খসড়া দলিলে ব্যাখ্যা লিখল সিপিএম। ছবি: সংগৃহীত।
আট মাস আগে লোকসভা ভোটের যে পর্যালোচনা করেছিল সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি, তাতে উল্লেখ ছিল, বাংলার মানুষ বিজেপি-কে রুখে দিতে পেরেছেন। তাতে ঠারেঠোরে বিজেপি-বিরোধী শক্তি হিসাবে তৃণমূলকেই ‘স্বীকৃতি’ দিয়েছিল সিপিএম। কিন্তু এপ্রিলে অনুষ্ঠিতব্য পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক খসড়ায় সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটি ভিন্ন কথা লিখল। যাতে প্রতিফলিত হয়েছে আলিমুদ্দিনের ‘লাইন’।
খসড়ার ৩৭ নম্বর পৃষ্ঠায় তৃণমূল সম্পর্কে পৃথক একটি অনুচ্ছেদ রেখেছে সিপিএম। তাতে লেখা হয়েছে, ‘দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন এবং রাজনীতির মিশেলে বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস একটি স্বৈরাচারী দল। যারা কমিউনিস্টদের বিরোধী।’ তার পরেই লেখা হয়েছে, ‘সিপিএম তথা বামেদের অপ্রাসঙ্গিক করে রাখতেই বিজেপিকে নির্বাচনে পরাস্ত করে তৃণমূল দ্বিমেরুকরণ বজায় রাখতে চায়।’ অর্থাৎ, তৃণমূল আসলে বিজেপির বিরোধিতা করে সিপিএম-সহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলিকে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ করে রাখতে। কোনও রাজনৈতিক বা আদর্শগত কারণে নয়। সেই কারণেই তারা ভোটে বিজেপির বিরোধিতা করে।
তিন বছর আগের পার্টি কংগ্রেসের খসড়ায় তৃণমূল সম্পর্কে যা লেখা হয়েছিল, এ বার তার সঙ্গে গুণগত কিছু ফারাক রয়েছে। ২০২২ সালের কুন্নুর পার্টি কংগ্রেসের আগে সিপিএম খসড়ায় লিখেছিল, ‘তৃণমূল এক সময়ে বিজেপির সঙ্গী ছিল। কিন্তু এখন তারা বিজেপির বিরোধিতায় সরব। জাতীয় স্তরেও বিজেপি-বিরোধী পরিসরে নেতৃত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার বিষয়ে উচ্চাকাঙ্খী।’ উল্লেখ্য, এই তিন বছরের মধ্যে লোকসভা ভোট হয়ে গিয়েছে। সর্বভারতীয় স্তরে তৃণমূলের শক্তিও বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সময়ে বাংলার শাসকদলকে বিজেপি-বিরোধী বলেও ঠারেঠোরে ‘বোঝাপড়ার’ কথাই বলতে চাইল সিপিএম। তৃণমূল অবশ্য এ সবে আমল দিতে চায়নি। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘গোটা দেশ জানে বাংলায় বিজেপিকে রুখে দেওয়ার নেত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে সিপিএম তাদের তত্ত্ব আউড়ে যাক। বাংলার মানুষের কিছু যায় আসে না। ওরা বার বার শূন্যই হবে।’’
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার উপর আক্রমণ, রাজনৈতিক ভাবে বিরোধী দল শাসিত রাজ্যে রাজ্যপালদের ব্যবহার করা, অনৈতিক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ, অর্থনৈতিক অবরোধ তৈরি করা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ব্যবহার— তৃণমূল যা যা নিয়ে বিজেপি তথা কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে বিদ্ধ করে, সেই সব বিষয় অবিকল ঠাঁই পেয়েছে সিপিএমের খসড়ায়। যা নিয়ে সিপিএমের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘মমতা যখন বামেদের বিরোধিতা করতেন, তখন এই সব বিষয়ে তাঁর যা অবস্থান ছিল, এখন তা বদলে গিয়েছে। রাজনৈতক ভাবে আমরা অবস্থান বদল করিনি।
কংগ্রেস সম্পর্কে নরম-গরম
তিন বছর আগে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসের খসড়ায় কংগ্রেসের ক্ষয় নিয়ে বিস্তারিত লেখা ছিল। তবে এ বার সিপিএম স্বীকার করেছে, লোকসভা নির্বাচনের ফলে দেখা যাচ্ছে (সারা দেশে) কংগ্রেসের বৃদ্ধি হয়েছে। তবে কংগ্রেসের সেই জয়ের নেপথ্যে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিকদলগুলিরও যেভূমিকা রয়েছে, তা-ও উল্লেখ করা হয়েছে। কংগ্রেসকে বিরোধী পরিসরের ‘বৃহত্তম ধর্মনিরপেক্ষ দল’ বলে উল্লেখ করলেও সিপিএমের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, কংগ্রেসের অনেকেই বিজেপি-আরএসএসের হিন্দুত্বের রাজনীতির বিরুদ্ধে ‘আপসকামী’। কংগ্রেসের অর্থনৈতিক নীতির সঙ্গে বিজেপির আর্থিক নীতির কোনও মৌলিক ফারাক নেই বলেও লেখা হয়েছে খসড়ায়। তবে সিপিএম যে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও ‘রাজনৈতিক জোট’ করবে না, তা-ও উল্লেখ করা হয়েছে খসড়ায়।
স্বাধীন শক্তিতে দুর্বলতা
গত কয়েক বছর ধরে সিপিএম যে তাদের ‘স্বাধীন শক্তি’ বৃদ্ধি করতে পারেনি, তা নিয়ে খসড়ার ছত্রে ছত্রে উদ্বেগ প্রকাশিত হয়েছে। এই মুহূর্তে কেবল সিপিএম সরকারে রয়েছে। কেরলের রেওয়াজ পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদল হয়। ২০২১ সালে নজির গড়ে দ্বিতীয় বার কেরলের সরকার গড়েছিল বামেরা। আগামী বছর সেখানে সরকার ধরে রাখা যাবে কি না, তা নিয়ে একান্ত আলোচনায় দুশ্চিন্তা গোপন করেন না সিপিএম নেতারা। আশঙ্কা সত্যি হলে পাঁচ দশকের মধ্যে প্রথম এমন হবে যে, বামেরা কোনও রাজ্যেই ক্ষমতায় নেই। সে সব মনে করেই স্বাধীন শক্তি বৃদ্ধিতে দুর্বলতার কথা বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে খসড়ায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy