গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
নিজের মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ বাবার বিরুদ্ধে। স্বামীর বিরুদ্ধে সন্তান অপহরণের অভিযোগ তুলে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ স্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, সন্তানকে ছিনতাই করে নিয়ে গিয়েছেন স্বামী। তিনি যে কোনও সময় বিদেশে চলে যেতেন পারেন। তাঁকে যে কোনও উপায়ে আটকানো হোক। পুলিশও স্বামীকে খুঁজে পাচ্ছে না। হাই কোর্টের কাছে ওই মায়ের আবেদন, সন্তানকে ফিরিয়ে দিক আদালত। সন্তান নিয়ে ‘পলাতক’ ওই ব্যক্তিকে খুঁজতে দেশ জুড়ে তল্লাশি করতে বলল আদালত। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারকে হাই কোর্টের নির্দেশ, দেশের বিমানবন্দরগুলিতে সতর্কতা জারি করতে হবে। যাতে কোনও ভাবেই দেশ ছেড়ে ওই ব্যক্তি চলে যেতে না পারেন। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রসিদির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্তকারী অফিসারকে ওই ব্যক্তির খোঁজ শুরু করতে হবে। সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে যে কোনও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে পারবে পুলিশ।
২০১২ সালে কলকাতার হাইল্যান্ড পার্কের বাসিন্দা অঙ্কন সরকারের সঙ্গে বিয়ে হয় শ্রাবণী দত্তের। ২০২২ সাল থেকে তাঁদের সম্পর্কে ভাঙন ধরে। আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নেন স্বামী ও স্ত্রী। তাঁদের পাঁচ বছরের কন্যাসন্তান কার কাছে থাকবে তা নিয়ে কোর্টে মামলা দায়ের হয়। কন্যার অভিভাবকত্বের অধিকার নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন বাবা। নিম্ন আদালত জানায়, ওই নাবালিকা মায়ের কাছেই থাকবে। তবে ছুটির দিন তার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পারবেন বাবা। মায়ের দাবি, কোর্টের ওই নির্দেশ তিনি মেনে নেন। কয়েক সপ্তাহ ঠিক ভাবেই চলছিল। গত ১২মে এক রবিবার শপিং মলে যাওয়ার পথে মেয়েকে ছিনতাই করে নিয়ে যান স্বামী। ওই মহিলার বক্তব্য, একটি গাড়িতে করে এসে তাঁর স্বামী মেয়েকে তুলে নিয়ে যান। তার পর থেকে আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
ওই ঘটনায় নিম্ন আদালত শিশু-সহ বাবাকে হাজিরার নির্দেশ দেয়। ওই নির্দেশ কার্যকর না হওয়ায় অঙ্কনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। তাতেও কাজ না হওয়ায় শিশুকন্যাকে ফিরে পেতে হাই কোর্টে ‘হিবিয়াস কর্পাস’ মামলা করেন শ্রাবণী। সন্তানকে নিয়ে স্বামী বিদেশে চলে যেতেন পারেন বলে আদালতে আশঙ্কার কথা জানান তিনি। ওই ঘটনায় পুলিশের কাছে রিপোর্ট চায় আদালত। পুলিশ জানায়, কলকাতার বাড়িতে ওই ব্যক্তি নেই। তাঁকে অনেক খুঁজেও পাওয়া যায়নি। বিচারপতি বসাকের পর্যবেক্ষণ, ওই ব্যক্তি নিউটাউনের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি করেন। ওই সংস্থার পক্ষে তাঁর হদিস দেওয়া সম্ভব। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার ডিরেক্টরকে সহযোগিতার নির্দেশ দেয় আদালত। ডিরেক্টর জানান, অঙ্কন অফিসে গিয়ে কাজ করছেন না। তিনি বাড়ি থেকে কাজ করছেন। ডিভাইস বলছে, ওই ব্যক্তি রাজ্যের বাইরে চলে গিয়েছেন। এর আগে তিনি মুম্বই থেকে অফিসের কাজ করেছেন। আবার ওই ব্যক্তির ডিভাইস চালু হলে বলা সম্ভব তিনি ঠিক কোথায় রয়েছেন।
এই মামলায় কেন্দ্রের আইনজীবী জানান, অঙ্কন ভিসা পেয়ে গিয়েছেন। বিদেশে যেতে তাঁর বাধা নেই। এর পরেই হাই কোর্ট নির্দেশ দেয়, আদালতের অনুমতি ছাড়া ওই ব্যক্তি যাতে বিদেশে যেতে না পারেন কেন্দ্র ও রাজ্যকে তা নিশ্চিত করতে হবে। আদালত জানায়, কোর্টের এই নির্দেশ কেন্দ্রকে দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। পুলিশকে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কাছ থেকে ওই ব্যক্তির মোবাইল নম্বর, ইমেল আইডি, ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নম্বর-সহ সমস্ত তথ্য নিয়ে অবিলম্বে খোঁজার কাজ শুরু করুক। আগামী ২৮ অগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি। ওই দিন পুলিশকে রিপোর্ট দিতে বলেছে আদালত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy