু সকালেই দুর্ঘটনাস্থলে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে যান কালচিনির বিধায়ক উইলসন চম্প্রমারি, এলাকার প্রাক্তন আরএসপি বিধায়ক মনোহর তিরকে-সহ বিভিন্ন দলের নেতারা।
দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে পুলিশ এখনও নিঃসন্দেহ নয়। প্রাথমিক তদন্তে তাদের অনুমান, গাড়িটিতে যত লোক ধরে, তার চেয়ে বেশি লোক উঠেছিলেন। দ্রুত গতিতে যেতে যেতে সামনে ট্রাকটিকে দেখে সম্ভবত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি বিনোদ। উইলসন চম্প্রমারি বলেন, ‘‘রাতের অন্ধকারে ট্রাকের হেডলাইটের আলোয় চালকের চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল বলে মনে হচ্ছে।’’
কয়েক দিন ধরে উৎসবের মেজাজ ছিল চুয়াপাড়া এবং মোঘলকাটা চা বাগানে। দুই বাগানই এখন স্তব্ধ শোকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy