আলুর জোগান আরও কমছে। —ফাইল চিত্র।
আলু-পেঁয়াজের দোকানের সামনে গিয়ে থলে হাতে বেশ কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে। কতটা পরিমাণ আলু কিনবেন, তাই নিয়ে মিনিট দুয়েক চিন্তাভাবনা, তার পর দাঁড়িপাল্লার দিকে বেছে নেওয়া আলু এগিয়ে দিচ্ছেন ক্রেতারা। আলু ব্যবসায়ীরা ধর্মঘট শুরু করার পর থেকে রাজ্যের বাজারে বাজারে এই ছবিই দেখা যাচ্ছে। জ্যোতি এবং চন্দ্রমুখী আলুর কেজি এখন যথাক্রমে ৪২ এবং ৫০ টাকা। কোথাও কোথাও দু’-পাঁচ টাকা কম-বেশি। তবে ইতিমধ্যে বাজারগুলিতে ওই আলুর জোগানও কমে গিয়েছে। ফল, আকাশছোঁয়া আলুর দাম এবং জোগানে ঘাটতি। এই পরিস্থিতিতে খুচরো ব্যবসায়ীরা তাকিয়ে রয়েছেন বুধবারের বৈঠকের দিকে। আলু সাধ্যের মধ্যে আসবে কখন? অপেক্ষায় আমজনতা।
বুধবার কোনও বাজারে ৪০, কোথাও ৪৫ টাকা কিলো দরে জ্যোতি আলু বিক্রি হচ্ছে। চন্দ্রমুখী হাফ সেঞ্চুরি পার করেছে। দোকানদারদের মধ্যে যে যেমন পারছেন, দাম নিচ্ছেন। আলুর দাম জিজ্ঞাসা করেই ঢোঁক গিলছেন ক্রেতারা। কয়েক দিন আগেই যে আলু ৩২ টাকা ছিল, সেটাই এখন ৪৫ টাকা কেজি! খুচরো বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, পাইকারি বাজারে আলু নেই। এই অবস্থায় তাঁরা ‘অসহায়’। গত কয়েক দিনে সব্জির দাম কিছুটা কমলেও আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় পকেটে টান গৃহস্থের। তা ছাড়া, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর কয়েক দিন ধরে বাজারে বাজারে যে টাস্ক ফোর্সের অভিযান দেখা যাচ্ছিল, তারও দেখা মিলছে না বলেও দাবি।
রাজ্যের সীমান্তগুলিতে পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে গত সোমবার থেকে কর্মবিরতি শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। এ জন্য হিমঘর থেকে আলু বেরোনো প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আড়তগুলিতেও আলুর জোগান কমছে। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। ধর্মঘটের তৃতীয় দিনে হুগলির চকবাজার, মল্লিক কাশেম হাট, খড়ুয়া বাজার, রবীন্দ্রনগর বাজার, চন্দননগর বৌবাজার, মানকুণ্ডুর স্বপ্নাবাজার— সব সব্জির বাজারে ছবিটা একই।
সিঙ্গুরে কিছু আলুর আড়ত খোলা থাকলেও তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ধর্মঘটের জেরে রাজ্যে বেশির ভাগ হিমঘরগুলির ঝাঁপ বন্ধ। এখন বাজারে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের কিছু আলুর বিক্রি হচ্ছে। সেটাও এক কেজি কিনতে হলে দাম পড়ছে ৩৫ টাকা। বর্ধমান শহরের একটি বাজারে আলু ব্যবসায়ী বিজয় দাসের মন্তব্য, ‘‘ যা অবস্থা, ব্যবসা উঠিয়ে দেওয়ার জোগাড়। প্রতি দিন বাজারে এসে অনেকেই জিজ্ঞাসা করছেন, ‘এত দাম কেন?’ অনেকেই আবার বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বলছেন।’’ ব্যবসায়ীর সংযোজন, ‘‘বলুন তো কোন জিনিসের দাম বাড়েনি? চাষের খরচ বেড়েছে। তাই আলুর দাম তো বাড়বেই। এটা বলতে গেলেই দোষ?’’ বর্ধমান শহর তো বটেই, শহরের বাইরে মেমারি, গুসকরা, রায়না— সব জায়গাতেই আলু এখন মহার্ঘ জিনিস। অরুণ মুখোপাধ্যায় নামে এক হিমঘরের মালিকের মন্তব্য, ‘‘ধর্মঘটের ফলে আমরা আর নতুন করে হিমঘর থেকে আলু বার করছি না।’’ হাওড়ার পাইকারি বাজারে সপ্তাহখানেক আগেও আলু অনেক সস্তা ছিল। এখন বস্তাপিছু সেখানে দেড়শো থেকে দু’শো টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সব্জির দাম কিছুটা কমলেও টাস্ক ফোর্সের নজরদারি চোখে পড়েনি।
মঙ্গলবার আলু ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, ভিন্রাজ্যে আলু পাঠানো যাবে না। সঙ্কট কাটাতে কৃষি বিপণনমন্ত্রী বেচারাম মান্নাকে দায়িত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবারই হুগলির হরিপালে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির বৈঠক রয়েছে। তাঁদের সঙ্গে মন্ত্রীরও বসার কথা রয়েছে। বৈঠকে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের আধিকারিক এবং মন্ত্রীরা উপস্থিত থাকতে পারেন। সেখান থেকে কোনও সমাধান সূত্র বেরোয় কি না, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy