অস্ত্র নিয়ে রামনবমীর মিছিলে। রবিবার চুঁচুড়ায়। ছবি: তাপস ঘোষ
কিছুটা ছেদ পড়েছিল করোনাকালে। ফের রামনবমীতে সশস্ত্র মিছিল হল রাজ্যের নানা প্রান্তে। তাতে শামিল রাজনীতির যুযুধানও। কোথাও অস্ত্র হাতে মিছিলে হাঁটলেন তৃণমূল নেতা, কোথাও বিজেপি বিধায়কের হাতে তরোয়াল।
শনিবার রামনবমীর মিছিলের পুরোভাগেই অস্ত্র হাতে ছিলেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি মনোতোষ ঘোষ। সঙ্গে অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি সঞ্জীব গুপ্ত, দলের ব্লক সভাপতি বিমান ঝাঁ-সহ স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের অনেকেই। তবে হরিশ্চন্দ্রপুরের আইসি সঞ্জয়কুমার দাসের দাবি, মিছিলের ভিডিয়ো করা হয়েছে। অস্ত্র হাতে কাউকে তাঁরা দেখেননি। যদিও মনোতোষ বলছেন, ‘‘মিছিলে অস্ত্র হাতে রাখাটা ধর্মীয় প্রথামাত্র।’’ আর জেলা তৃণমূল সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সি বলেন, ‘‘ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কে, কীভাবে যোগ দেবেন সেটা তাঁর নিজস্ব ব্যাপার।’’ চাঁচলেও কয়েক জনকে অস্ত্র হাতে মিছিলে দেখা গিয়েছে।
বীরভূমের সিউড়ির শুঁড়িপুকুরপাড়ায় শোভাযাত্রায় কিশোর-যুবকদের হাতে ছিল নানা ধরনের অস্ত্র। এই মিছিলের আয়োজক মহাবীর সমিতির সভাপতি হলেন তৃণমূল কাউন্সিলর দেবদাস সাহা। তাঁর দাবি, ‘‘কিছু উৎসাহী ছেলে অস্ত্র বার করেছিল। দেখামাত্র সেগুলি নিয়ে নেওয়া হয়েছে।’’ রবিবার বর্ধমান শহরে রামনবমীর দু’টি মিছিলে অস্ত্র দেখা যায়। পরে পুলিশ বেশ কয়েকটি তরোয়াল, হাঁসুয়া ও ছুরি বাজেয়াপ্ত করে। বিজেপির বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভার আহ্বায়ক কল্লোল নন্দনের অভিযোগ, ‘‘রাজ্য সরকার রামনবমীতে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করা যাবে না বলে হুঙ্কার দিত। অথচ তৃণমূলের ছেলেরাই অস্ত্র নিয়ে মিছিল করল।’’ তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাসের যদিও দাবি, ‘‘আমাদের কেউ অস্ত্র নিয়ে মিছিল করেনি।’’
অস্ত্র দেখা গিয়েছে বিজেপির নেতা-কর্মীদের হাতেও। মেদিনীপুর গ্রামীণের খয়েরুল্লাচকে রামনবমীর উৎসবে শামিল খড়্গপুরের বিজেপি বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায় হাতে তরোয়াল নিয়ে বলেন, ‘‘এই তরোয়াল ধরেছি কাউকে আক্রমণের জন্য নয়। তরোয়াল হিন্দুত্বের প্রতীক। আমাদের মা, বোন সবাইকে রক্ষা করার প্রতীক।’’ এ দিন দুর্গাপুরের মায়াবাজারে রামনবমীর শোভাযাত্রায় লাঠি খেলায় যোগ দেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি সাংসদ দিলীপ ঘোষ। অন্ডালে অন্য এক শোভাযাত্রায় যোগ দিয়ে দিলীপ বলেন, “আমরা রামভক্ত। তাই, রামনবমী আমাদের কাছে সব থেকে বড় উৎসব।” আড়ংঘাটায় বিজেপির কিসান মোর্চার নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা আয়োজিত মিছিলে অস্ত্র ছিল। সংগঠনের জেলা সভাপতি অশোক বিশ্বাস মানছেন, “দেশের বিভিন্ন জায়গায় মতো এখানেও অস্ত্র হাতে নিয়ে শোভাযাত্রা করেছি।”
অস্ত্র দেখা গিয়েছে অন্যত্রও। ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরে বাইক মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের হাতে ছিল অস্ত্র। অস্ত্রের খেলাও দেখানো হয় হাতিবাড়ি চকে। খড়্গপুরে শোভাযাত্রায় কাঠের পাটাতনে প্রদর্শনের জন্য রাখা ছিল অস্ত্র। হুগলির চুঁচুড়ায় অস্ত্র দেখা গিয়েছে ছোটদের হাতেও। ভাটপাড়ায় বজরং দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় তরোয়াল, হাঁসুয়া হাতে উচ্ছ্বসিত জনতাকে নাচতে দেখা যায়। থানার আইসি তাড়া করে কয়েকজনের হাতে থাকা হাঁসুয়া কেড়ে নেন।
রবিবার সন্ধ্যায় বাঁকুড়া শহরে রামনবমীর মিছিলে গোলমাল বাধে। অভিযোগ, পুলিশ মিছিলের রুট পাল্টাতে বললে একাংশ আপত্তি জানায়। তাতেই তেতে ওঠে মাচানতলা এলাকা। কয়েকজন পুলিশকর্মী ইটের ঘায়ে জখম হন। পুলিশও লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী তথা বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার জানান, তিনি মিছিলের শেষে গাড়িতে ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কিছু দুষ্কৃতী উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে গোলমাল পাকিয়েছে।’’ বাঁকুড়ার জেলা তৃণমূল সভাপতি দিব্যেন্দু সিংহ মহাপাত্রের দাবি, ‘‘এই ঘটনা নিয়েও বিজেপি দুর্ভাগ্যজনক ভাবে রাজনীতি করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy