Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Potato Price

ধর্মঘট উঠে গেলেও হিমঘর থেকে আলু পৌঁছল না বাজারে, তবে দাম কমার ইঙ্গিত মিলল অবশেষে

প্রশাসন এবং বিক্রেতাদের দাবি, বুধবার সন্ধ্যায় ধর্মঘট উঠলেও হিমঘর থেকে আলু এখনও বাজারে এসে পৌঁছয়নি। তা পৌঁছলে আলুর দাম কমবে বলেই মনে করছেন পাইকারি এবং খুচরো ব্যবসায়ীরা।

রাজ্যে আলুর দাম শীঘ্রই নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা বিক্রেতা এবং ক্রেতা, উভয়পক্ষেরই।

রাজ্যে আলুর দাম শীঘ্রই নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা বিক্রেতা এবং ক্রেতা, উভয়পক্ষেরই। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪ ১৭:২২
Share: Save:

কোথাও ৪০ টাকা, কোথাও ৪৫ টাকায় বৃহস্পতিবারও বিক্রি হল এক কেজি জ্যোতি আলু। চন্দ্রমুখী আলুর দাম তার থেকে একটু বেশি। দক্ষিণ দিনাজপুরে স্থানীয় ভাবে যে আলু চাষ হয়, তার দামও কমেনি। ক্রেতাদের বড় অংশের দাবি, আলু ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট উঠে গেলেও তার প্রভাব রাজ্যের বাজারে খুব একটা পড়েনি। প্রশাসন এবং বিক্রেতাদের দাবি, বুধবার সন্ধ্যায় ধর্মঘট উঠলেও হিমঘর থেকে আলু এখনও বাজারে এসে পৌঁছয়নি। প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, শুক্রবারের মধ্যেই সমস্ত বাজারে আলুর জোগান স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তার পর আলুর দাম কমবে বলেই মনে করছেন পাইকারি এবং খুচরো ব্যবসায়ীরা। আশায় বসে রয়েছেন ক্রেতারা।

বুধবার হুগলির হরিপালে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না। তার পরেই ধর্মঘট তুলে নেওয়ার কথা জানান ব্যবসায়ীরা। রাজ্যের সীমান্তগুলিতে পুলিশি জুলুমের অভিযোগ তুলে গত সোমবার থেকে কর্মবিরতি শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। এ জন্য হিমঘর থেকে আলু বেরোনো প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। আড়তগুলিতেও আলুর জোগান কমে যায়। প্রভাব পড়ে বাজারে। বুধবার রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে চন্দ্রমুখী আলু বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। জ্যোতি আলু বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। মনে করা হচ্ছে, এ বার নিয়ন্ত্রণে আসবে আলুর দাম। বাজারে জোগান পর্যাপ্ত রেখে আলুর দাম কমাতে চেয়ে আপাতত বাইরের রাজ্যে আলু রফতানিতে লাগাম টানার কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির তরফে দাবি করা হয়েছে, ভিন্‌রাজ্যে অতিরিক্ত আলু পাঠাতে না দিলে লোকসান হবে ব্যবসায়ীদের।

হাওড়ায় ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে টাস্ক ফোর্সের নজরদারি নেই। দোকান এবং বাজারে আলুর দাম কিলোপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। হাওড়া পাইকারি বাজারে বস্তাপিছু আলুর দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। তবে সব্জির দাম কিছুটা কমেছে।

নদিয়া এবং মু্র্শিদাবাদে ধর্মঘট প্রত্যাহারের পরেও বাজারে আগের মতোই চন্দ্রমুখী ও জ্যোতি আলু চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ। পাইকারি বাজারেও দাম সে ভাবে পরিবর্তিত হয়নি। ব্যবসায়ীদের দাবি, ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হলেও স্বাভাবিক হয়নি জোগান। চাহিদার তুলনায় আলুর জোগান কম থাকায় দামের হেরফের হয়নি। বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের বহরমপুর শহরের স্বর্ণময়ী এবং কোর্ট বাজারে এক কেজি জ্যোতি আলু বিক্রি হয়েছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকায়। জিয়াগঞ্জ, বেলডাঙ্গা, ধুলিয়ান, আমতলা, লালবাগ, ফারাক্কার বাজারে জ্যোতি আলুর দাম ঘোরাফেরা করেছে ৪০ থেকে ৪২ টাকার মধ্যে। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, দাম একই থাকলেও আলুর গুণগত মান অন্য দিনের তুলনায় বেশ খারাপ। সূত্রের খবর, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী নিম্ন মানের আলু চড়া দামে বিক্রির জন্য মজুত করেছিলেন। ধর্মঘট প্রত্যাহার হতেই নিম্ন মানের আলু বিক্রির হিড়িক লেগেছে জেলার বাজারগুলিতে। সামান্য হলেও দাম কমেছে চন্দ্রমুখী আলুর। বুধবারের তুলনায় বৃহস্পতিবার কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা কম দামে মিলছে চন্দ্রমুখী আলু।

বর্ধমান এবং হুগলি সংলগ্ন নদিয়ার বাজারগুলিতে বুধবার রাত থেকেই কোল্ড স্টোরেজের আলু ঢুকতে শুরু করেছে বলে সূত্রের খবর। ক্রেতাদের দাবি, বৃহস্পতিবার সকালে খুচরো বাজারে তার প্রভাব খুব একটা পড়েনি। কৃষ্ণনগরের পাত্র মার্কেট, ঘূর্ণি বাজার, আমিন বাজার, করিমপুর পাটাবুক বাজার, রানাঘাট রেলবাজার, কল্যাণী মার্কেট কমপ্লেক্স— উত্তর থেকে দক্ষিণ— জেলার সব জায়গাতেই জ্যোতি আলু বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছে ৩৭ থেকে ৪০ টাকা দরে। এক কেজি চন্দ্রমুখী আলুর দাম ৪২ থেকে ৪৫ টাকা।

পশ্চিম বর্ধমানের বাজারেও এক কেজি আলু ৪০ টাকা কেজি দরেই বিক্রি হচ্ছে বলে দাবি ক্রেতাদের। তবে একটু ভাল আলু নিতে গেলে তার দাম প্রায় ৪৫ টাকা কেজি। পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এস পোন্নমবলম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ইতিমধ্যে একটি বৈঠক করেছেন। কোল্ড স্টোরেজের মালিকেরা বৃহস্পতিবার আলু সরবরাহ করলে শুক্রবার থেকে দাম কমবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

হুগলিতে বৃহস্পতিবারও বাজারে আলুর জোগান স্বাভাবিক হয়নি বলে অভিযোগ। ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে এক কেজি আলু। বুধবার প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছে। তার পর হিমঘর থেকে আলু বার করা হয়। সেই আলু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিভিন্ন আড়তগুলোতে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে ঝাড়াই-বাছাইয়ের পর সন্ধ্যায় পৌঁছে যাবে বিভিন্ন বাজারে। মনে করা হচ্ছে, শুক্রবার সকাল থেকে স্বাভাবিক হবে আলুর জোগান। তার পর দামও কমতে পারে বলে মনে করছেন আলু ব্যবসায়ীরা। চলতি বছর রাজ্যে ১ কোটি মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছিল। তার মধ্যে ৬৩ লক্ষ মেট্রিক টন আলু এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত হিম ঘরে মজুত করা হয়েছিল।গত মে মাসে হিমঘর খোলা হয়। এখন প্রায় ৪০ লক্ষ মেট্রিক টন মজুত রয়েছে। লালু জানিয়েছেন,প্রতি মাসে রাজ্যের জন্য ৫ লক্ষ মেট্রিক টন আলু খরচ হয়। সেই হিসাব ধরলে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ২৫ লক্ষ মেট্রিক টন আলুর প্রয়োজন। কারণ, তার পর নতুন আলু ঢুকে যাবে বাজারে। প্রায় ৫ লক্ষ মেট্রিক টন আলু বীজ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। তার পরেও ১০ লক্ষ মেট্রিক টন আলু বেশি পড়ে থাকবে। লালুর দাবি, সেই আলু ভিন্‌রাজ্যে বিক্রি না করলে তা ফেলে দিতে হবে। বুধবারের বৈঠকের পর এই অতিরিক্ত আলু ভিন্‌রাজ্যে পাঠানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে লিখিত ভাবে আবেদন করেছেন প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যেরা। লালুর কথায়, বেশির ভাগ ব্যবসায়ী ঋণ নিয়ে আলুর ব্যবসা করেন। লোকসান হলে সকলেই বিপাকে পড়েন।

পূর্ব বর্ধমানে বৃহস্পতিবারও ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে এক কেজি জ্যোতি আলু। চন্দ্রমুখী আলুর দাম আরও বেশি। অন্য দিকে, এই জেলায় বৃহস্পতিবার থেকেই হিমঘরগুলি খুলে গিয়েছে। আগামী দু’-এক দিনে আলুর দাম কমছে কি না, সে দিকেই নজর থাকবে। ক্রেতা স্বপন হাটি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবারও ৪০ টাকা কেজি দরেই তো কিনলাম। কালনা গেট বাজারে টাস্ক ফোর্সকে দেখতে পাইনি।’’

বসিরহাটে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর কয়েক দিন অধিকাংশ বাজারেই নজরদারি চালিয়েছিলেন টাস্ক ফোর্সের আধিকারিকেরা। কিন্তু তার পর আর টাস্ক ফোর্সের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। বসিরহাটের বাজারে এক কেজি চন্দ্রমুখী আলুর দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। জ্যোতি আলুর দাম কোথাও ৩৫ টাকা, তো কোথাও আবার ৪০ টাকা।

ধর্মঘট উঠে গেলেও মেদিনীপুর শহরের বাজারগুলিতে হাতেগোনা কয়েক জন ব্যবসায়ী আলু বিক্রি করেছেন। আলুর জোগান বৃদ্ধি পায়নি। ছোট আলু ৩৫-৪০ টাকা, জ্যোতি আলু ৪০-৪৫ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। হিমঘর থেকে বৃহস্পতিবার আলু বেরিয়ে এলে শুক্রবার থেকে দাম কমতে পারে বলে মনে করছেন খুচরো ব্যবসায়ীরা।

দক্ষিণ দিনাজপুরে আলু-সহ কোনও সব্জির দাম কমেনি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। সুফল বাংলার ভ্রাম্যমাণ স্টল বসিয়ে ক্রেতাদের কাছে কম দামে আনাজ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছে প্রশাসন। কিন্তু জেলার সকলে তার সুবিধা পাননি বলেই দাবি করেছেন ক্রেতাদের বড় অংশ। তাঁদের আরও অভিযোগ, দক্ষিণ দিনাজপুরের কোনও বাজারেই টাস্ক ফোর্সের প্রতিনিধিদের দেখা যায়নি। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর, বালুরঘাট বা বংশীহারের মতো এলাকায় আলুর দাম ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। এক কেজি জ্যোতি আলুর দাম ৪০ টাকার বেশি। এ ছাড়াও স্থানীয় ভাবে যে লাল আলুর উৎপাদন হয়, তার দাম এমনিতে কম থাকলেও এখন ৪০ টাকা ছাড়িয়েছে। আগে আলুর দাম বৃদ্ধি পেলে অভিযোগ উঠত, বাংলাদেশে রফতানি হয়ে যাচ্ছে আলু। কিন্তু গত প্রায় এক বছর দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত দিয়ে আলু রফতানি করা হয় না। তা হলে আলুর দাম কেন দক্ষিণ দিনাজপুরের বাজারগুলোতে বেশি, উঠছে সেই প্রশ্ন।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও কোচবিহারের তুফানগঞ্জ থেকে আলু রফতানি বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ। সীমান্ত দিয়ে চোরাপথে অসমে পাচার হচ্ছে আলু। কোচবিহার জেলা পরিষদের অতিরিক্ত জেলাশাসক সৌমেন দত্ত বলেন, ‘‘বর্তমানে আলুর দাম ৩০ টাকা কেজি রয়েছে। চোরাচালান আটকানোর বিষয়টি পুলিশ দেখবে এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Potato Price Traders Price Hike
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy