প্রতীকী ছবি।
বিধানসভা ভোটে দল পর্যুদস্ত হওয়ার পর প্রায় দু’মাস কেটে গেলেও ভোটের ফল নিয়ে পর্যালোচনার জন্য কোনও বৈঠক ডাকেনি রাজ্য বিজেপি। আজ, মঙ্গলবার দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকেও ভোটের ফল বিশ্লেষণ ঘোষিত আলোচ্যসূচিতে রাখা হয়নি। এ বারের বিধানসভা ভোটে যে দল পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখলের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিল, পরাজয়ের কারণ খুঁজতে তাদের এই বিলম্ব কেন? রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘আমাদের দলে রাজ্য কমিটির বৈঠকে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রস্তাব ছাড়া আর কিছু আলোচনার প্রথা নেই। এর বাইরে কারও কিছু বলার থাকলে তিনি রাজ্য বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে লিখিত ভাবে রিপোর্ট দিতে পারেন।’’
রাজনৈতিক শিবিরের অবশ্য প্রশ্ন, দলের ভোটে হারের কারণ বিশ্লেষণ কি ‘রাজনৈতিক প্রস্তাব’-এর মধ্যে পড়ে না? বিজেপির একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, আসলে ভোটে পরাজয়ের কারণ দলের সব নেতাই জানেন। তাই আর এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করার দরকার হচ্ছে না। তা ছাড়া, বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হলে কেন্দ্রীয় নেতাদের একাংশের দিকে আঙুল উঠতে পারে। সেই ‘অনভিপ্রেত’ পরিস্থিতিও এড়াতে চাইছেন দলীয় নেতৃত্ব।
বস্তুত, রাজ্য বিজেপির একাংশের অভিযোগ, ভোট-পর্বে দলে ‘কেন্দ্রীয় শাসন’ জারি হয়েছিল। দলে যোগদান করানো, প্রার্থী বাছাই এবং নবাগতদের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া—কোনও বিষয়েই রাজ্য নেতৃত্বের মতকে গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে রাজ্য বিজেপির একটা বড় অংশের ক্ষোভের নিশানায় সবচেয়ে বেশি রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সর্বভারতীয় এক পদাধিকারী, আরএসএসের এক নেতা এবং এক ওজনদার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। রাজ্য বিজেপির একাংশের মতে, ভোটের আগে শেষ মুহূর্তে তৃণমূল এবং অন্য দল থেকে যাঁদের নেওয়া হয়েছে, তাঁদের অনেকের সম্পর্কেই জনমানসে ক্ষোভ ছিল। তা সত্ত্বেও তাঁদের অনেককে প্রার্থী করা হয়েছে। নবাগতদের অনেককে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দিয়ে জনতার থেকে আরও দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজনীতি
বা আন্দোলনের সঙ্গে বিন্দুমাত্র সম্পর্কহীন তারকাদের প্রার্থী করাও মানুষ পছন্দ করেননি। দলের কর্মীদের সঙ্গে তারকা প্রার্থীদের অনেকের আচরণও প্রশ্নাতীত ছিল না।
বিজেপির এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘দল এখানে ক্ষমতায় এলে কেন্দ্রীয় নেতারা কৃতিত্ব নিতেন। হারের দায়ও তাঁদেরই নিতে হবে। কারণ ভোটের আগে আমাদের কোনও কথা মানা হয়নি।’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের শিবির কোনও দিনই মুকুল রায়ের সঙ্গে কৈলাসের ‘ঘনিষ্ঠতা’ পছন্দ করেনি। এখন মুকুলবাবু তৃণমূলে ফিরে যাওয়ার পরে ঘরোয়া আলোচনায় এই প্রসঙ্গেও কৈলাসকে বিঁধছে দিলীপ-শিবির। তাৎপর্যপূর্ণ হল, আজ বিজেপির রাজ্য কমিটির বৈঠকে কৈলাস যোগ দেবেন— এমন কোনও খবর সোমবার রাত পর্যন্ত রাজ্য নেতৃত্বের কাছে নেই। তাই বক্তার তালিকাতেও তাঁর নাম রাখা হয়নি।
অবশ্য এর উল্টো পিঠও আছে। যেমন-- দিলীপ-বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, দিলীপবাবুর ধারাবাহিক উগ্র এবং নারীবিদ্বেষী বক্তৃতার জন্য মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ভোটে জেতার উপযুক্ত সংগঠনও গড়ে তোলা হয়নি।
কিছু দিন আগে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদকরা দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিবপ্রকাশের সামনে এই মতগুলি প্রকাশও করেছেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এই সব পারস্পরিক দোষারোপের প্রকাশ চাইছেন না দলের নেতারা। যদিও আজ রাজ্য কমিটির বৈঠকে এই সব কথা তোলার সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন অনেকে। এমনকি, আজকের বৈঠক চলাকালীন কর্মী-বিক্ষোভের আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ।
এ দিকে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে রাজ্যকে বার্তা দেওয়া হয়েছে, এ বার থেকে দলের পোস্টারে দিলীপবাবুর পাশাপাশি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ছবিও রাখা যেতে পারে। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের প্রশ্ন, এটা কি দিলীপবাবুকে ‘চাপে’ রাখার কৌশল? রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বলেন, ‘‘দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে কোনও ভাগাভাগি নেই। বিরোধী দলনেতার ছবি ব্যবহার করার মধ্যেও নতুনত্ব নেই। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।’’
আজ বিজেপির রাজ্য কমিটির বৈঠকে শেষ বক্তা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা। তিনি-সহ সিংহভাগ নেতাই বৈঠকে থাকবেন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। দলের হেস্টিংস কার্যালয়ে রাজ্য পদাধিকারী, কয়েক জন সাংসদ, বিধায়ক-সহ ৫০ জনকে ডাকা হয়েছে। জেলা সভাপতি, বাকি সব সাংসদ ও বিধায়ক এবং রাজ্য কমিটির অন্য সদস্যদের উপস্থিতি হবে ভার্চুয়াল। মুকুলবাবু তৃণমূলে ফিরে যাওয়ার পরে বিজেপির আরও কয়েক জন নেতা এবং জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে দলের অন্দরে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। আজ তাঁরা বৈঠকে থাকেন কি না, তা নিয়ে কৌতূহলী রাজনৈতিক শিবির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy