প্রতীকী ছবি।
করোনা চিকিৎসার পরিকাঠামো বৃদ্ধির ব্যস্ততার মধ্যে গত আট মাসে সামনের সারিতে আসেনি রক্তদান নিয়ে সচেতনতা প্রচার। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের শেষে রোগীর পরিজনদের অভিজ্ঞতা বলছে, নেগেটিভ তো দূর অস্ত, সহজলভ্য পজ়িটিভ গ্রুপের রক্তের জোগান দিতে গিয়েও ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষগুলির নাজেহাল অবস্থা। এমনকি, পরিবর্ত দাতা নিয়ে গেলেও জুটছে প্রত্যাখ্যান। সঙ্কট যে গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে তা মেনে নিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরাও।
কোভিড আবহের মধ্যে মূলত তিন ধরনের পরিস্থিতির কারণে রক্তের জোগানে আকাল দেখা দিয়েছে বলে বক্তব্য রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মীদের একাংশের। তাঁরা জানান, অন্যান্য স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো করোনা সংক্রমণজনিত আতঙ্ক থেকে বাদ থাকেনি রক্ত সংগ্রহের প্রক্রিয়া। অগস্টের পরে অন্য চিকিৎসা পরিষেবা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও রক্তদানের শিবিরগুলি এখনও ছন্দে ফেরেনি। শিবির হলেও রক্তদাতার সংখ্যা নগন্য হওয়ায় চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। আবার করোনা-ভীতির কারণে আট মাস পরেও অনেক জায়গায় শিবিরের আয়োজন করা যাচ্ছে না। রক্তদানের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মী দীপঙ্কর মিত্রের বক্তব্য, রাজ্য সরকারের কাছ থেকে রক্তদাতা পিছু ২৫ টাকা ‘রিফ্রেশমেন্ট চার্জ’ পাওয়া যায়। করোনা আবহে শিবিরের আনুষঙ্গিক খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে। মাত্র ২৫ টাকা যথেষ্ট নয়। শিবিরের সংখ্যায় ভাটা পড়ার সেটিও একটি কারণ। সমাজকর্মীদের একাংশের আরও বক্তব্য, যে সকল সংগঠকেরা রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেন তাঁরা কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছেন। বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতির মধ্যে শিবির আয়োজনের বিষয়টি এখন তাঁদের অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই। সেই বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে রাজ্যের এক ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্তা বলেন, ‘‘ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল থেকে অন্য বছর যে পরিমাণ শিবির আয়োজন করা হত, এ বছর তা হয়নি।’’
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক কর্তা জানান, সব গ্রুপের রক্তেরই সঙ্কট আছে। কারণ, শিবির পিছু গড়ে রক্ত সংগ্রহ কম হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘গত বছর অক্টোবরে ২৬টি শিবির থেকে দু’হাজারের কিছু বেশি রক্ত সংগ্রহ হয়েছিল। এ বার ৩৬টি শিবির করে তিনশো ইউনিট কম রক্ত পেয়েছি। ফলে ‘এ’ পজ়িটিভ, ‘বি’ পজ়িটিভ গ্রুপের রক্ত দিতেও সমস্যা হচ্ছে।’’ কোভিড হাসপাতাল সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্কের আধিকারিক জানান, আগে যেখানে প্রতিটি শিবির থেকে গড়ে ১০০-১৫০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ হত। সেই সংখ্যা ৩০-৩৫’এ নেমে এসেছে। এসএসকেএমের ব্লাড ব্যাঙ্কের এক কর্তার কথায়, ‘‘সপ্তাহ শেষে রক্তের জোগান দিতে গিয়ে শিবিরের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে।’’ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের প্রধান প্রসূন ভট্টাচার্যের মতে, হাসপাতালগুলির ওয়ার্ড থেকে পাঠানো অপ্রয়োজনীয় চাহিদার স্লিপের জন্য প্রচুর রক্ত নষ্ট হয়। তাতে রাশ টানা উচিত।
এই পরিস্থিতির জন্য সার্বিক পরিকল্পনার অভাবকে দায়ী করেছেন জাতীয় রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের স্বেচ্ছায় রক্তদান প্রকল্পের পরামর্শ দাতা কমিটির অন্যতম সদস্য অপূর্ব ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘করোনার মধ্যে ট্রেন চলতে পারে, পুজো, রাজনৈতিক সভা-মিছিল হতে পারে, তাহলে শুধু রক্তদান শিবিরে দাতার সংখ্যা কেন কম হবে?’’
স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বুধবার বলেন, ‘‘চাহিদার তুলনায় রক্তের জোগানে ঘাটতি আছে ঠিকই। তবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। রক্ত সংগ্রহের পরিমাণ বাড়াতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকে আরও সক্রিয় করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy