গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
নামে কী যায় আসে? লিখেছিলেন উইলিয়াম শেক্সপীয়র। বুধবার কলকাতা হাই কোর্ট প্রশ্ন তুলল, ‘‘নামকরণে কী যায় আসে’’!
সিংহীর নাম ‘সীতা’ কেন রাখা হবে? প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। যুক্তি হিসাবে তারা বলেছিল, হিন্দুদের কাছে দেবীপ্রতীম যে সীতা, তাঁর নামে জীবজন্তুর নাম কেন রাখা হবে? বুধবার কলকাতা হাই কোর্ট এর পাল্টা যুক্তি দিয়ে জানত চাইল, আমরা তো দেবী দুর্গার বাহন হিসাবে সিংহকে পুজোই করি! তা হলে সিংহের সীতা নামে আপত্তি কিসে? নামকরণে কি সত্যিই কিছু যায় আসে?’’
এই যুক্তি এবং পাল্টা যুক্তিতে বুধবার কলকাতা হাই কোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য এবং বিশ্বহিন্দু পরিষদের আইনজীবীর মধ্যে দীর্ঘ কথোপকথন চলল—
বিচারপতি প্রথমেই প্রশ্ন করেন: ‘‘সিংহের নামকরণের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছেন? কী ভাবে সিংহের নামকরণ হল?’’
জবাবে আইনজীবী বলেন: আমাদের আবেদন, কোনও প্রাণীর নাম ধর্মীয় দেবতার নামে রাখা যাবে না।
বিচারপতি: নামকরণ নিয়ে কী যায় আসে।
আইনজীবী: এই ধরনের নাম ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে।
বিচারপতি: কিন্তু এ ধরনের নামকরণ তো স্নেহ বা ভালবাসা থেকে করা হয়ে থাকে। এতে আপত্তি কোথায়?
আইনজীবী: কিন্তু স্নেহ দেখাতে গিয়ে কারও অপবাদ করাও তো ঠিক নয়!
বিচারপতি: আপনি এমন বলছেন ঠিকই। কিন্তু এটা নির্ভর করে একজন ব্যক্তির মানসিকতা এবং তাঁর বিচক্ষণতার উপর।
আইনজীবী: এটা যদি অপবাদ না হয়, তবে তো আগামী দিনে গাধার নামেও কোনও দেবতার নাম ব্যবহার করা হবে!
বিচারপতি: কিন্তু সিংহের নাম সীতা হলে অসুবিধা কোথায়?
আইনজীবী: আমরা সীতাকে পুজো করি। তাঁর স্থান মন্দিরে। জঙ্গলে নয়।
বিচারপতি: কিন্তু দেবী দুর্গার পায়ের নীচে তো সিংহ থাকে। দুর্গাকে পুজো করার সময় তো সিংহকেও পুজো করা হয়!
আইনজীবী: কিন্তু সিংহের জন্য আলাদা কোনও মন্ত্র নেই। তা হলে এ ক্ষেত্রে পুরাণ টানতে হয়।
বিচারপতি: আপনি সেই পুরান বলুন। আমি শুনতে চাই।
আইনজীবী: দেবী দুর্গার ১০ হাত অশুভ শক্তির বিনাশ করে শুভ শক্তির জয়কে চিহ্নিত করে। অশুভকে ১০ হাত দিয়ে সব দিক ঘিরে আক্রমণ করা হয়। তবেই বিজয় আসে। রাক্ষসকে বধ করার জন্য আমাদের পশুর শক্তি বা সাহায্য দরকার। তাই সিংহ দেবী দুর্গার পায়ের নীচে থাকে।
বিচারপতি: মানুষের চিন্তাধারার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। নামকরণে কেন সমস্যা হবে সেটা এখনও স্পষ্ট নয়! সিংহ ছাড়া কি আমরা দুর্গাকে কল্পনা করতে পারি?
আইনজীবী: এই নাম রেখে আমাদের ধর্মীয় অনুভূতি লঙ্ঘন করা হয়েছে। এই নাম কে রাখল? ত্রিপুরার চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছেন তাঁরা এই নাম রাখেননি।
বিচারপতি: তবে রাজ্য এ ব্যাপারে রিপোর্ট দিক। এই গোটা বিষয়ে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চাইছে আদালত।
এই ঘটনার শুরু গত সপ্তাহে। গত শনিবার কলকাতা হাই কোর্টে একটি মামলা করেছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। সেই মামলার মূল বক্তব্য ছিল, জলপাইগুড়ির বেঙ্গল সাফারিতে একসঙ্গে রাখা হয়েছে আকবর নামের একটি সিংহ এবং সীতা নামের এক সিংহীকে। এই নাম নিয়েই আপত্তি তোলে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরার সিপাহিজলা জ্যুলজিকাল পার্ক থেকে জলপাইগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে নিয়ে আসা হয়েছিল আকবর এবং সীতাকে। দু’জনকে একই ঘেরাটোপে রেখেছিল সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ। বিএইচপির অভিযোগের রাজ্যের বন দফতর সূত্রে জানা যায়, আকবরের বাবার নাম দুষ্মন্ত। মায়ের নাম চিন্ময়ী। ২০১৬ সালে সিপাহিজলা চিড়িয়াখানায় তারা তিন শাবকের জন্ম দিয়েছিল। সেই তিন শাবকেরই একটি আকবর। তাদের নামকরণ করা হয়েছিল ৭০ দশকের অমিতাভ বচ্চন, ঋষি কপূর এবং বিনোদ খান্না অভিনীত সিনেমা ‘অমর, আকবর, অ্যান্টনি’র নামে। এদের মধ্যে আকবরকে বেছে নেয় সেন্ট্রাল জ়ু অথরিটি এবং রাজ্য জ়ু অথরিটি। অন্য দিকে সীতারও জন্ম ত্রিপুরা চিড়িয়াখানাতে। তার জন্ম ২০১৮ সালে। বন দফতর জানিয়েছে, বেঙ্গল সাফারি পার্কে আসার আগে থেকেই আকবর ও সীতার একসঙ্গে থাকার অভ্যাস ছিল। তাই এখানেই তা-ই রাখা হয়েছে।
যদিও ভিএইচপির জবাব, রাজ্যের বন দফতর সিংহ এবং সিংহীটির নামকরণ করেছে এবং তাদের একসঙ্গে রেখে ধর্মের অবমাননা করেছে। তাই সিংহের নাম বদলের দাবি তোলে সংগঠনটি। প্রসঙ্গত, আকবর মোগল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট। আর সীতা পৌরাণিক চরিত্র, রামায়ণে রামচন্দ্রের স্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy