Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Calcutta High Court

প্রতিস্থাপনে ফৌজদারি মামলা বাধা হতে পারে না, চিকিৎসকের কিডনি প্রাপ্তিতে এগিয়ে এল হাই কোর্ট

কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ, স্বাস্থ্য দফতরের উপদেষ্টা বোর্ডকে ১০ দিনের মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোনও ভাবেই দেরি করা চলবে না।

চিকিৎসককে কিডনি প্রতিস্থাপনের অনুমতি দিতে রাজ্যকে নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট।

চিকিৎসককে কিডনি প্রতিস্থাপনের অনুমতি দিতে রাজ্যকে নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২২ ১৯:০৯
Share: Save:

কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলা বাধা হতে পারে না। দাতার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা থাকলে তিনি কিডনি দান করতে পারবেন না, এই যুক্তি কোনও ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আইনেও এর কোনও সমর্থন নেই। এক চিকিৎসকের কিডনি প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত মামলার পর্যবেক্ষণে এমনটাই জানাল কলকাতা হাই কোর্ট। দ্রুত শুনানি করে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, স্বাস্থ্য দফতরের উপদেষ্টা বোর্ডকে ১০ দিনের মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোনও ভাবেই দেরি করা চলবে না।

হুগলির সিংহেরভেড়ির চিকিৎসক পীযূষকান্তি দে’র (৩৫) দু’টি কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। গত বছর চিকিৎসকরা তাঁকে কিডনি প্রতিস্থাপন করার পরামর্শ দেয়। খোঁজ শুরু হয় একই রক্তের গ্ৰুপের কিডনির। মায়ের রক্ত গ্ৰুপের সঙ্গে মিল পাওয়া যায় পীযূষের। কিন্তু মা ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ায় কিডনি দিতে পারেননি ছেলেকে। অবশেষে দূর সম্পর্কের আত্মীয় শ্রীরামপুরের বাসিন্দা সুমিত দে’র সঙ্গে রক্তের গ্ৰুপ একই হয় পীযূষের। সুমিত স্বেচ্ছায় কিডনি দান করতে চান পীযূষকে। এর পর কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য রাজ্যের স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ দফতরের কাছে অনুমতির জন্য আবেদন করেন তিনি। গত ১০ অগস্ট অনুমতি গ্রাহ্য করেনি স্বাস্থ্য দফতর। তাদের বক্তব্য, পুলিশের রিপোর্টে জানা গিয়েছে সুমিতের নামে বেশ কয়েকটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। ফলে তিনি কিডনি দান করতে পারবেন না।

স্বাস্থ্য দফতরের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন পীযূষ। তাঁর আইনজীবী উজ্জ্বল রায়ের সওয়াল, ‘‘ফৌজদারি মামলা থাকলে কিডনি দেওয়া যাবে না আইনে এমন কিছু বলা নেই। তা ছাড়া এক জন মানুষের জীবনের থেকেও কি কোনও অভিযোগকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে?’’ তিনি বলেন, ‘‘কয়েকটি অঙ্গদানের ক্ষেত্রে আইনগত কিছু সমস্যা দেখা দেয়। সেই কারণে পুলিশের কাছ থেকে রিপোর্ট নেওয়া হয়।’’ গত বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের একক বেঞ্চ রাজ্যের কাছে এ বিষয়ে হলফনামা তলব করে। কিন্তু মামলাকারীর কাছে সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না। তাই পরের দিনই প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হন তিনি। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে দ্রুত শুনানি করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।

আদালতে রাজ্য জানায়, হুগলির জেলাশাসক কিডনি প্রতিস্থাপনের অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত বিষয়ে গঠিত স্বাস্থ্য দফতরের চিকিৎসক বোর্ড ছাড়পত্র দেয়নি। সেই কারণেই প্রতিস্থাপন আটকে রয়েছে। অন্য দিকে, ফৌজদারি মামলা থাকলে কিডনি দিতে আইনত কোনও বাধা নেই তা স্বীকার করে নেয় রাজ্য। উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ, আইনে যখন এ বিষয়ে কোনও বাধা নেই, তবে এই যুক্তি দেখিয়ে এক জনের প্রাণকে সংশয়ের দিকে ঠেলে দেওয়ার কোনও দরকার নেই। পীযূষের কিডনি প্রতিস্থাপন নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এর মধ্যে মামলাকারী কোনও অসুবিধার সম্মুখীন হলে পূজাবকাশকালীন বেঞ্চের দ্বারস্থ হতে পারবেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE