প্রতীকী ছবি।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের চূড়ান্ত সিমেস্টার ও চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা ‘অনলাইনে’ হবে। প্রশ্নপত্র পেয়ে বাড়িতে বসে পেন দিয়ে খাতায় উত্তর লিখে সেই উত্তরপত্র স্ক্যান করে জমা দেওয়ার জন্য মিলবে ২৪ ঘণ্টা সময়। কলেজ প্রশ্ন পাবে অনলাইনে। কলেজই পরীক্ষার্থীদের মধ্যে তা বণ্টন করবে। ছাত্রছাত্রীরা অনলাইনে অর্থাৎ ই-মেল, হোয়াটসঅ্যাপে স্ক্যান-করা উত্তরপত্র জমা দিতে পারবেন। যে-সব ছাত্রছাত্রী তা একেবারেই পারবেন না, তাঁরা কলেজে গিয়ে পরীক্ষার খাতা জমা দেবেন। মূল্যায়ন করবেন সংশ্লিষ্ট পড়ুয়ার কলেজের শিক্ষকেরাই। ফল বেরোবে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে।
বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ বুধবার এই মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরা এটাকে অনলাইন পরীক্ষা না-বলে ‘ডিজিটাল’ পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণ বলতে চান। এই পরীক্ষা-পদ্ধতি নিয়ে অবশ্য কিছু প্রশ্ন উঠেছে অধ্যক্ষদের মধ্যে।
উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরীক্ষার্থীরা অনার্স পরীক্ষা দিতে চার ঘণ্টা সময় পায়। জেনারেলে পায় তিন ঘণ্টা। এ ক্ষেত্রে উত্তর লেখা ও খাতা জমা দেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়ার কারণ, ডিজিটাল পরীক্ষায় অনেক প্রাযুক্তিক সমস্যার আশঙ্কা থাকে। কবে কোন পরীক্ষা হবে, তা বিস্তারিত ভাবে পরীক্ষার্থীদের জানানো হবে আগেই।’’ তিনি জানান, স্নাতকোত্তরে প্রতিটি বিভাগ প্রশ্নপত্র তৈরি, খাতা পরীক্ষা, ফল প্রকাশ করবে নিজেদের মতো করে। কিছু কলেজে স্নাতকোত্তর পাঠ চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সেখানে প্রশ্ন পাঠাবে ই-মেলে। সে-ক্ষেত্রে কলেজের শিক্ষকেরা মূল্যায়ন করবেন, নাকি সেই দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নেবেন— তা ঠিক করবে বিভাগীয় কমিটি।
১ থেকে ৮ অক্টোবরের মধ্যে হবে স্নাতক স্তরের পরীক্ষা। উপাচার্যের অনুরোধ, স্নাতকোত্তরের পরীক্ষাও যেন অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই নেওয়া হয় এবং মূল্যায়ন রিপোর্ট জমা পড়ে ১৮ তারিখের মধ্যে। মাঝখানে রয়েছে দুর্গাপুজো। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ফল প্রকাশ নিয়ে অনেক অধ্যক্ষ তাই সংশয়ে রয়েছেন। করোনার জন্য সব পরীক্ষার্থীই এখন বাড়িতে। তাঁদের সকলের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরীক্ষা নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তরপত্রের মূল্যায়ন নিয়েও সংশয় আছে তাঁদের। অনেকে বলছেন, এটা তো বাড়িতে বসে পরীক্ষা! ফলে গৃহশিক্ষক বা অন্য কেউ পরীক্ষার্থীদের সাহায্য করছেন কি না, সেই বিষয়েও সন্দেহের অবকাশ থেকেই যাচ্ছে।
‘‘পরীক্ষার্থী কাদের সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে, তা তো জানা যাবে না। এটাকে কি আদৌ পরীক্ষা নেওয়া বলা যাবে,’’ প্রশ্ন তুলেছেন মণীন্দ্র চন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মন্টুরাম সামন্ত। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিদ্যানগর কলেজের অধ্যক্ষ সূর্য আগরওয়াল জানান, করোনার মধ্যে অনলাইনে ক্লাস নিতে গিয়ে তাঁরা দেখেছেন, ৫০% পড়ুয়ার নিজস্ব স্মার্টফোন নেই, ইন্টারনেট পরিষেবাও নেই কারও কারও। এ বার এই ভাবে পরীক্ষা নিতে গেলে সেই সব ছাত্রছাত্রীর কাছে পৌঁছনো এবং সময়মতো পরীক্ষা নিয়ে সেই খাতা কলেজে ফিরিয়ে আনা— কতটা সুচারু ভাবে পুরো কাজটা করা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সুরেন্দ্রনাথ কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল কর জানান, তাঁদের অন্তত ২০০ জন পরীক্ষার্থী অনেক দূরে থাকেন। মালদহ, মুর্শিদাবাদের মতো জেলায় তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে প্রশ্নপত্র ঠিকঠাক পেয়েছেন কি না এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর দিয়ে খাতা ফেরত দিতে পারলেন কি না— এগুলো নিশ্চিত করতে অসুবিধা হবে। ভর্তির সময় ছাত্রছাত্রীরা যে-ফোন নম্বর দেন, অনেক সময় দেখা যায়, পরে তাঁরা সেই নম্বর বদলেছেন। তাই যোগাযোগ কতটা করা যাবে, সেই বিষয়েও সংশয় আছে তাঁর।
সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, ইউজিসি-র ৬ জুলাইয়ের নির্দেশিকা অনুযায়ী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই যেন পরীক্ষা প্রক্রিয়া শেষ করে ফল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ফল প্রকাশ করা হবে ৩১ অক্টোবর। বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, ৩১ অক্টোবর ফল প্রকাশের ব্যাপারে ইউজিসি কোনও সম্মতি বা অসম্মতিসূচক চিঠি এখনও পাঠায়নি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি জুটা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে এটা জানিয়ে বলেছে, অক্টোবরে পরীক্ষা নিলে ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা হবে, দেরি হয়ে যাবে। কবে পরীক্ষা হবে, সেই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরেই ছেড়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছে জুটা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy