প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।
১২ দিন হাসপাতালে কাটিয়ে অবশেষে বাড়ি ফিরেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বুধবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে পাম অ্যাভিনিউয়ের সরকারি বাসভবনে পৌঁছন তিনি। অ্যাম্বুল্যান্সে তাঁর সঙ্গে ছিলেন চিকিৎসক। বাড়ি ফিরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন বুদ্ধদেব। তাঁর চোখেমুখে ধরা পড়েছে সেই স্বস্তি। যদিও বাড়ি ফিরলেও এখনই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেন না প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে বাড়িতেও এখন কড়া নজরদারিতে রাখা হবে। চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানেই থাকতে হবে। বাড়িতে প্রয়োজন অনুযায়ী চলবে বাইপ্যাপ সাপোর্ট। এখনও বুদ্ধদেবকে মুখ দিয়ে সব খাবার খাওয়ানোর বিষয়ে চিকিৎসকদের সবুজ সঙ্কেত মেলেনি। ফলে রাইলস টিউবেই খাবার খাবেন তিনি। পাশাপাশি নিজের মুখে তরল কিছু খাবারও খেতে পারবেন। বুদ্ধদেবের পরিচর্যার জন্য এক জন নার্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সর্ব ক্ষণ তিনি বুদ্ধদেবকে নজরে রাখবেন। এ ছাড়া, হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে আসবেন। আপাতত মাসখানেক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে রাখা হবে হোম কেয়ার সাপোর্টে।
হাসপাতালে যত দিন সচেতন অবস্থায় ছিলেন, রোজই বাড়ি ফিরতে চাইতেন বুদ্ধদেব। কখনও চিকিৎসকদের কাছে, কখনও ঘনিষ্ঠদের কাছে বাড়ি ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করতেন। হাসপাতালে থাকাকালীন তিনি গান শুনতে চেয়েছিলেন। বাড়ি ফেরার পরও তাই তাঁর জন্য গান শোনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৫৯, পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ির যে ঘরটিতে সাধারণত বুদ্ধদেব থাকেন, হাসপাতাল থেকে ফেরার পরেও সেখানেই রাখা হয়েছে তাঁকে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে আপাতত কয়েক দিন পছন্দের গান শুনে তিনি সময় কাটাবেন।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বুদ্ধদেবের শারীরিক পরিস্থিতি জানিয়ে একটি বুলেটিন প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে জানানো হয়েছে, এই নিয়ে চার বছরে চার বার আলিপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হল বুদ্ধদেবকে। ৭৯ বছর বয়সি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে বাড়িতে যেতে দিলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সর্ব ক্ষণ তাঁর দেখাশোনার বন্দোবস্ত করেছেন। চিকিৎসক এবং নার্সেরা নিয়মিত তাঁর খেয়াল রাখবেন। হাসপাতালের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘যখন ওঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল, তখন ওঁর শ্বাসকষ্ট ছিল। তন্দ্রাভাব ছিল। পরীক্ষার পর অ্যান্টিবায়োটিক, নেবুলাইজেশন থেরাপি দেওয়া হয়। তাঁর চিকিৎসার জন্য ১১ সদস্যের একটি মেডিক্যাল দল তৈরি করা হয়। তাঁদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওঁকে প্রথমে নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন এবং পরে ইনভেসিভ বা ইলেক্টিভ মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। বুদ্ধদেবের ফুসফুসে নিউমোনিয়া সৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়া শনাক্ত করি আমরা। কিন্তু উনি চিকিৎসায় সাড়া দিয়েছেন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওঁকে আবার নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে ফেরানো গিয়েছে। বর্তমানে তাঁর অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স শেষ হয়েছে। শারীরিক পরিস্থিতিও স্থিতিশীল।’’
এক মাস হোম কেয়ারে
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বুদ্ধদেবের শারীরিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত যে বুলেটিন প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আগামী অন্তত এক মাসের জন্য হাসপাতালের হোম কেয়ার টিম বা বাড়ির পরিচর্যাকারী দল বুদ্ধদেবের খেয়াল রাখবে। নার্সেরা ২৪ ঘণ্টা তাঁর বাড়িতেই থাকবেন। এ ছাড়া, চিকিৎসক এবং ফিজিয়োথেরাপি বিশেষজ্ঞ নিয়মিত ৫৯, পাম অ্যাভিনিউতে যাবেন।
বাড়ি ফিরে স্বস্তির বার্তা
হাসপাতালে বুদ্ধদেব কোনও দিনই থাকতে চান না। আগেও যত বার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তিনি বিরোধিতা করেছেন। শরীরে নানা রকম নলের উপস্থিতি, ভেন্টিলেশন ইত্যাদিতে তাঁর ঘোর আপত্তি। ১২ দিন হাসপাতালে কাটিয়ে বাড়ি ফেরার পর তাই স্বস্তি পেয়েছেন বুদ্ধদেব। তা তাঁর চোখেমুখেও ধরা পড়েছে। অ্যাম্বুল্যান্স পাম অ্যাভিনিউতে থামার পর তাঁকে চিকিৎসকেরা জানান, তিনি বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছেন। অ্যাম্বুল্যান্সে শুয়েই তিনি বলেন, ‘‘আচ্ছা।’’ যদিও গাড়ি থেকে নামানোর সময় তাঁর কিছুটা অস্বস্তি হয়েছিল। ঘরে ঢুকে তাঁর চোখেমুখে স্বস্তি ফেরে।
গান শুনবেন বুদ্ধদেব
হাসপাতালে থাকতে গান শোনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন বুদ্ধদেব। বাড়িতে ফেরার পর তাই তাঁর জন্য গান শোনার যাবতীয় বন্দোবস্ত করা হয়েছে। বিছানায় শুয়ে পছন্দের গান শুনে সময় কাটবে তাঁর।
থাকছে কার্ডিয়াক মনিটর
বাড়িতে প্রয়োজন মতো বুদ্ধদেবকে বাইপ্যাপ সাপোর্টে রাখা হবে। তাঁর জন্য নতুন বাইপ্যাপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এত দিন তাঁর বাড়িতে যে বাইপ্যাপটি ছিল, তা প্রায় সাড়ে তিন বছরের পুরনো। এ ছাড়া থাকছে একটি ‘কার্ডিয়াক মনিটর’। যার মাধ্যমে অক্সিজেনের মাত্রা (স্যাচুরেশন), রক্তচাপ, হৃদ্স্পন্দন দেখা যাবে। যাতে ঠিক ভাবে বুদ্ধদেবের শারীরিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখা যায় এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করা যায়, তাই এই ব্যবস্থা। এ ছাড়া জীবাণুমুক্তকরণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
ফেরার প্রস্তুতি
বুদ্ধদেবকে বুধবার হাসপাতাল থেকে ছাড়ার কথা গত সোমবারই জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। মেডিক্যাল বোর্ড তাঁর ছুটির সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর শুরু হয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে বাড়ি ফেরানোর প্রস্তুতি। তিনি ফেরার এক দিন আগে, অর্থাৎ, মঙ্গলবারই পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে গিয়েছিল চিকিৎসকদের একটি দল। অসুস্থ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বিছানা কোথায় থাকবে, কোন জায়গায় চিকিৎসার নানাবিধ সরঞ্জাম রাখতে সুবিধা হবে, সব দেখে আসা হয়েছে সে দিনই।
চিকিৎসকদের ‘যুদ্ধজয়’
বুদ্ধদেবকে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরিয়ে একরকম ‘যুদ্ধজয়’ করেছেন চিকিৎসকেরা। তেমন অনুভূতির কথা স্বীকারও করেছেন। বুদ্ধদেবকে বাড়ি ফেরানোর সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন চিকিৎসক সপ্তর্ষি বসু এবং কৌশিক চক্রবর্তী। সপ্তর্ষির কথায়, ‘‘বুদ্ধদেবকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় উৎকণ্ঠা ছিল। ওঁর শরীর দুর্বল ছিল। মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় শীঘ্রই। এটা একটা লড়াই ছিল। ওঁর সঙ্গে চিকিৎসকেরাও লড়াই করছিলেন।’’ চিকিৎসক কৌশিকের কথায়, ‘‘এর আগেও বুদ্ধদেবকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। তবে নিউমোনিয়ার কারণে এ বারের লড়াই অনেক কঠিন ছিল। ওঁর শরীর চিকিৎসায় ঠিকঠাক সাড়া দিয়েছে।’’
কী বললেন স্ত্রী মীরা
বুদ্ধদেবকে হাসপাতাল থেকে আনতে বুধবার সকাল সকাল আলিপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য। তার আগে সাংবাদিকদের তিনি জানান, বাড়ি ফিরলেও বুদ্ধদেবকে থাকতে হবে কড়া নজরদারিতে। বাড়িতেও তিনি যেন সুস্থ থাকেন, সেই প্রার্থনা করতে অনুরোধ করেছেন সকলকে। পাশাপাশি, হাসপাতালে থাকাকালীন সকলে যে ভাবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর খোঁজখবর নিয়েছেন, তার জন্যও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। সকাল ১১টা নাগাদ মীরা হাসপাতালে পৌঁছন। যে অ্যাম্বুল্যান্সে করে বুদ্ধদেবকে আনা হয়েছিল, মীরা তাতে ছিলেন না। তিনি পিছনের গাড়িতে বাড়ি গিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy