শুক্রবার শান্তিনিকেতনে মুকুল রায়। —নিজস্ব চিত্র।
ফের অসংলগ্ন মুকুল রায়! শুক্রবার শান্তিনিকেতনে গিয়ে বললেন, ‘‘এই পৌর নির্বাচনে সারা পশ্চিমবাংলায় বিপুল ভাবে ভারতীয় জনতা পার্টি জয়ী হবে।’’ সংবাদমাধ্যমকে যখন এমন কথা মুকুল বলছেন তখন তাঁর একেবারে পাশেই দাঁড়িয়ে বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। কেউ একজন ভুল ধরিয়ে দিতে ফের মুখ খুললেন মুকুল। এ বারে বললেন আরও মারাত্মক কথা। সেই সময়ে তাঁর ‘তৃণমূল’ বলা উচিত বলে পাশ থেকে কেউ উল্লেখ করতেই মুকুল বলেন, ‘‘তৃণমূল তো বটেই। ভারতীয় জনতা পার্টি মানেই তৃণমূল।’’ এর পরেও কেউ কেউ ভুল সংশোধন করে দিতে চান। কিন্তু ততক্ষণে যা বলার বলে ফেলেছেন মুকুল। অনুব্রত-সহ উপস্থিত তৃণমূল নেতারা সকলেই তখন অস্বস্তিতে। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও পরে তাঁরা জানান, শারীরিক অসুস্থতার কারণেই মুকুল এমন অসংলগ্ন কথা বলে ফেলেছেন।
এটাই প্রথমবার নয়। এর আগে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন গত ৬ অগস্ট। সেটা আবার কৃষ্ণনগরে বসেই। কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মকুল ১১ জুন তৃণমূলে ফিরে যান। পুরনো দলে নতুন করে যোগদানের পরে তিনি কৃষ্ণনগরে গিয়ে একাধিক বার বিজেপি-র জয় এবং তৃণমূলের পরাজয়ের কথা বলে দৃশ্যতই অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের। বার বার ধরিয়ে দেওয়ার শেষে, মুখ ফস্কানো কথা ঢোঁক গিলেছিলেন কোনও রকমে। সে বার মুকুল বলে বসেন, ‘‘ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে আমি বলতে পারি, তৃণমূল পর্যুদস্ত হবে এবং এই কৃষ্ণনগরে নিজেদের স্বমহিমায় নিজেদের প্রতিষ্ঠা করবে বিজেপি নিজের ক্ষমতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবে।’’ মুকুলের মন্তব্যে অস্বস্তিতে পড়ে যান তাঁর সঙ্গে থাকা স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। চার পাশ থেকে তাঁরা ধরিয়ে দেন, ‘‘দাদা ওটা তৃণমূল হবে।’’ তাতে ভুল শুধরে নিয়ে মুকুল বলেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস হেরে যাবে মানে নিজস্ব ভূমিকায় ফিরে আসবে। নিজের ক্ষমতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবে।’’ সদ্য দলবদলের পরে ওই মন্তব্য শুনে অনেকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, তৃণমূলে ফিরে এলেও, মনের কোঠা থেকে এখনও গেরুয়া স্মৃতি ঝেড়ে ফেলতে পারেননি। কিন্তু দলবদলের ছ’মাস পরেও কি বিজেপি-র কথা বলা অভ্যাসে রয়ে গিয়েছে মুকুলের। শুক্রবার সেই প্রশ্নও তৈরি হল।
তবে তৃণমূলে যোগ দিলেও খাতায় কলমে তিনি যে এখনও বিজেপি-তেই রয়েছেন সেটাও শুক্রবারই বিধানসভার স্পিকারের কাছে দাবি করেছেন মুকুল। পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান মুকুলের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করার দাবিতে স্পিকারের কাছে অভিযোগ এনেছে বিজেপি। এর আগে এই মামলার একাধিক শুনানি হলেও তাতে যোগ দেননি মুকুল। শুক্রবারও তিনি বিধানসভায় আসেননি। তবে তাঁর আইনজীবী সায়ন্তক দাস একটি লিখিত বিবৃতি জমা দেন। সূত্রের খবর, তাতেই মুকুল রায় দলবদল করেননি বলে দাবি করা হয়েছে।
তবে মুকুল যে মাঝেমাঝেই অসংলগ্ন কথা বলে ফেলছেন তা নিয়ে অনেক আগে থেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাঁর হিতাকাঙ্ক্ষীরা। গত কয়েক মাস ধরে ব্যক্তিগত জীবনে বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহে মুকুল অভূতপূর্ব চাপের মধ্যে থাকায় মাঝেমধ্যে অসংলগ্ন কথা বলে ফেলছেন বলে মনে করেছেন তাঁরা। তৃণমূলের একটি অংশের দাবি, পটাশিয়াম-সোডিয়ামের ভারসাম্য বিগড়ে যাওয়ার ফলে মুকুল এমন বলে ফেলছেন। পরে ভুল বুঝতে পেরে তিনি নিজেও অস্বস্তিতে পড়ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy