কলকাতা হাই কোর্ট। — ফাইল চিত্র।
সন্দেশখালিতে ১৪৪ ধারা জারি করার নির্দেশ খারিজ করল কলকাতা হাই কোর্ট। বুধবার বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা খারিজ করে দিল। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, উত্তেজনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এ ক্ষেত্রে পুরো এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ১৪৪ ধারা জারির জন্য নির্দিষ্ট করে উপদ্রুত জায়গা চিহ্নিত করা হয়নি। তাই ১৪৪ ধারা খারিজ করা হল। আদালতের নির্দেশ, ওই এলাকায় আরও সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করতে হবে। তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনের উপর এ ভাবে নির্দেশ গেলে সমস্যা হতে পারে। আর যাতে ‘প্ররোচনা’ না আসে, সে বিষয়টি সকলের উচিত নিশ্চিত করা।
সন্দেশখালিতে যেতে গিয়ে সোমবার প্রশাসনিক বাধার মুখে পড়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে ঢুকতে চেয়ে হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন তিনি। আবেদনে জানিয়েছিলেন, ১৪৪ ধারা জারি থাকায় সন্দেশখালি যেতে পারেননি তিনি। মঙ্গলবার সন্দেশখালি নিয়ে শুভেন্দুর সেই মামলার নিষ্পত্তি করে দিলেন বিচারপতি সেনগুপ্ত। তাঁর পর্যবেক্ষণ, যে হেতু ১৪৪ ধারা খারিজ করা হয়েছে, তাই ওই মামলাটির আর গ্রহণযোগ্যতা নেই। এখন শুভেন্দু সেখানে যেতে পারেন।
গত বুধবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বসিরহাট পুলিশ জেলার অন্তর্গত সন্দেশখালি। তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ, শিবু হাজরা এবং উত্তম সর্দারের গ্রেফতারের দাবিতে পথে নামেন গ্রামবাসীদের একাংশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। বন্ধ করা হয় ইন্টারনেট পরিষেবা। সেই নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মামলা করে সিপিএম। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সন্দেশখালিতে ১৪৪ ধারা জারির নির্দেশ খারিজ করল আদালত।
রাজ্যের উদ্দেশে বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের প্রশ্ন, ‘‘গোটা সন্দেশখালি জুড়ে উত্তেজনা? কেন গোটা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি? এর পর তো বলবেন গোটা কলকাতা জুড়েই ১৪৪ ধারা জারি করতে হবে। মামলায় গুরুতর অভিযোগ করা হয়েছে। হালকা ভাবে নেবেন না।’’ মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, ‘‘শেখ শাহজাহান, সুশান্ত সর্দার এবং শিবু হাজরা এলাকার কৃষিজমিতে মাছের ভেড়ি করেছে। মেয়েদের উপর অত্যাচার করছে। প্রাক্তন বিধায়ক চার দিন ধরে পুলিশের হেফাজতে। মানুষকে একত্রিত করে মানুষের অধিকার রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করছিলেন তিনি। পুলিশ আধিকারিকেরাও অভিযুক্ত। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।’’ এর পরেই বিচারপতি জিজ্ঞেস করেন, এখনও কি ওই পুলিশকর্মীরাই তদন্ত করছেন? তাঁরাই কি আইনশৃঙ্খলা সামলাচ্ছেন? জবাবে বিকাশরঞ্জন জানান, পুলিশই সামলাচ্ছে।
রাজ্যের উদ্দেশে বিচারপতি সেনগুপ্তের পর্যবেক্ষণ, ‘‘গত তিন বছর ধরে পুলিশ কোনও অভিযোগ নেয়নি বলে দাবি। এলাকার মহিলারা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। এত কিছু অভিযোগের পরে আদালত চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না।’’ এই রায়ের পর তৃণমূল নেতা তাপস রায় বলেন, ‘‘ভয়াবহ পরিস্থিতি চলছে সন্দেশখালিতে। সেখানে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশের ভূমিকা রয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যায়ালয় থেকে পুলিশ-প্রশাসনের উপর যদি এ ভাবে নির্দেশ যায়, তা হলে সমস্যা হতে পারে। সেই সমস্যা যাতে না হয়, তাই সব প্রচেষ্টা মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী চালাচ্ছেন। সকলেই সন্দেশখালি নিয়ে চিন্তিত। সেখানে যাতে আর কোনও প্ররোচনা, উস্কানি না ঘটে, আমাদের সকলের উচিত নিশ্চিত করা।’’
গত ৫ জানুয়ারি ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছিল সন্দেশখালিতে। তৃণমূল নেতা শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে গিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনার পর থেকে পলাতক শাহজাহান। সম্প্রতি আবার উত্তপ্ত হয়েছে সন্দেশখালি। দফায় দফায় সেখানে অশান্তি, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশের ভূমিকা। অশান্তির ঘটনায় পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। তাঁদের এক জন তৃণমূলের উত্তম সর্দার। সন্দেশখালিকাণ্ডে নাম জড়ানোর পরেই উত্তমকে সাসপেন্ড করে শাসকদল। এর পরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়াও গ্রেফতার করা হয়েছে বিজেপি নেতা বিকাশ সিংহ ও সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দার। বিকাশ এবং উত্তমকে সোমবার জামিন দেওয়ার পর আবার গ্রেফতার করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy