গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা বুধবারের ‘বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও’ কর্মসূচিতে সোমবার দুপুরে স্থগিতাদেশ দিল হাই কোর্ট। বিকেলে বিধানসভায় তৃণমূল বিধায়ক তথা দলের অন্যতম মুখপাত্র তাপস রায় সাংবাদিক বৈঠক করে জানালেন, ঘেরাও কর্মসূচি না থাকলেও বুধবার আট ঘণ্টার জন্যই পথে নামবেন দলের নেতা-কর্মীরা। সোমবার আদালতের রায় জানার পরেই দলের পক্ষে এই অবস্থান ঘোষণা করে তাপস জানিয়েছেন, ওই দিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ আদায়ের দাবিতে তৃণমূল বিক্ষোভ দেখাবে।
গত ২১ জুলাই ধর্মতলার সভা থেকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ঘোষণা করেছিলেন, বুথ থেকে রাজ্য স্তরের বিজেপি নেতাদের বাড়ি আট ঘণ্টা ঘেরাও করার কথা। যদিও সেই ঘোষণার পরমুহূর্তেই তা সংশোধন করে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, কর্মসূচি হবে ব্লক স্তরে। ঘেরাও শব্দটি ব্যবহার করা হবে না বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। যদিও তা নিয়ে আদালতে যায় বিজেপি। সোমবার সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চে শুনানি হয়। আদালত ওই কর্মসূচিতে স্থগিতাদেশ দেয়। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘কেউ যদি বলেন, কাল হাই কোর্ট ঘেরাও করা হবে, তবে কি সরকার বা পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করবে না? কেউ যদি কোথাও বোমা রাখা হবে বলে, তবে কি সরকার বা পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করবে না?’’
মমতা এবং অভিষেকের এই মন্তব্য নিয়ে গত ২৪ জুলাই কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করে বিজেপি। তারও আগে ২২ জুলাই রাতে কলকাতার হেয়ার স্ট্রিট থানায় তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের বিরুদ্ধে ইমেলে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন রাজ্যের বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সোমবার সেই মামলার শুনানি ছিল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। শুনানিতে প্রথমেই অভিষেকের ঘোষিত ঘেরাও কর্মসূচি নিয়ে রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ করেছে, তা জানতে চান বিচারপতি। রাজ্যের আইনজীবীকে তিনি প্রশ্ন করেন, এই ঘেরাও নিয়ে রাজ্য সরকার বা পুলিশ প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করেছে কি না।
কিন্তু প্রধান বিচারপতির সে প্রশ্নের কোনও সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি রাজ্যের আইনজীবী। এর পরেই প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘‘অনেকে মিলে একজোট হয়ে বাড়ি ঘেরাওয়ের কথা বলছে, প্রকাশ্যে সেই ঘোষণা করা হচ্ছে। অথচ সরকার বা পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করবে না? তাদের কোনও ভূমিকা নেই? দু’দিন পরে যদি কেউ বলে হাই কোর্ট ঘেরাও হবে, তা হলেও কি কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না পুলিশ বা প্রশাসন?’’ এমনকি, এ বিষয়ে ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের প্রসঙ্গও টেনে এনেও প্রধান বিচারপতি বলেন, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের শহীদ স্মরণ সমাবেশ জন্যও স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হয়েছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘সে দিন আদালতের কাজ মাঝপথে বন্ধ করতে হয়েছিল, ওই সমাবশের জন্য বহু আইনজীবী, বিচারপতি আদালতে পৌঁছতে পারেনি। যাঁরা আদালতে এসেছিলেন, তাঁদের বাড়ি ফিরতে অসুবিধা হয়েছিল।’’
অভিষেকের মন্তব্য হাই কোর্টের প্রতিক্রিয়া
ধর্মতলায় তৃণমূলের শহিদ স্মরণের সমাবেশ মঞ্চে ১০০ দিনের টাকা আটকে রাখার প্রসঙ্গ তুলে কেন্দ্রকে দোষারোপ করেছিলেন অভিষেক। সেই সূত্রেই আগামী ২ অক্টোবর দিল্লিতে ধর্নার পাশাপাশি কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির নেতাদের বাড়ি ঘেরাওয়ের ডাক দেন তিনি। তৃণমূল সমর্থকদের উদ্দেশে অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘আগামী ৫ অগস্ট সমস্ত বুথ, অঞ্চল, ব্লক, জেলা থেকে রাজ্যস্তরের বিজেপি নেতাদের বাড়ি শান্তিপূর্ণ ভাবে ঘেরাও করতে হবে। তবে বাড়িতে কোনও বৃদ্ধ মানুষ থাকলে তাঁকে ছেড়ে দেবেন। বিজেপি নেতা বাড়ি থেকে বেরোবেনও না, ঢুকবেনও না।’’ তবে একই সঙ্গে দলের সদস্যদের সতর্ক করে অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘কিন্তু কারও গায়ে হাত দেবেন না। প্রথমে এখানে গণঘেরাও কর্মসূচি হবে। তার পর দিল্লি ঘেরাও হবে।’’
পরে অবশ্য ওই মঞ্চেই অভিষেকের কর্মসূচিকে সমর্থন করেও কিছুটা পরিবর্তন করেন মমতা। তিনি বলেছিলেন, ‘‘কর্মসূচি হবে ব্লক স্তরে। আর ঘেরাও করা হবে বিজেপি নেতাদের বাড়ি থেকে ১০০ মিটার দূরে, প্রতীকী ভাবে। যাতে কেউ বলতে না পারেন, বাধা দেওয়া হচ্ছে।’’ সোমবার মামলার শুনানিতে তৃণমূলের সাংসদ অভিষেকের মন্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করে কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম বলেন, ‘‘সাংবিধানিক পদাধিকারীর কাছ থেকে এই ধরনের মন্তব্য আশা করা যায় না।’’ এক জন সংসদ সদস্য কী করে কিছু মানুষকে একজোট হয়ে বাড়ি ঘেরাও করতে বলেন, তা নিয়ে ‘বিস্ময়’ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। এর পরেই তিনি অভিষেক-ঘোষিত ৫ অগস্টের ‘ঘেরাও’ কর্মসূচিতে স্থগিতাদেশ দেন। ফলে মামলাটির আবার শুনানি হবে।
তাপসের ‘ব্যাখ্যা’, শুভেন্দুর খোঁচা
কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের নির্দেশ ঘোষণার পরেই বিধানসভা ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন তাপস। তিনি বলেন, ‘‘কারও অসুবিধা না করে, দলীয় সংস্কৃতি ও শৃঙ্খলা মেনে আমাদের কর্মীরা বাংলার প্রতিটি ব্লকে বাংলার প্রতি বঞ্চনার বিরুদ্ধে, অর্থনৈতিক অবরোধের বিরুদ্ধে আগামী ৫ অগস্ট সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সেই কর্মসূচি পালন করবে।’’ ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে অভিষেকের ঘোষণার পরেই মমতা বলেছিলেন, ‘‘কর্মসূচি হবে ব্লক স্তরে।’’ একই সঙ্গে বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টা হবে প্রতীকী। ঘেরাও শব্দটা বলছি না।’’
সেই কথা স্মরণ করিয়ে সোমবার তাপস বলেন, ‘‘হাইকোর্টের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এটা বলতে চাই, কারা পিটিশন করেছিলেন এটা জানার দরকার নেই। সে দিনই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কর্মসূচি ঘোষণার পরে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী সেটিকে সংশোধন করেছেন।’’ তৃণমূলের এ দিনের ঘোষণায় স্পষ্ট, এক দিকে যেমন মমতার সংশোধিত কর্মসূচিই পালিত হবে, তেমনই অভিষেকের ঘোষণা মতো আট ঘণ্টাই পথে থাকবেন দলের নেতাকর্মীরা। অন্য দিকে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু শুক্রবার হাই কোর্টের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে রাজ্যের শাসকদলকে খোঁচা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি আদালতের এই অন্তর্বর্তিকালীন নির্দেশকে স্বাগত জানাচ্ছি। আদালত এই অগণতান্ত্রিক কর্মসূচিকে কড়া হাতে দমন করেছে। আগামী দিনেও সংবিধানবিরোধী যে কোনও কাজের বিরুদ্ধে আমি আদালতে যাব। আর আশা করব আদালতের এই নির্দেশের পর পিসি-ভাইপো এই ধরনের অসংসদীয় কাজ থেকে বিরত থাকবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy