সুদূর পশ্চিম আফ্রিকার গিনি বিশাও দেশ থেকে বাংলায় ফুটবল খেলতে এসে গ্রেফতার হয়েছিলেন। কোভিড পরিস্থিতিতে নিজের দেশে ফিরে যেতে পারেননি তিনি। এমন অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয় নকশালবাড়ি থানায়। তার পর তাঁকে গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নয় রাজ্য পুলিশ। ক্যামেরা ফোফানা উসুমানে নামের ওই ফুটবলার সম্প্রতি জামিন চেয়ে এবং দেশে ফেরার আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। ওই ফুটবলারকে দেশে ফেরানোর বন্দোবস্ত করতে বলেছে আদালত। হাই কোর্ট জানিয়েছে, ওই ফুটবলারকে ‘উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ’ দিতে হবে রাজ্যকে।
ফুটবল খেলা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি ছ’মাসের ভিসা নিয়ে এই রাজ্যে এসেছিলেন উসুমানে। ওই বছরেরই ৫ জুলাই তাঁর ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তার মধ্যেই এসে পড়ে কোভিড অতিমারি। এই পরিস্থিতিতে নিজের দেশে ফিরে যেতে পারেননি ওই ফুটবলার। এই সময়েই কেন্দ্রের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছিল, ২০২০ সালের মার্চ মাসের আগে যাঁরা ভিসা নিয়ে এ দেশে এসে কোভিড-পরিস্থিতির কারণে ফিরতে পারেননি, তাঁদের ভিসার মেয়াদ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ঘটনাচক্রে, ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে দেশে ফেরার জন্য আবেদন করেছিলেন তিনি। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ দেশেই থেকে যেতে হয় উসুমানেকে।
কেন্দ্রের নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও ‘অবৈধ ভাবে’ এ দেশে থাকার জন্য উসুমানেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার পর থেকে হেফাজতে ছিলেন তিনি। সম্প্রতি তিনি কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। মামলাটি ওঠে বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে। ওই ফুটবলারের হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী উজ্জ্বল রায়। বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, “কিছু উপার্জনের জন্য ওই ব্যক্তি হাজার হাজার মাইল পথ পেরিয়ে এ দেশে এসেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কোনও কাজে যুক্ত থাকার প্রমাণ নেই।” একই সঙ্গে বিচারপতির সংযোজন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিষয়টি নিয়ে আরও দায়িত্বশীল ও মানবিক হওয়া উচিত ছিল এবং ওই ব্যক্তিকে সমস্যায় ফেলা ঠিক কাজ হয়নি। বিচারপতি স্মরণ করিয়ে দেন যে, ওই ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে এ দেশে ছিলেন না। পরিস্থিতির শিকার হয়েই তাঁকে থেকে যেতে হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে যে মামলাগুলি রুজু হয়েছিল, তার সবগুলিই খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট। বিচারপতি চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তিকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাজ্যকে। এর পাশাপাশি বিচারপতির নির্দেশ, এই বিষয়ে দার্জিলিঙের পুলিশ সুপারকে রাজ্য পুলিশের ডিজির সঙ্গে কথা বলতে হবে এবং কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সচিব এবং বিদেশ মন্ত্রককে উচ্চ আদালতের নির্দেশ, বিষয়টি নিয়ে তাঁদের যথাযথ সহযোগিতা করতে হবে।