দেশভাগের সময়ের থেকে খারাপ বর্তমানের বাংলা। দাবি বিজেপি-র। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই রাজ্যে ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে সরব রাজ্য বিজেপি। এ নিয়ে রাজভবন থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক— সর্বত্র অভিযোগ জানিয়েছে গেরুয়া শিবির। গিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন থেকে আদালতে। এ বার দলের কার্যকারিণী সমিতির বৈঠকে রাজনৈতিক প্রস্তাবে সেই অভিযোগকে বড় আকারে নিয়ে আসতে চাইছেতারা। মঙ্গলবার দলের কার্যকারিণী বৈঠকে যে ‘রাজনৈতিক প্রস্তাব’ পেশ করা হবে, তাতেই ওই অভিযোগ আনতে চাইছেবিজেপি। সোমবার দুপুর পর্যন্ত খবর, খসড়া প্রস্তাবে বাংলার বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে দেশভাগের সময়ের তুলনা করা হয়েছে। বিজেপি সূত্রে খবর, প্রস্তাবে বলা হবে, ভোট পরবর্তী হিংসায় যে ভাবে নারী নির্যাতন হয়েছে তা দেশভাগের সময়ের থেকেও মারাত্মক।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা নাগাদ বৈঠক শুরুর কথা। রাজ্য নেতারা বসবেন হেস্টিংসে বিজেপি-র দফতরে। জেলার নেতারা থাকবেন ভার্চুয়াল মাধ্যমে। প্রথমেই বক্তৃতা করার কথা রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষেন। বৈঠকে শেষ হবে বিকেলে। শেষ বক্তা হওয়ার কথা সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার। মাঝে বলার কথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে রাজ্যের দায়িত্ব প্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা শিবপ্রকাশ-সহ রাজ্য নেতাদের।
সেই বৈঠকেই দলের নিয়ম অনুযায়ী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রস্তাব পেশ করা হবে ও দিনভর আলোচনার শেষে তা পাশ করানো হবে। অর্থনৈতিক প্রস্তাবে বাংলার শিল্প পরিস্থিতি, রাজ্যের মানুষকে অন্যত্র কাজ করতে যাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে মূলত রাজ্য সরকারের সমালোচনার কথা থাকবে বলেই জানা গিয়েছে। তবে এই প্রথম রাজ্য বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পাওয়া বিজেপি জোর দিচ্ছে ‘রাজনৈতিক প্রস্তাবে’।
স্বাধীনতার অব্যবহিত আগে ১৯৪৭ সালের ২০ জুন রাজ্য বিধানসভায় বাংলা ভাগের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই দিনটিকে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে বিজেপি। বিজেপি-র দাবি, ওই দিন মূলত শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই হিন্দুপ্রধান পশ্চিমবঙ্গকে ভারতের অন্তর্ভূক্ত রাখা সম্ভব হয়েছিল। ক’দিন আগেই ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করা রাজ্য বিজেপি এ বার সেই সময়ের পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক বিষয় করতে চলেছে। গেরুয়াশিবির সূত্রে খবর, খসড়া প্রস্তাবে এমনও বলা হয়েছে যে, দেশভাগের সময় হিন্দুদের উপরে যে ভাবে আক্রমণ হয়েছিল, তেমই চলছে এখনও। রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসায় মৃত্যু হয়ছে কমপক্ষে ৪০ জন বিজেপি কর্মীরা। ঘরছাড়া ২০ হাজার। ইতিহাস বলছে, দেশভাগের পর একটা বড় সময় ধরে সঙ্ঘর্ষের পরিবেশ ছিল। এখন অল্প সময়ের মধ্যেই রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সেই পরিস্থিতিকে ছাপিয়ে যাচ্ছে প্রস্তাবে দাবি করতে চাইছে বিজেপি।
সার্বিক ভাবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিন্দা করা হলেও বিজেপি ‘রাজনৈতিক প্রস্তাব’-এ বেশি গুরুত্ব দিতে চলেছে মহিলাদের উপরে অত্যাচারকে। রাজনৈতিক মহলের হিসেব অনুযায়ী, বিধানসভা নির্বাচনে বড়মাত্রায় মহিলা ভোট এসেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূলের সমর্থনে। প্রশ্ন উঠছে, বিজেপি কি সেই ভোটে ভাগ বসাতেই রাজ্যে ‘নারী নির্যাতনকে’ বড় বিষয় করে তুলতে চাইছে। প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই জাতীয় মহিলা কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে গেরুয়া শিবির। মহিলা মোর্চার সর্বভারতীয় নেতৃত্বে কলকাতায় এসে আন্দোলনে নেমেছেন। কিন্তু রাজ্যেকার্যত লকডাউন পরিস্থিতিতে সেই আন্দোলন স্থায়ী হয়নি। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছেও দরবার করেছে বিজেপি মহিলা মোর্চা।
সাম্প্রতিক কালে ধনখড়ও রাজ্যে ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে বারবার সরব হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিতে রাজ্যপাল লিখেছিলেন, ‘ভোটের পর বহু মানুষ হিংসার কবলে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন। বিরোধীদের প্রচুর সম্পত্তি নষ্ট করা হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা অব্যাহত। চলছে নারী নির্যাতনও। রাজ্যের এই পরিস্থিতি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও আপনি নীরব থেকেছেন। এমনকি, মন্ত্রিসভার বৈঠকেও এ নিয়ে কোনও আলোচনা করেননি।’ এর পরে দিল্লি গিয়ে অমিত শাহের সঙ্গে জোড়া বৈঠক করেন ধনখড়। রাজ্যে ফিরে বলেন, ‘‘তফসিলি জাতি-উপজাতির মানুষ, সাধারণ নাগরিক আক্রান্ত হচ্ছেন। অথচ পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ঘরছাড়াদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না প্রশাসন।’’ পাশাপাশি আরও আক্রমণাত্মক সুরে বলেন, ‘‘ভোটের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় লাগামছাড়া সন্ত্রাস চলছে। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে। গণতন্ত্রের উপর আঘাত আসছে। দেশে স্বাধীনতার পর থেকে এমন অশান্তি দেখা যায়নি।’’
সোমবার দুপুর পর্যন্ত যা খবর, তাতে শেষমুহূর্তে খসড়ায় কোনও অদলবদল না হলে মঙ্গলবারের কার্যকারিণীর বৈঠকে বিজেপি-র রাজনৈতিক প্রস্তাবে রাজ্যপালের সুরই শোনা যাবে। বিজেপি-র একটি অংশ ভোটের পর থেকেই বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা উচিত বলে দাবি করে আসছে। গেরুয়াশিবিরেরই অনেক মনে করছেন, সেই দাবি আরও জোরদার হয়ে উঠতে পারে রাজ্য বিজেপি তাদের‘রাজনৈতিক প্রস্তাব’ পাশের পরে। কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি নিয়ে দল কোন পথে হাঁটবে, তা-ও আলোচ্য হতে পারে মঙ্গলবারের বৈঠকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy