প্রতীকী ছবি।
পড়াশোনা তো দূরের কথা, এখনও নতুন শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকই দেওয়া হয়নি ছাত্রছাত্রীদের। অথচ বই বিতরণের আগেই পড়ুয়াদের জন্য বাংলা শিক্ষা পোর্টালে জানুয়ারির ‘অ্যাক্টিভিটি টাস্ক’ বা গৃহপাঠ আপলোড করে দিল রাজ্যের শিক্ষা দফতর। সেই গৃহপাঠ ডাউনলোড করে জানুয়ারিতে মিড-ডে মিলের সামগ্রী বিতরণের সময় পড়ুয়াদের অভিভাবকদের হাতে দেবেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। প্রশ্ন উঠছে, নতুন শ্রেণিতে উঠে পাঠ্যবইয়ের পড়া না-বুঝে কী ভাবে গৃহপাঠের বিভিন্ন প্রশ্নের সমাধান করবে ছাত্রছাত্রীরা?
বছর শুরু হতে না-হতেই গৃহপাঠ দেওয়ার জন্য শিক্ষা দফতরের এই ‘তৎপরতা’ দেখে কারও কারও বক্তব্য, নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস হচ্ছে অনলাইনেই। আর নবম থেকে দ্বাদশের ক্লাস অফলাইনে হওয়ার কথা। এই অনলাইন এবং অফলাইন ক্লাসের রুটিন কী হবে, তারও একটা দিশা দেখানো দরকার শিক্ষা দফতরের।
আজ, শনিবার, ১ জানুয়ারি থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত ‘ছাত্র সপ্তাহ’ পালন করছে রাজ্য। এর মধ্যেই স্কুলগুলি পাঠ্যপুস্তক দেবে পড়ুয়াদের। যে-হেতু প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ারা পুরোটাই অনলাইনে ক্লাস করেছে, তাই অনেকের পড়ায় ঘাটতি আছে, এটা ধরে নিয়ে প্রতিটি বিষয়ের
উপরে ব্রিজ কোর্স বা সেতু পাঠ্যক্রমের বই প্রস্তুত করেছে শিক্ষা দফতর। পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে এ বার সেই
সেতু পাঠ্যক্রমের বইগুলিও পাবে পড়ুয়ারা। সেতু পাঠ্যক্রমের বইয়ে পড়ুয়াদের আগের শ্রেণির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি আবার বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কারণ, ওই সব বিষয় ভাল ভাবে না-বুঝলে পরের শ্রেণিতে পড়া বুঝতে অসুবিধা হতে পারে। অভিভাবকের একাংশের বক্তব্য, আগে সেতু পাঠ্যক্রমের বইগুলিও পড়িয়ে নিয়ে পরে নতুন শ্রেণির পড়া শুরু করলে ভাল হত।
শিক্ষা দফতরের পরিকল্পনা ছিল, নতুন শিক্ষাবর্ষে অফলাইনে ক্লাস চালু হলে সেতু পাঠ্যক্রমের বই ১০০ দিনের মধ্যে পড়িয়ে নিতে বলা হবে। কিন্তু নতুন করে করোনার যে-প্রকোপ শুরু হয়েছে, তাতে কবে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের অফলাইন ক্লাস চালু হবে, সেই বিষয়ে ফের বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, সেতু পাঠ্যক্রমের বই না-পড়ে পড়ুয়ারা কী ভাবে নতুন শ্রেণির পড়া বুঝবে? কী ভাবেই বা গৃহপাঠের বিভিন্ন প্রশ্নের সমাধান করবে তারা?
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা অনিমেষ হালদার বলেন, “সেতু পাঠ্যক্রমের বই না-পড়ে নতুন শ্রেণিতে উঠে নতুন বিষয় পড়ে গৃহপাঠের উত্তর দিতে অসুবিধা হবে অনেক পড়ুয়ারই। তাই গৃহপাঠ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন শ্রেণিতে কী ভাবে পড়ানো হবে, তার পরিকল্পনা করাও জরুরি। নইলে আদতে কিছুই শিখবে না পড়ুয়ারা। পড়ুয়াদের আগের পড়া বোঝানোর জন্য স্কুল খুলে অর্থাৎ অফলাইনে পঠনপাঠন শুরু রা খুবই জরুরি ছিল।”
‘কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাসের বক্তব্য, পড়া না-বুঝে সহায়িকা থেকে টুকে গৃহপাঠের উত্তর লেখার প্রবণতা আছে অনেক পড়ুয়ার। তাঁর আশঙ্কা, ‘‘নতুন শ্রেণিতে উঠে পড়া না-বুঝলে এ ভাবেই হয়তো টুকে নতুন অ্যাক্টিভিটি টাস্কের উত্তর লিখে দেবে অনেক ছাত্রছাত্রী। ফলে আদতে কোনও উপকারই হবে না পড়ুয়াদের।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy