গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
বাঁকুড়ায় বিজেপির বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে অনুমতি দেওয়া যাবে না। বুধবার হাই কোর্টে শুনানিতে নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপারের বক্তব্য শোনার পরে মত বদলান বিচারপতি। দুপুরের নির্দেশে বিচারপতি জানিয়েছিলেন আধ ঘণ্টার মধ্যে অনুমতি দিতে হবে। তবে বিকেলে হাই কোর্ট জানাল, বাঁকুড়ার কোতুলপুরে আগামী ৪ নভেম্বরের আগে সভা করতে পারবে না বিজেপি।
কোতুলপুরে বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান করতে চেয়ে পুলিশের অনুমতি চায় বিজেপি। সেখানে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মঞ্চ বাঁধার কাজ শেষ হয়ে গেলেও পুলিশের অনুমতি না মেলায় হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় গেরুয়া শিবির। বুধবার দুপুরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানান, আধ ঘণ্টার মধ্যে ওই সভা বা সম্মিলনীতে অনুমতি না দিলে বাঁকুড়ার পুলিশ সুপারকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজির হতে হবে।
ওই মামলার শুনানিতে বিকেলে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘পুলিশ সুপার বলছেন, সভা ময়দানটি অনেকটা বড়। সেখানে একটি মাত্র প্রবেশ এবং বাহিরের পথ রয়েছে। এই অবস্থায় পদপিষ্টের ঘটনা হলে আদালতের তো কিছু করার থাকবে না। জালিয়ানওয়ালাবাগের মতো ঘটনা হলে দায় কে নেবে?’’
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, সভা করার অনুমতি চেয়ে বিজেপির আবেদনে ত্রুটি রয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর ইমেল মারফত অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। আদালতের কাছে ওই পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য নয়। গত ৩০ অক্টোবর লিখিত ভাবে অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যে আবেদন গ্রহণযোগ্য হয়নি। তাই শেষ মুহূর্তে আদালতেরও কিছু করার নেই।
বিজেপির আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনারা কয়েক দিন পরে কর্মসূচি করুন। পুলিশকে চার দিন সময় দিচ্ছি। এই সময়ের মধ্যে তারা সভার অনুমতি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তার পরেই সভা করা যাবে।’’ তার প্রেক্ষিতে বিজেপির আইনজীবীর সওয়ালে বলেন, ‘‘সভার জন্য সবাই তৈরি। আদালতের অনুমতি মিললেই সভা শুরু হবে। সবাই চলে এসেছেন সভাস্থলে।’’ তিনি যুক্তিতে বলেন, ‘‘তা ছাড়া এটা কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। বিজয়া সম্মিলনীর সভা। অনুমতি দেওয়া হোক।’’ যা নিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘আমি বুঝি এটা রাজনৈতিক সভা নয় বলে। কিন্তু কোনও অঘটন ঘটলে তার দায় কে নেবে? এ ভাবে অনুমতি দেওয়া যায় না।’’আবারও আর্জি জানান বিজেপির আইনজীবী। তিনি তুলে আনেন রাজভবনের সামনে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার কথা। তাঁর কথায়, ‘‘রাজভবনের সামনে কর্মসূচিতে এক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ ব্যবস্থা করে দিল। এ ক্ষেত্রে কেন চার দিন সময় লাগবে? তা ছাড়া এই সভার আয়োজকরা সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছেন। তাঁদের ৫ মিনিট সময় দেওয়া হোক। আমি যোগাযোগ করছি। তাঁরা আদালতের কাছে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারবেন।’’
এর পাঁচ মিনিট পরে আদালতে মাঠ থেকে তোলা ভিডিয়ো বিচারপতিকে দেখানো হয়।
তার পর বিজেপির আইনজীবী বলেন, ‘‘অনেক বড় মাঠ। ওই মাঠে ২৫-৩০ হাজার লোক ধরবে। আর ওই সভায় খুব বেশি হলে ৫ হাজার লোকের জমায়েত হয়েছে। ‘প্রবেশ’ এবং ‘বাহির’-এর আলাদা আলাদা পথ রয়েছে। এই সংখ্যক লোকে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কোনও ঘটনা ঘটলে মামলাকারী তার সম্পূর্ণ দায় নেবে। পুলিশের সাহায্য দরকার নেই। অতিথিদের কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা রয়েছে।’’
কিন্তু বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তুলে ধরেন গত বছর ডিসেম্বরে আসানসোলে কম্বল বিতরণ কর্মসূচির কথা। তিনি বলেন, ‘‘ওখানে দুর্ঘটনা হয়েছিল। শিশুসুলভ আচরণ করবেন না। পুলিশের গ্রিন সিগন্যাল ছাড়া অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়।’’ বিজেপির আইনজীবী বলেছিলেন পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘কত বার অনুমতি চাওয়া হবে? কোনও কর্মসূচি (শুভেন্দুর) করতে গেলেই আদালতের অনুমতি নিতে হয়।’’ কিন্তু এ নিয়ে আর কোনও মন্তব্য করেনি আদালত। নির্দেশে জানিয়ে দেওয়া হয়, কোতুলপুরের বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান বুধবার করা যাবে না।
আদালতের নির্দেশের পর আর মঞ্চে ওঠেননি শুভেন্দু। তিনি কোতুলপুরে একটি লজে যান। সেখানে বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে দেখা করে বেশ কিছুটা রাস্তা পদযাত্রা করেন। তার পর পরের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। পাশাপাশি, বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারিকে নিশানা করেন। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘কোর্টের নির্দেশ মেনে আমি মাঠে গেলাম না। যা করেছে, তার ফল ভুগতে হবে। একটা বিজয়া সম্মিলনী পাঁচ-ছয় হাজার কর্মীকে নিয়ে। তার যা মাইলেজ পাবলিসিটি পেতাম, বৈভবের পর বৈভব দেখানোর ফলে তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি পেলাম। ৯ তারিখ (নভেম্বর) বিষ্ণুপুরে আসব। কর্মীদের সঙ্গে মিষ্টিমুখ করব। মিষ্টি খাব এবং মিষ্টি খাওয়াব। ১৭ তারিখ (নভেম্বর) কোতুলপুর বাজারে হাঁটব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy