হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। ছবি: সারমিন বেগম।
ভর্তির বারো দিনের মাথায় হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হল রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। স্ট্রেচারে করে এনে তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হয়। সঙ্গে ছিলেন চিকিৎসক এবং স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য। বুদ্ধদেব হাসপাতাল থেকে বেরোনোর সময় দেখা যায়, তাঁর দাড়ি-গোঁফ পরিষ্কার করে কামানো। মুখে সার্জিক্যাল মাস্ক। পাশে রাইলস টিউব। হাত ধরে রেখেছেন এক জন চিকিৎসক। অতি সন্তপর্ণে তাঁকে ধরে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হয়। ১২টা ১৫ মিনিট নাগাদ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে তাঁর বাড়ি পৌঁছয় অ্যাম্বুল্যান্সটি।
আপাতত কড়া নজরদারিতেই থাকতে হবে বুদ্ধকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, বাড়ি যাওয়ার পথেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বুদ্ধদেব যখন বাড়ি পৌঁছবেন, তখনও এক জন চিকিৎসক তাঁর বাড়িতে উপস্থিত থাকবেন। বাড়ি ফেরার পথে তাঁকে বাইপ্যাপ সাপোর্ট দেওয়া না হলেও রাতে আবার বাইপ্যাপে থাকবেন তিনি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পরিচর্যার জন্য এক জন নার্স সব সময় তাঁর বাড়িতে থাকবেন। হাসপাতালের চিকিৎসকরা নিয়মিত তাঁর বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে আসবেন। আপাতত এক মাস বুদ্ধদেব হোম কেয়ার সাপোর্টে থাকবেন বলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
বুদ্ধদেবকে হাসপাতাল থেকে ছাড়ার আগে একটি বিবৃতিকে বলা হয়, ‘‘যখন ওঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল, তখন ওঁর শ্বাসকষ্ট ছিল। তন্দ্রাভাব ছিল। পরীক্ষার পর অ্যান্টিবায়োটিক, নেবুলাইজেশন থেরাপি দেওয়া হয়। তাঁর চিকিৎসার জন্য ১১ সদস্যের একটি মেডিক্যাল দল তৈরি করা হয়। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন ওঁকে নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে রাখার। বুদ্ধদেবের ফুসফুসে নিউমোনিয়া সৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়া শনাক্ত করি আমরা। এর পর অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপির বদলও হয়।’’
আরও বলা হয়, ‘‘বিভিন্ন পরীক্ষার পর তাঁর কিছু ওষুধের পরিবর্তন করা হয়। উনি চিকিৎসায় সাড়া দেন। এর পর ৩১ জুলাই তাঁকে মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটর থেকে বার করতে সফল হই। পরে তিনি ছিলেন নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে। রাইলস টিউবে খাওয়ানো অব্যাহত থাকে। এর পর অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপির বদলও হয়। এর পরেই ওঁর সংক্রমণ কমতে থাকে।’’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেন, ‘‘ শনিবার বুদ্ধদেবের অ্যান্টি বায়োটিকের কোর্স শেষ হয়। নন-ইনভেসিভ সাপোর্টের সময়সীমা কমিয়ে আনা হয়। সার্বিক ভাবে ওঁর স্বাস্থ্যের অনেকটা উন্নতি হয়। উনি ডাক্তার, ভিজিটরদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। গানও শুনছিলেন। উনি বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। অন্তত এক মাসের জন্য আমাদের হাসপাতাল থেকে ওঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। অর্থাৎ, আমাদের নার্স ওখানে (বাড়িতে) থাকবেন। প্রতিদিন চিকিৎসকেরা যাবেন। ওঁর দীর্ঘ এবং সুস্থ জীবন কামনা করছি।’’ বুদ্ধদেবকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত একটি মেডিক্যাল বুলেটিনে এই কথা জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বুধবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার জন্য বাড়ি থেকে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হওয়ার সময় তাঁর স্ত্রী মীরা জানান, বুদ্ধদেব বাড়ি ফিরলেও তাঁকে কড়া নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। বুদ্ধদেব যেন সুস্থ থাকেন, সেই জন্য সকলকে আন্তরিক ভাবে প্রার্থনা করার অনুরোধও তিনি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আপনারা আন্তরিক ভাবে প্রার্থনা করুন। শুভেচ্ছা জানান। উনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। বাড়িতেও যেন সুস্থ হয়ে থাকতে পারেন। ওঁকে কড়া নজরদারিতে রাখতে হবে।’’ যে ভাবে সবাই বুদ্ধদেবের খোঁজ নিয়েছেন এবং পাশে থেকেছেন, তার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মীরা।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বেলার দিকে চিকিৎসকের একটি দল বুদ্ধদেবের বাড়িতে গিয়েছিলেন। অসুস্থ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বিছানা কোথায় থাকবে, কোন জায়গায় রাখলে চিকিৎসার নানাবিধ সরঞ্জাম রাখতে সুবিধা হবে, সব দেখে আসা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy