মহম্মদ শামি। ছবি: পিটিআই।
পঞ্চম স্টাম্পের লাইনে গুড লেংথে পড়া বলটা আউট সুইং হয়ে চলে গেল সঞ্জু স্যামসনের কাছে। গতি ১৩২ কিলোমিটারের কাছাকাছি থাকায় বল সঞ্জুর কাছে যাওয়ার আগেই মাটিতে পড়ে যায়। ফিল সল্ট বলের লাইনে ব্যাট নিয়ে গিয়েও সরিয়ে নিলেন। ৪৩৭ দিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা মহম্মদ শামির প্রথম বল। তাঁর ফিটনেস নিয়ে লক্ষ লক্ষ ক্রিকেটপ্রেমীর উদ্বেগের অবসানও।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) চিকিৎসকেরা বাংলার বোলারকে ফিরিয়ে দিয়েছেন চেনা ছন্দে। বলের সিম আগের মতোই সোজা থাকছে। সুইংও হচ্ছে আগের মতো। সঠিক লেংথে পড়ে ছুটে যাচ্ছে ব্যাটারের দিকে। বলের গতি বাড়তে বাড়তে দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে ১৩৯ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় পৌঁছল। তার আগে ওভারের প্রথম বলটাই জস বাটলারের ব্যাটের প্রায় কোণ ছুঁয়ে চলে গিয়েছিল সঞ্জুর কাছে। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক কি আউট ছিলেন? সঞ্জু বল ধরেও মাটিতে ফেলে দেন। ভারতের উইকেটরক্ষক নিজের কাজটা ঠিক মতো করতে পারলেও শামি হয়তো উইকেট পেতেন না। সূর্যকুমার যাদব উৎসাহে এগিয়ে এসেছিলেন ডিআরএস নেবেন বলে। তিনি লক্ষ্য করেননি সঞ্জু বল মাটিতে দিয়েছেন। শামিও বিশেষ আগ্রহ দেখাননি। কারণ বলের লাইন ব্যাটে লেগে পরিবর্তন করেনি। বলটা একটু দেরিতে সুইং করেছিল। উইকেট না এলেও শামির মুখে ফুটে ওঠে তৃপ্তির ছাপ।
২০২৩ সালে এক দিনের বিশ্বকাপ ফাইনালের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেননি শামি। মাঝের ১৪ মাসে গোড়ালির চোট সারাতে অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। সুস্থ হওয়ার পর ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরেছিলেন গত নভেম্বরে। বাংলার হয়ে খেলতে নেমে আর এক বিপত্তি হয়। বাঁ পায়ের হাঁটু ফুলে যায়। অস্ট্রেলিয়ার বদলে আবার বেঙ্গালুরুর বিমান ধরতে হয় শামিকে। খেলা হয়নি বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি। তৈরি হয় শামির দেশের জার্সিতে মাঠে ফেরা নিয়ে নতুন জল্পনা। শামি কিন্তু দ্বিধায় ছিলেন না। বরং বোর্ডের চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে ফিটনেস ট্রেনিং করে গিয়েছেন। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির কোচদের কথা মতো অনুশীলন চালিয়ে গিয়েছেন। শুধুই কি তাই? না। ওজন কমাতে শেষ দু’মাস প্রিয় বিরিয়ানি মুখে তোলেননি। বদলে ফেলেছেন খাদ্যাভাস। একসঙ্গে মিটিয়েছেন প্রাতরাশ এবং মধ্যাহ্নভোজের খিদে। তা-ও শুধু ফল দিয়ে। নৈশভোজ সেরেছেন দুটো রুটি দিয়ে। সঙ্গে পরিমিত সব্জি এবং মুরগির মাংস। তা-ও সিদ্ধ।
সংযম। অথচ শামি কোনও দিন ‘ফিটনেস ফ্রিক’ হিসাবে পরিচিত নন। মনের আনন্দে বল করেন। মনের আনন্দে খাসির মাংস, কবাবও খান। ক্যালোরি মেপে চলা তাঁর অভিধানে ছিল না কখনও। তাঁর খাদ্যতালিকায় বিধিনিষেধের প্রবেশ নিষেধ। সেই শামিই দিনের পর দিন ফল, দই খেয়ে খিদে মিটিয়েছেন। বিরিয়ানির দিকে ফিরেও তাকাননি। অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছেন চিকিৎসক, ট্রেনারদের নির্দেশ। এই সবই করেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার জন্য। শামিকে দেখে বোঝা যাচ্ছে ওজন কমিয়েছেন বেশ খানিকটা। কয়েক দিন আগে অর্শদীপ সিংহ বলেছিলেন, নেটে শামিকে দেখে ২২ বছরের যুবক লাগছে। খুব ভুল বলেননি সর্দার। নতুন শামি বেশ ছিপছিপে।
বোলার শামির ক্রিকেটীয় দক্ষতা নিয়ে কখনও প্রশ্ন বা সংশয় ছিল না। উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল তাঁর ফিটনেস নিয়ে। মঙ্গলবার শামির তার উত্তরও দিয়েদিলেন। সূর্যকুমার এ দিন শামিকে মোট তিন ওভার বল দেন। উইকেট পাননি। দিয়েছেন ২৫ রান। রাজকোটের ২২ গজ, মাঠ এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের নিরিখে খারাপ বলা যায় না। ১৪ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নামা শামিকে হয়ত খুব বিপজ্জনক দেখায়নি। তবে তাঁর বলের শৃঙ্খলা আগের মতোই রয়েছে। ১৮টি বলের ১৫টিই গুড লেংথে রেখেছেন। গতির হেরফের করেছেন অনায়াসে। একটা ২০ ওভারের ক্রিকেটে ৩ ওভার দেখে বিচার করা যায় না। উচিতও নয়। বল তাঁর কথা শুনছে আগের মতো। গতিও খারাপ নয়। বিপজ্জনক না হলেও প্রত্যাবর্তনের ছিপছিপে শামি সংযম এবং সাধনার ফসল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy