মোদীর সফরের আগে তৎপর রাজ্য বিজেপি। — প্রতীকী চিত্র।
রেল স্টেশন, চা এবং মোদী— শুক্রবার এই ‘ত্র্যহস্পর্শ’ যোগ থাকবে পশ্চিমবঙ্গে। উপলক্ষ— বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের প্রথম যাত্রা। লক্ষ্য— রাজনৈতিক ফায়দা।
রেল যা জানিয়েছে, তাতে হাওড়া থেকে নিউ জলপাইগুড়ি যেতে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সময় লাগবে সাড়ে ৭ ঘণ্টা। কিন্তু উদ্বোধনের দিন সেই সময় সাড়ে ১৭ ঘণ্টাও হয়ে যেতে পারে! এমনই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে রাজ্য বিজেপির আব্দারে। কারণ, দ্রুতগামী বন্দে ভারত ট্রেন প্রথম দিন থমকে থমকে চলবে। নিয়ম অনুযায়ী গোটা পথে একমাত্র মালদহ টাউন স্টেশনেই দাঁড়ানোর কথা এই ট্রেনের। কিন্তু শুরুর দিনে অনেক অনামী স্টেশনও মিনিট খানেকের জন্য পেয়ে যাবে বন্দে ভারতকে। সব জায়গাতেই নতুন ট্রেনকে স্বাগত জানানোর আয়োজন করছে বিজেপি। সবচেয়ে বড় আয়োজন মালদহে।
মোদী একদা গুজরাতের ভাবনগর স্টেশনে চা বিক্রি করতেন বলে দাবি করা হয়। তিনি যে ‘চায়েওয়ালা’ ছিলেন, মোদী তা নিজেও বলেছেন। সেই কথা মাথায় রেখেই ‘চায়েওয়ালা’-কে সম্মান জানাতে চায় বিজেপি। ঠিক হয়েছে, বিজেপি কর্মীরাই মোদীর মুখোশ পরে শুক্রবার চা বিক্রি করবেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে মালদহ টাউন স্টেশনে শুক্রবারের বড় আকর্ষণ হবে ‘নমো টি স্টল’। প্ল্যাটফর্মেই চা বিক্রির জন্য অনুমতি নিয়ে রেখেছে বিজেপি।
এখনও পর্যন্ত যা সূচি, তাতে সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হাওড়া স্টেশনের মঞ্চ থেকে সবুজ পতাকা দেখাবেন। যাত্রা শুরু করবে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। বেলা ১১টা পর্যন্ত মোদীর হাওড়া স্টেশনেই থাকার কথা। তিনি বক্তৃতাও করতে পারেন। সেই সময়ের মধ্যে সুপার ফাস্ট ট্রেনটি ডানকুনি এমনকি, কামারকুণ্ডু স্টেশনেও প্রথম দিন দাঁড়াতে পারে। এর পর বর্ধমান পৌঁছনোর আগে আরও চার-পাঁচটি স্টেশনে নতুন বন্দে ভারতকে বন্দনা করবে বিজেপি। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সেখানে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।
তবে সবচেয়ে বড় কর্মসূচি মালদহ এবং নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে। প্রথম স্টেশনটিতে নিয়ম মেনেই বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়াবে ট্রেন। দ্বিতীয়টি প্রান্তিক স্টেশন। ওই দুই স্টেশনেই রেলের পক্ষ থেকেও শুক্রবার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। মোদী যখন হাওড়ায় ট্রেনের উদ্বোধন করবেন তখন দু’টি স্টেশনেই বড় স্ক্রিনে তার সরাসরি সম্প্রচার দেখানোর উদ্যোগ নিচ্ছে রেল। তবে বিজেপির উদ্যোগে কর্মসূচি শুরু হবে ট্রেনটি সংশ্লিষ্ট স্টেশনে ঢোকার ঠিক আগে আগেই।
নিউ জলপাইগুড়িতে গোটা কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছেন দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তা। তিনি মোদীর অনুষ্ঠানে না-ও থাকতে পারেন। মালদহে আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিজেপির সাংগঠনিক জেলা দক্ষিণ মালদহের সভাপতি পার্থসারথি ঘোষকে। বুধবার পার্থ বলেন, ‘‘অন্য দিনের চেয়ে একটু পরেই মালদহে আসবে প্রথম দিনের ট্রেন। মোটামুটি পৌনে ৫টা নাগাদ আসার কথা। সেই মতো আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানোর অনুষ্ঠান শুরু হবে। গানবাজনা ছাড়াও খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে স্টেশন চত্বরে।’’
রাজ্য বিজেপি মনে করছে, এই ট্রেন পেয়ে সবচেয়ে বেশি লাভ হবে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির। বেশি করে মালদহ জেলার। মালদহ টাউন স্টেশনকে ব্যবহার করেন দুই দিনাজপুরের বাসিন্দারাও। এতদিন ভোরে কলকাতা থেকে রওনা দিয়ে বেলা গড়ানোর আগে মালদহ পৌঁছনোর কোনও ট্রেন ছিল না। আবার বিকেলের দিকে মালদহ থেকে রাতের মধ্যে কলকাতায় ফেরার ট্রেনও ছিল না। রাতের ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হত। সেই খামতি পূরণ করবে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। এটা মালদহবাসীর জন্য বিজেপির পক্ষ থেকে ‘বড় অবদান’ হিসাবেই তুলে ধরতে চাইছে গেরুয়া শিবির। সে কারণেই উত্তর মালদহের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু হাওড়া থেকে ট্রেনে মালদহ পৌঁছে স্টেশনের কর্মসূচিতে বক্তৃতা করবেন। হাওড়া থেকে ট্রেনে গিয়ে সেখানে যোগ দেবেন জেলার চার বিধায়ক গোপালচন্দ্র সাহা, শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী, জুয়েল মুর্মু এবং চিন্ময় দেববর্মন। গত লোকসভা নির্বাচনে খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে দক্ষিণ মালদহ আসনে হেরেছিল বিজেপি। স্বভাবতই দলের লক্ষ্য— বন্দে ভারত কিছুটা হলেও যেন ‘সুবিধা’ দেয়। তাই শুক্রবার দক্ষিণ মালদহের সংগঠনকে বেশি করে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy