Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
West Bengal

Mamata Banerjee: মমতার পুরস্কার: ব্যথিত ব্রাত্য বলছেন, বাঙালিদের একটা অংশই এমন করতে পারে!

বাংলা আকাদেমির তরফে এ দিন বলা হয়েছে, তাঁদের সব পুরস্কারই আলাদা-আলাদা জুরি বোর্ড (বিচারক মণ্ডলী) ঠিক করে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-ব্রাত্য বসু।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-ব্রাত্য বসু। ফাইল চিত্র ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২২ ১০:২৯
Share: Save:

বাংলা আকাদেমির সভাপতি তথা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ব্যথিত। বলছেন, “একমাত্র বাঙালিদের একটা অংশই এমন পারে! বলতে ইচ্ছে করছে, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি। অ-বাঙালিরা এমন করতেন না!”

বাংলা আকাদেমির অন্যতম সদস্য সুবোধ সরকারের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রদত্ত এই পুরস্কার আসলে ম্যাগসাইসাইয়ের মতো। তাঁর কথায়, “এটি ত্রিবার্ষিক সম্মাননা, যা পাবেন এমন এক জন সাহিত্যিক, যিনি সামগ্রিক সমাজকল্যাণে ও পরিবর্তনে ভূমিকা নিয়েছেন। ১১৩টি গ্রন্থের লেখক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম সবার আগে উঠে এসেছে বিচারকমণ্ডলীর কাছে। এটা অনেকটা ম্যাগসাইসাইয়ের মতো। যাঁরা সারা বছর কুৎসা করেন, তাঁরাই ‘মিম’ বানাচ্ছেন। ‘থ্রেট’ দিচ্ছেন।”

‘অবাধ্য’ সমাজমাধ্যমে তবু ‘কবি’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই স্বীকৃতি ‘পুরস্কার প্রহসন’ বলে দাগিয়ে নিন্দার ঝড় বইছে। তাতে গলা মিলিয়েছেন দিল্লিবাসী ‘নির্বাসিতা’ সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘খুনী, ডাকাত, চোর, বদমাশ নির্লজ্জ হলে মানায়। যখন শিল্প-সাহিত্যের জগতের লোকেরা নির্লজ্জ হয়, তখন সেই সমাজ নিয়ে সামান্যও আশা করার কিছু থাকে না। ভাল যে, ওই শহরে (কলকাতা) আমি আর বাস করি না৷ বাস করলে, হতাশার অতল গহ্বরে আমাকেও তলিয়ে যেতে হতো।’
সাহিত্য একাডেমির বাংলা ভাষা বিষয়ক উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য অনাদিরঞ্জন বিশ্বাস আবার পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির এই কাণ্ডে পদত্যাগ করেছেন। সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুরস্কার দেওয়ার কথা চিঠিতে না-লিখলেও, তাঁর বক্তব্য, “রবীন্দ্রজয়ন্তীতে কলকাতায় বাংলা কবিতা আক্রান্ত!” কলকাতায় সমকালীন বাংলা সাহিত্য জগতে পক্ষপাতিত্ব, যথেচ্ছাচারের রাজত্ব দেখে তিনি সাহিত্য একাডেমির কলকাতা অফিসের সংস্রব ছাড়তে চেয়েছেন।

বর্ধমানের বাসিন্দা গল্পকার ও লোক-সংস্কৃতি গবেষক রত্না রশিদ বন্দ্যোপাধ্যায়ও ঘোষণা করেছেন, কয়েক বছর আগে বাংলা আকাদেমি থেকে প্রাপ্ত ‘অন্নদাশঙ্কর রায় স্মারক সম্মান’ তিনি ফিরিয়ে দেবেন। তাঁর কথায়, ‘‘তোল্লাই দেওয়ার একটা সীমা থাকা দরকার। উনি (মুখ্যমন্ত্রী) ভাল প্রশাসক হতে পারেন, কিন্তু এই সম্মানের যোগ্য নন। আবারও বলছি, এই সম্মান নেওয়া তাঁর উচিত হয়নি।’’ রত্নার পুরস্কার ফেরানো নিয়ে সুবোধ বলছেন, “এটা ওঁর অভিরুচি!” সরকার ঘনিষ্ঠ এক মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, রত্না পুরস্কারের টাকা নিয়ে কী করবেন! তিনি জানিয়েছেন, পুরস্কার বাবদ প্রাপ্ত ১০ হাজার টাকাও ফিরিয়ে দিচ্ছেন।

বাংলা আকাদেমি সূত্রের খবর, মমতাকে প্রদত্ত পুরস্কারটি এক লক্ষ টাকার (রবীন্দ্র পুরস্কারের সমমূল্যের)। সরকার ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী এই টাকা নিচ্ছেন না। বাংলা আকাদেমির তরফে এ দিন বলা হয়েছে, তাঁদের সব পুরস্কারই আলাদা-আলাদা জুরি বোর্ড (বিচারক মণ্ডলী) ঠিক করে। বাংলা আকাদেমির ১৩ জন বিশিষ্ট সদস্যের কয়েক জন করে এক-একটি পুরস্কারের কমিটিতে থাকেন। এই সদস্যদের মধ্যে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী, আবুল বাশার, সুবোধ সরকার, শ্রীজাত, প্রচেত গুপ্ত, অভীক মজুমদার, অর্পিতা ঘোষ, প্রসূন ভৌমিক, প্রকাশক গিল্ডের কর্তা সুধাংশুশেখর দে, ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ আছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে দরকার মতো পণ্ডিত গুণিজনেরও সাহায্য নেওয়া হয়। এ মাসেই বঙ্কিম পুরস্কার, বিভূতিভূষণ পুরস্কারও বাংলা আকাদেমি দেবে।

সমাজমাধ্যমে সারা ক্ষণ মমতার লেখা ছড়া চর্চা নিয়ে বিরক্ত সুবোধ। বলছেন, পুরস্কার তো ছড়ার বই পায়নি! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা নিয়ে কেউ কিছু বলছেন না। সমাজমাধ্যমেই বাংলা কবিতা বা সাহিত্য অনুরাগীদের প্রশ্ন, তাহলে এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা নিয়েও আলোচনা করুন, আকাদেমির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কবিরা। সুবোধ বলছেন, “তা হতেই পারে! কিন্তু মনে রাখতে হবে, মুখ্যমন্ত্রীর এই স্বীকৃতি শুধু কবিতার জন্য নয়!” বাংলা আকাদেমির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ বলছেন, অটলবিহারী বাজপেয়ী পুরস্কার পেতে পারেন! উইনস্টন চার্চিল সাহিত্যে নোবেল পান! দোষ হয় মমতা বন্দ্যোধ্যায়ের বেলা।

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Bangla Academy Award Mamata Banerjee Bratya Basu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy