নিয়োগ মামলায় ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র (বাঁ দিকে), তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। — ফাইল ছবি।
নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র বাড়িতে অতীতে এসেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনই দাবি করেছেন ধৃত সুজয়ের দাদা অজয়কৃষ্ণ ভদ্র। এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরও জানিয়েছেন, তাঁদের পরিবার বরাবরই আরএসএস ঘনিষ্ঠ। সুজয় পরে তৃণমূলে যোগ দেন। যদিও সুজয়ের স্ত্রীর বীণা ভদ্রের দাবি, স্বামীর গ্রেফতারির পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।
নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়া সুজয়কৃষ্ণ কাজ করতেন অভিষেকের একটি অফিসে। এমনটা দাবি করেছেন ‘কালীঘাটের কাকু’ নিজেই। কিন্তু এর চেয়ে বেশি কিছু তথ্য প্রকাশ্যে নেই। ভাইয়ের গ্রেফতারি সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে অজয় জানিয়েছেন, ভাই সুজয়কৃষ্ণের বাড়িতে কয়েক বার এসেছিলেন অভিষেক। সেখানেই সুজয় দাদা অজয়ের সঙ্গে অভিষেকের পরিচয়ও করিয়ে দেন। অজয় বলেন, ‘‘যত দূর জানি, ও (সুজয়কৃষ্ণ) অভিষেকের ওখানে চাকরি করত। কোথায় অফিস, কী অফিস কিছুই জানি না, খালি কানে শোনা। দু’এক বার অভিষেক ওর বাড়িতে এসেছিল। তখন চোখে দেখেছি। পরিচয় করিয়ে বলেছিল, এটা আমার দাদা। আর কোনও রকম কথা হয়নি।’’
সুজয়কৃষ্ণকে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে একবাক্যে জবাব দিতেন, তিনি তৃণমূল করেন। গ্রেফতার হওয়ার পরে অবশ্য তাঁর দাদার মুখে শোনা গেল অন্য কথা। অজয়ের দাবি, তাঁরা পারিবারিক ভাবে আরএসএসের আদর্শের কাছাকাছি। তাঁর আরও দাবি, তাঁদের পরিবার বেশ কয়েক প্রজন্ম ধরে আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত। সুজয়, অজয়ের বড় দাদা অমরকৃষ্ণ এখনও সক্রিয় ভাবে আরএসএস করেন। তবে অজয়কৃষ্ণ মেনে নিয়েছেন, আগে আরএসএস করলেও পরবর্তী কালে ভাই সুজয়কৃষ্ণ তৃণমূলই করতেন।
আগে যা ঘটেছে
রাজ্যে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে সিবিআই গ্রেফতার করে বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ সংগঠনের নেতা তাপস মণ্ডলকে। তাঁর মুখেই প্রথম ‘কালীঘাটের কাকু’র কথা শোনা যায়। নিয়োগে দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্তে নাম এসেছে গোপাল দলপতির। তাঁর মুখেও ‘কাকু’র নাম শোনা গিয়েছিল। এর পরেই গোয়েন্দাদের আতশকাচের তলায় আসেন সুজয়।
সিবিআই সুজয়কে দু’বার তলব করে। প্রথম বার সিবিআই দফতরে গিয়ে হাজিরা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরের বার নিজের আইনজীবীকে দিয়ে নথিপত্র পাঠিয়েছিলেন। সেই সময় সুজয় জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার পক্ষে তাঁর কাছে কিছু নথি চাওয়া হয়েছিল। সেগুলি তিনি আইনজীবী মারফত পাঠিয়েও দিয়েছেন সিবিআই দফতরে। একই সঙ্গে সুজয় দাবি করেছিলেন, তাঁর স্ত্রী-কন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথিও তিনি পাঠিয়েছেন আইনজীবীর মাধ্যমে।
গত ২০ মে সুজয়ের বেহালার ফকিরপাড়া রোডের ফ্ল্যাট, বাড়ি, অফিস-সহ বহু জায়গায় তল্লাশি চালায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ওই দিনই নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। সুজয় এক সময় অভিষেকের অফিসে কাজ করতেন। ‘কাকু’র সঙ্গে সংযোগ রয়েছে এমন ৩টি সংস্থাতেও তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। সেই সংস্থার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই ৩টি সংস্থার মধ্যে একটি সংস্থা বিশেষ করে নজরে রয়েছে তদন্তকারীদের। সেই সংস্থা ‘কালীঘাটের কাকু’ নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে তদন্তকারীদের ধারণা। ওই সংস্থাগুলির ডিরেক্টর এবং অ্যাকাউন্ট্যান্টদের তলব করা হয় আগেই। এর পরেই মঙ্গলবার (৩০ মে) তলব করা হয় সুজয়কে। নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা সংস্থার কাছ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা মূল্যের জমিতে বিনিয়োগ করেছিলেন কাকু। এ ছাড়াও নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে উঠে আসা বেশ কিছু তথ্য নিয়ে সুজয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে ইডি সূত্রে খবর। তার আগে, গত ৪ মে সুজয়ের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়েছিল সিবিআই। সেই তল্লাশি অভিযানে সুজয়ের বাড়ি থেকে কয়েক লক্ষ নগদ টাকা বাজেয়াপ্ত করে সিবিআই। তিনি অবশ্য দাবি করেছিলেন, তাঁর বোন হাসপাতালে ভর্তি। চিকিৎসার বিল মেটানোর জন্য ওই অর্থ তুলেছিলেন। পাওয়া গিয়েছিল একটি অ্যাডমিট কার্ডও। সুজয় দাবি করেছিলেন, সেটা পুরসভায় চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তাঁর শ্যালিকার পুত্রের অ্যাডমিট কার্ড। সুজয়ের একটি ফোনও বাজেয়াপ্ত করা হয়।
নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত তাপস সিবিআইয়ের কাছে দাবি করেছিলেন, অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কুন্তল বলতেন, ‘‘কালীঘাটের কাকুর সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে। চিন্তার কোনও কারণ নেই।’’ ইডি সূত্রে খবর, পরে গোপাল আর তাপসকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, কুন্তলের ওই ‘কালীঘাটের কাকু’ রাজ্যের এক প্রভাবশালী শীর্ষনেতার সংস্থার চিফ এগ্জ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও)। তার পর থেকেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আতশকাচের তলায় সুজয়। যদিও কুন্তল দাবি করেছিলেন, তিনি ওই ‘কাকু’কে চেনেন না। কুন্তল এ-ও দাবি করেন, যে সুজয়কে নিয়ে আলোচনা চলছে, তিনি ‘কালীঘাটের কাকু’ নন। সুজয় নিজে দাবি করেছিলেন, কেন তাঁকে ‘কালীঘাটের কাকু’ বলা হচ্ছে, তা তাঁর কাছে স্পষ্ট নয়। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তাঁর কাছে কোনও টাকা জমা পড়েনি বলেও দাবি করেন সুজয়। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার কর্মস্থল নিউ আলিপুর। ‘কালীঘাটের কাকু’ কথাটা কোথা থেকে এল, আমার পক্ষে সেটা বলা সম্ভব নয়। যাঁরা এটা বলছেন, তাঁরাই এর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।’’
মঙ্গলবার একটানা ১১ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর ইডি গ্রেফতার করে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’-কে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy