বাজেট অধিবেশনে শাসক ও বিরোধী সব পক্ষের কাউন্সিলরদের দাবির পরেও কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলরদের ভাতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিলেন না মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সোমবার কলকাতা পুরসভার বাজেট অধিবেশনে এই প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন তৃণমূলের প্রবীণ কাউন্সিলর রত্না শূর। তিনি যুক্তি দেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ১০,০০০ টাকা মাসিক ভাতা যথেষ্ট নয়। এই ভাতা বৃদ্ধি করে ১৫,০০০ টাকা করার দাবি জানান তিনি। তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন করেন শাসক ও বিরোধী দলের একাধিক কাউন্সিলর। রত্না তাঁর বক্তব্যে জানান, বর্তমানে কাউন্সিলরদের খরচ উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে গিয়েছে। অনেক কাউন্সিলরের নিজস্ব ওয়ার্ড অফিস নেই, ফলে তাঁদের আলাদা অফিস ভাড়া নিয়ে কাজ করতে হয়। বিদ্যুতের খরচও বেড়েছে, যা সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এ সব কারণেই ভাতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
আরও পড়ুন:
এই দাবির প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার মেয়র ফিরহাদ জানিয়েছেন, বিষয়টি পরে বিবেচনা করা হবে, তবে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। মেয়র তাঁর মতামত জানানোর পর পুর আধিকারিকদের একাংশের স্পষ্ট বক্তব্য, কলকাতা পুরসভার অর্থনৈতিক কাঠামো সুসংহত করাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য। ২০২৬ সালের ডিসেম্বর মাসে কলকাতা পুরসভার বর্তমান বোর্ডের মেয়াদ শেষ হবে। তার আগে রাজস্ব আদায়ে উন্নতি ঘটিয়ে পুরসভার আর্থিক অবস্থাকে একটি দৃঢ় জায়গায় নিয়ে যেতে চান মেয়র। তাই আপাতত ব্যয় সঙ্কোচন নীতির মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধির উপর জোর দিচ্ছেন তিনি।
কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলরদের মাসিক ভাতা বৃদ্ধির ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। বামফ্রন্ট আমলের শেষ দিকে মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্যের সময় পর্যন্ত এই ভাতা ছিল মাত্র ৫,০০০ টাকা। ২০১০ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের শোভন চট্টোপাধ্যায় কলকাতার মেয়র হলে তিনি তা বৃদ্ধি করে ৭,০০০ টাকা করেন। ফিরহাদ মেয়র হওয়ার পর ভাতা ৩,০০০ টাকা বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন:
তবে এ বার তিনি আর কাউন্সিলরদের ভাতা বৃদ্ধি করতে চাননি। পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, মেয়র বর্তমানে কলকাতা পুরসভার আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছেন। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটিয়ে কলকাতা পুরসভাকে স্বনির্ভর ও আর্থিক ভাবে শক্তিশালী করাই তাঁর লক্ষ্য। এই কারণেই তিনি ব্যয় কমানোর কৌশল নিয়েছেন এবং কাউন্সিলরদের ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।
কাউন্সিলরদের একাংশ মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ১০,০০০ টাকার ভাতা দিয়ে সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে উঠেছে। শাসক ও বিরোধী উভয় দলের কাউন্সিলরেরা একযোগে ভাতা বৃদ্ধির দাবি তুললেও মেয়র এ নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখাননি। তবে কাউন্সিলরদের আশা, ভবিষ্যতে পুরসভার আর্থিক অবস্থা আরও ভাল হলে মেয়র হয়তো এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন। এই সিদ্ধান্তে পুরসভার অভ্যন্তরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ মনে করছেন, মেয়রের ব্যয় সঙ্কোচন নীতিই সঠিক, কারণ পুরসভার আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী না হলে উন্নয়নমূলক কাজ ব্যাহত হতে পারে। অন্য দিকে, কাউন্সিলরদের একাংশ মনে করছেন, তাঁদের কাজের পরিধি যেমন বেড়েছে, বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যয়ও। এই পরিস্থিতিতে ভাতা বৃদ্ধি হলে তাঁদের কাজ করা সহজ হত। তৃণমূল কাউন্সিলর রত্নার দাবি প্রসঙ্গে ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ বলেন, ‘‘এক জন কাউন্সিলরকে যে ধরনের কাজ করতে হয়, তা করে চাকরি করা সম্ভব নয়। যদি সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরের আগে থেকে কোনও ব্যবসা থাকে তাহলে হয়তো তিনি কিছুটা সুরাহা পাবেন। তবে রত্না শূরের মতো কাউন্সিলরদের সংখ্যা শাসকদলে হাতেগোনা। তাদের জন্য ভাতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। তবে শাসকদলের অধিকাংশ কাউন্সিলর গত ৫ বছরে এত অর্থ রোজগার করেছেন, যা দিয়ে তাঁরা ওয়ার্ডের বহু মানুষকেই ভাতা দিতে পারেন।’’