ফাইল চিত্র।
ঘোষণার আগে পুরভোটে দলের প্রার্থী তালিকা দেখবেন বলে একটা গোটা দিন অপেক্ষা করে বসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেও শুক্রবার প্রথম যে তালিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল, তা তৃণমূলনেত্রীর কাছে পাঠানোই হয়নি। ঠিক কী কারণে স্বয়ং তৃণমূলনেত্রীকে কার্যত অন্ধকারে রেখে এমন কাজ করা হল, তা নিয়ে আলোড়ন তৈরি হয়েছে শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্বে।
এ ব্যাপারে দলীয় নেতৃত্বের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে দলের পরামর্শদাতা সংস্থা আইপ্যাকের কর্তাদেরও। যেহেতু গত বছর দুই ধরে দলের প্রচারের মূল মাধ্যমগুলি আইপ্যাকের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সে কারণেই তাতে প্রকাশিত তালিকার দায়িত্ব আইপ্যাকের
বলেই মনে করছেন দলীয় নেতৃত্বের একাংশ। যদিও আইপ্যাক সেই ‘দায়’ নিতে নারাজ।
পুরভোটের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা তৈরির দায়িত্ব প্রধানত তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী ও মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপরে ছেড়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। বিভিন্ন জেলা থেকে তাঁদের কাছে যে তালিকা জমা পড়ে, তার ভিত্তিতে তাঁরা কাজ করছিলেন। পাশাপাশি দলের পরামর্শদাতা সংস্থা আইপ্যাকের কাছ থেকেও তালিকা আসে। মমতার নির্দেশে স্থির হয়, উভয় তালিকার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি হবে। তবে প্রকাশের আগে তৃণমূলনেত্রী নিজে তা দেখবেন।
সেই মতো আইপ্যাকের সঙ্গে কথা বলে বক্সী ও পার্থ যে তালিকা তৈরি করেন, সেটি কম্পিউটারে তুলে মমতার কাছে পাঠানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় আইপ্যাক-কর্তাদেরই। কথা ছিল ২ ফেব্রুয়ারি রাতের মধ্যে তালিকা মমতার কাছে পৌঁছে যাবে। কিন্তু ৩ তারিখ দুপুরে খোঁজ করে তৃণমূলের সংশ্লিষ্ট নেতারা জানতে পারেন, তালিকা কালীঘাটে পৌঁছয়নি। তার পর শুরু হয় বার বার তাগাদা দেওয়া। তাতেও শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত মমতা তালিকা হাতে পাননি।
সূত্রের খবর, এই অবস্থায় তৃণমূলনেত্রী ক্ষোভের সঙ্গে বক্সী, পার্থদের সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তালিকা প্রকাশ করে দিতে বলেন। সেই মতো শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক হয়। আর তখনই দেখা যায়, তৃণমূলের অফিশিয়াল মাধ্যমে একটি তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, যার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় তৈরি তালিকার বেশ কিছু ফারাক রয়েছে। এবং প্রকাশিত তালিকায় নেতাদের কোনও স্বাক্ষর নেই।
পরিস্থিতি এ বার আরও গড়ায়। বক্সী ছাড়াও দলের তিন নেতা ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে মমতার সঙ্গে কথা বলেন পার্থ।
তার পরেই ফোনে কথা বলেন প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গেও। পার্থ এবং বক্সী উভয়েই পিকে’র কাছে জানতে চান, তৃণমূলের ‘অফিশিয়াল পেজে’ এরকম একটি তালিকা কেন বেরলো? জানা গিয়েছে, উভয় তরফে কিছুটা বাদানুবাদও হয়। তখনই বলা হয়, তৃণমূলের ‘অফিশিয়াল পেজে’র দায়িত্ব আইপ্যাকের নয়। এক সময় আইপ্যাক পরামর্শদাতার কাজ থেকে ‘সরে আসতে পারে’ বলেও কথা ওঠে। সূত্রের খবর, বক্সী- পার্থ তখন পাল্টা বলেন, ‘এ সব কথা তাঁদের শুনিয়ে লাভ নেই। সে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন মমতা।’ সেই সঙ্গে আইপ্যাক- কর্তাকে এও জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘তৃণমূলে এ কাজ অকল্পনীয়। আরও অনেকেই আছেন। তবে মমতাই এই দলের নেত্রী। তাঁকে না জানিয়ে এই রকম গুরুত্বপূর্ণ কাজ আগে কখনও কেউ করেনি।’ এর পরেই সংবাদমাধ্যমে পার্থবাবু জানিয়ে দেন, ‘সঠিক’ তালিকা জেলাগুলিতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
যদিও শনিবার রাত পর্যন্ত তৃণমূলের ‘অফিশিয়াল পেজে’ প্রকাশিত আগের ‘বিতর্কিত’ তালিকাটি বহাল আছে। সেটি সরিয়ে নেওয়া হয়নি। দলের ‘অফিশিয়াল পেজে’ প্রথম প্রকাশিত তালিকা নিয়ে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ দেথা যায়। তারপর দুই নেতার স্বাক্ষরিত তালিকা জানতে পারার পর আবারও কিছু জেলায় বিক্ষোভ শুরু হয়ে বিষয়টি অন্য মাত্রায় পৌঁছয়।
দলের অনেকের প্রশ্ন, ‘অফিশিয়াল পেজে’ ওই তালিকাটি রেখে দেওযার অর্থ কী? এতে কি বিভ্রান্তি জিইয়ে রাখা হচ্ছে না? এর ফলে রাজনৈতিক লাভ কার?
অন্য দিকে, ভারপ্রাপ্ত দুই নেতা বক্সী ও পার্থর স্বাক্ষরিত তালিকা নিয়েও শনিবার উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় বিক্ষোভ, অবরোধ হয়েছে। একটি জায়গায় পুলিশকে লাঠি চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের হঠাতে হয়েছে। পছন্দের নেতা প্রার্থী হতে না পারায় উত্তর ২৪ পরগনার কামারহাটিতে একটি বাস, অটোরুট এবং স্থানীয় জুটমিলও বন্ধ করে দিয়েছে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন।
এ দিন অবশ্য এ সব নিয়ে তৃণমূলের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বক্সী ও পার্থের স্বাক্ষরিত তালিকায়ও আরও কয়েকটি রদবদলের সম্ভাবনা রয়েছে বলে দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy