‘জয় শ্রীরাম’ লেখা বিজেপি-র মাস্ক। নিজস্ব চিত্র।
রবিবার হলদিয়ায় জনসভা থেকে তৃণমূলকে ‘রামকার্ড’ দেখানোর ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর সেই দিনেই ‘জয় শ্রীরাম’ লেখা মাস্ক নিয়ে নতুন অশান্তি তৈরি হয় হুগলির চাঁপদানিতে। এখানেই শেষ নয়, তৃণমূলের সঙ্গে সঙ্ঘাতের জেরে এ বার ‘জয় শ্রীরাম’ মাস্ক বিলির কর্মসূচি নিল বিজেপি। যদিও সেটাকে গুরুত্ব দিতে চাইছে না তৃণমূল।
চাঁপদানিতে একটি চক্ষু পরীক্ষা শিবিরে রোগীদের ‘জয় শ্রীরাম’ লেখা মাস্ক পরানো নিয়ে বিবাদের শুরু। আর তার জেরে বিজেপি ও তৃণমূলের সঙ্ঘাত উত্তেজনার চেহারা নেয় রবিবার। এ বার সেই গোলমালের জবাব দিতে বুধবার থেকে চাঁপদানিতে ‘জয় শ্রীরাম’ মাস্ক বিলির সিদ্ধান্ত নিল বিজেপি। দলের পক্ষে জানানো হয়েছে, এর জন্য ৫০ হাজার মাস্ক তৈরি করা হচ্ছে।
রবিবার চাঁপদানিতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) প্রভাবিত সংগঠন ‘স্বামীজি নেতাজি সেবা কেন্দ্র’-র উদ্যোগে চাঁপদানি পুরসভার কমিউনিটি হল এবং পলতা ঘাটে চক্ষু পরীক্ষা শিবিরের আয়োজন করা হয়। সেখানে সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকদের অনেকেই ‘জয় শ্রীরাম’ লেখা গেরুয়া মাস্ক পরেছিলেন। শুধু তাই নয়, যাঁরা চোখ পরীক্ষা করাতে এসেছিলেন তাঁদেরও একই রকম মাস্ক পরানো হয়। আয়োজকদের অভিযোগ, কেন ওই মাস্ক ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে চাঁপদানি পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর জিতেন্দ্র সিংহ তাদের হুমকি দেন। সবাইকে পরে দেখে নেওয়া হবে বলেও শাসানো হয়। এর ফলে ওই শিবিরা আসা সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসকদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়ায়। আয়োজকের অভিযোগ শোনার পরে এই বিতর্কে ঢোকে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব।
দলের শ্রীরামপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক অমানিশ আইয়ার জানিয়েছেন, তিনি ঘটনাস্থলে গেলে তাঁকে বন্দুক দেখিয়েও শাসানো হয়। তবে তার মধ্য়েও শিবির চলতে থাকে। এমন অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে তৃণমূল। জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কেউ হুমকি দিয়ে থাকলে, বন্দুক দেখিয়ে থাকলে ওঁরা আগে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাক।’’
অন্য দিকে অমানিশের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল ‘জয় শ্রীরাম’ নিয়ে ভয় পাচ্ছে। তাই জন্যই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদে তিন দিন চাঁপদানি বিধানসভা এলাকায় সর্বত্র ‘জয় শ্রীরাম’ মাস্ক বিলি করা হবে।’’ বিজেপি-র এই কর্মসূচিকে অবশ্য গুরুত্ব দিতেই রাজি নয় জেলা তৃণমূল। এ নিয়ে দিলীপ বলেন, ‘‘ওঁরা কোনও কর্মসূচি নিতেই পারেন। কিন্তু রাজনীতির মধ্যে এই সব না নিয়ে আসাই ভাল। রাজনীতি হোক উন্নয়নের প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে। সরকারি নেতাজি জয়ন্তী পালন অনুষ্ঠান থেকে সমাজসেবামূলক কাজ, সবেতেই ‘জয় শ্রীরাম’ নিয়ে এসে বিজেপি রাজনৈতিক ফয়দা তোলার চেষ্টা করছে। এটা ঠিক নয় আর এতে লাভও হবে না।’’
‘জয় শ্রীরাম’ নিয়ে বিবাদ যেন থামছে না। বিজেপি-র এই স্লোগানের বয়স অনেক বেশি হলেও বঙ্গ রাজনীতিতে এ নিয়ে বিতর্কের বয়স খুব বেশি নয়। বছর দুয়েক আগে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান নিয়ে একাধিক জায়গায় প্রকাশ্যোই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মমতা। গাড়ি থামিয়ে নেমে স্লোগানকারীদের সরাসরি চ্যালেঞ্জও জানিয়েছিলেন। তবে সেটা পরে বন্ধ হয়ে যায়। অনেক জায়গাতেই দেখা যায় স্লোগানে কর্ণপাত করছেন না মমতা। কিন্ত গত ২৩ জানুয়ারি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজি জয়ন্তী পালনের অনুষ্ঠানের ঘটনার পরে বিতর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিতে বাধা পেয়ে ভাষণই দেননি মমতা।
তবে বিজেপি যে ভিক্টোরিয়ার ঘটনা নিয়ে বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনীতির ময়দানেও ডিভিডেন্ড পেতে চাইছে তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। রাজ্য নেতারা তো বটেই, বঙ্গ সফরে এসে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাও মমতার আপত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মুখে সেই কথা না বললেও তৃণমূলকে ‘রামকার্ড’ দেখানোর ডাক দিয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ প্রসঙ্গেরই ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy