Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Calcutta High Court

‘পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয়নি’, ঢোলাহাট নিয়ে হাই কোর্টে কী যুক্তি রাজ্যের? দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের নির্দেশ

কিছু দিন আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঢোলাহাটে পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন এক যুবকের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দু’দিন ধরে থানা ঘেরাও করে চলে বিক্ষোভ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪ ১৫:২৯
Share: Save:

ঢোলাহাটে যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। আদালতের নির্দেশ, শনিবারের মধ্যে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করতে হবে। তার ভিডিয়োগ্রাফিও হবে বলে জানিয়েছে আদালত। সেই ফুটেজ সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে রাজ্যকে। আদালত জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের সময়ে উপস্থিত থাকবেন মৃতের বাবা এবং বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট।

শুক্রবার ঢোলাহাট সংক্রান্ত মামলাটি হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের এজলাসে ওঠে। রাজ্য জানায়, পুলিশি হেফাজতে যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠছে, তা সত্য নয়। কারণ, পুলিশি হেফাজতে যুবক ছিলেন গত ৪ জুলাই মাত্র পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। যুবকের মৃত্যু হয় ৮ তারিখে। মৃতের পরিবারের তরফে পাল্টা যুক্তি দেওয়া হয়েছে। আদালত সব দিক খতিয়ে দেখে দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। বিচারপতি সিংহ জানিয়েছেন, হেফাজতে মৃত্যু নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের যে নির্দেশিকা রয়েছে, ঢোলাহাটকাণ্ডে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের সময়ে তা পালন করতে হবে। ভিসেরা রিপোর্ট হায়দরাবাদের সিএফএসএলে পাঠাতে হবে। আগামী ২২ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

এই মামলায় সাক্ষীদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। অভিযোগ, সাক্ষীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আদালতের নির্দেশ, সুন্দরবন জেলা পুলিশ সুপারকে সাক্ষীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। তাঁদের যাতে আর হুমকি না দেওয়া হয়, তা দেখতে হবে পুলিশকেই।

গত সোমবার মৃত্যু হয় ঢোলাহাট থানার ঘাটবকুলতলা এলাকার বাসিন্দা আবু সিদ্দিক হালদারের। দিন কয়েক আগে একটি চুরির ঘটনায় তাঁকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরিবারের দাবি, পুলিশি হেফাজতে মারধর, অত্যাচার করার ফলে মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢোলাহাট এলাকা। গত দু’দিন ধরে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান মৃতের পরিবারের লোকজন এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। ওই ঘটনায় যথাযথ তদন্ত চেয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় পরিবার। তাদের আইনজীবীর বক্তব্য, দেহে বিদ্যুতের শক এবং আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ওই যুবকের দেহের ময়নাতদন্ত নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করে পরিবার। সেই মামলাতেই দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেওয়া হল।

আদালতে রাজ্য, মামলাকারীর আইনজীবী এবং বিচারপতির কথোপকথনের অংশ তুলে দেওয়া হল—

রাজ্য: ঢোলাহাটের ঘটনায় ময়নাতদন্ত করা হয়েছে কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে। তাতে যুবকের দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। ঘটনার দিন যুবককে কাকদ্বীপের যে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই স্বস্তিক সেবাসদনের ফুটেজও সংরক্ষণ করা হয়েছে।

বিচারপতি সিংহ: কাকদ্বীপের নার্সিংহোম থেকে বলা হয়েছিল, যুবকের জন্ডিস হয়েছে। সেই তথ্য তার মানে সঠিক নয়?

রাজ্য: ময়নাতদন্তে যুবকের দেহে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। কিন্তু পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীন যুবকের মৃত্যু হয়নি। কারণ, ওই যুবক গত ৪ তারিখ পাঁচ-ছ’ঘণ্টা পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। তার পর তাঁকে কাকদ্বীপের নার্সিংহোমে পাঠানো হয়। সেখান থেকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল যুবককে। তিনি জামিন পেয়ে গিয়েছিলেন। এর পর যুবক তাঁর কাকার সঙ্গেই ছিলেন। তিনি ভাইপোকে মথুরাপুর হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। ৮ জুলাই যুবকের মৃত্যু হয়।

রাজ্য: ঢোলাহাট থানার যে ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই রাজদীপ সরকারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত ৯ জুলাই এই ঘটনায় এফআইআর দায়ের হয়। এনফোর্সমেন্ট শাখার ডিএসপি ঘটনার তদন্ত করছে।

মামলাকারীর আইনজীবী শামিম আহমেদ: এনফোর্সমেন্ট শাখার ডিএসপি যথেষ্ট নন। আমরা চাই সিট গঠন করে কোনও দক্ষ আধিকারিক তদন্ত করুন। প্রথম বার সঠিক পদ্ধতিতে ময়নাতদন্ত হয়নি। আমরা তাই দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত চাই।

মামলাকারীর আইনজীবী: প্রথম বার ময়নাতদন্তের সময় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন না। মৃতের পরিবারের কেউ ছিলেন না।

রাজ্য: এই তথ্য সঠিক নয়। ময়নাতদন্তের সময় মৃতের পরিবার ছিল। মৃতের জামাইবাবু মহসিন মোল্লা উপস্থিত ছিলেন। আমরা গোটা প্রক্রিয়ার ভিডিয়ো করেছি।

বিচারপতি: ভিডিয়োগ্রাফিতে কি দেহের কোথায় কোথায় আঘাত, তা ধরা পড়বে? ভিডিয়োগ্রাফি কি যথেষ্ট?

রাজ্য: হ্যাঁ। দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের প্রয়োজন নেই।

মামলাকারী: ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, পুলিশি হেফাজতে কারও মৃত্যু হলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং পরিবারকে উপস্থিত থাকতে হবে। তিনটি পৃথক হাসপাতালের চিকিৎসককেও উপস্থিত থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি। ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন না।

মামলাকারী: গত ৮ জুলাই যুবকের মৃত্যুর পর ঢোলাহাট থানার ওসি পরিবারের সঙ্গে রফা করতে চেয়েছিলেন। প্রথম থেকে বলে আসা হচ্ছে, মৃতের কাকা তাঁর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু তা সঠিক নয়। পুলিশ কাকাকে দিয়ে জোর করে সই করিয়ে নিয়েছিল। তার পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। কাকা কোনও অভিযোগই আসলে করেননি। ঘটনাটি ঘটে ৩ জুলাই রাতে। পুলিশ তা ৪ তারিখ বলে চালিয়ে দিচ্ছে।

এর পরেই আদালত দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। শনিবারের মধ্যে তা করতে হবে। পরবর্তী শুনানির দিন বাকি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আদালত।

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court Dholahat Post Mortem
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE