বিজেপি-র সঙ্গে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূরত্ব কি কমতে চলেছে? এই প্রশ্নে শনিবার থেকেই সরগরম রাজ্য রাজনীতি। তবে সেই উত্তেজনা থেকে অনেক দূরে হেস্টিংসে রাজ্য বিজেপি দফতরের ৮১১ নম্বর ঘর এখনও কর্তার অপেক্ষায়। বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজীব বিজেপি-তে কতটা গুরুত্ব পেয়েছিলেন তার বড় সাক্ষী এই ঘর। দলের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরের নেতাদের জন্য আলাদা আলাদা ঘর হয়েছিল হেস্টিংস মোড়ের কাছে ‘আগরওয়াল হাউস’-এ। ২ নম্বর সেন্ট জর্জেস গেট রোডের বহুতলের ন’তলায় ঘর পেয়েছিলেন রাজীবও। মঙ্গলবার দলের কার্যকারিণী বৈঠকে যোগ দিতে দফতরে তথা নিজের ছেড়ে আসা ঘরে তিনি যাবেন কি না সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য মেলেনি। বারবার ফোন করলেও সাড়া দেননি রাজীব। ইদানীং ফোনে খুব কমই সাড়া দেন তিনি। এমনটা বলছেন তাঁর ঘনিষ্ঠরা। আর সেই কারণেই তাঁর পরবর্তী রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে জল্পনার শেষ নেই।
খুব ঘন ঘন না হলেও ৮১১ নম্বর ঘরে অনুগামীদের নিয়ে বসতেন রাজীব। ন’তলায় এক দিকে ছিল মুকুল রায়, কৈলাস বিজয়বর্গীয়দের ঘর। আর অন্য দিকে দিলীপ ঘোষ, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু ভোটে পরাজয়ের পরে ৮১১ নম্বরে ঘর তো নয়ই, ওই বাড়িতেই আর পা রাখেননি রাজীব। তিনি তৃণমূলে ফিরে যেতে চান এমন জল্পনা তৈরি হলেও পাকাপাকি ভাবে কোনও ঘোষণা করেননি রাজীব। তাই ৮০৩ নম্বর ঘরের দরজা থেকে মুকুলের নেমপ্লেট সরে গিয়ে ঘর পুনর্বণ্টন হলেও রাজীবের ঘর এখনও অপেক্ষায়। নিয়ম করে প্রতি দিন ঝাড়পোছও হয়। অপেক্ষা, এক দিন ঠিক আসবেন রাজীব।
বিজেপি-র কার্যকারিণী কমিটির সদস্য হিসেবে মঙ্গলবার রাজ্য নেতৃত্ব তাঁকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে বলেই গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু আমন্ত্রণ রক্ষা করবেন কি না তা নিয়ে এখনও প্রকাশ্যে কিছু জানাননি রাজীব। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, আমন্ত্রণ পেলে হেস্টিংসের দফতরে আসতে পারেন তিনি। আবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে বাড়ি থেকেও যোগ দিতে পারেন বিজেপি-র সারা দিনের বৈঠকে।
ভোটের পর থেকেই রাজীবকে নিয়ে বিজেপি-র অন্দরে বিস্তর প্রশ্ন উঠছে। একটা সময় পর্যন্ত শোনা গিয়েছিল, তৃণমূলে ফেরার জন্য মুকুলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন রাজীব। এর পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর একটি পোস্ট ঘিরেও বিজেপি-তে অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়। দলবদলের জল্পনা বাড়িয়ে রাজীব লিখেছিলেন, ‘‘এই বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আসা একটা সরকারের এক মাস হয়েছে। সেখানে যদি কেউ রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে চায় বা গোঁড়া সাম্প্রদায়িকতা দেখাতে চায় বা যদি সত্যিকারের ধর্মীয় বিভাজন তৈরি করতে চায়, তবে আমি সেই দলে থেকেও বিরোধিতা করব। আগামী দিনেও বিরোধী থাকব।’’ ভোটে হারের পরে বিজেপি-তে ‘বেসুরো’-দের তালিকায় নাম উঠে যাওয়া রাজীব তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের সঙ্গে বৈঠক করেন মুকুল দল ছাড়ার পরের দিনই। যদিও বৈঠক শেষে কুণাল ও রাজীব দু’জনেই বলেন, সৌজন্য সাক্ষাৎ, কোনও রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মায়ের মৃত্যুর পর তাঁর সঙ্গেও দেখা করেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। অন্য দিকে, তৃণমূলের অন্দরে রাজীবকে ফেরানো নিয়ে অসন্তোষ শুরু হয়। ডোমজুড়ে রাজীবকে হারানো বিধায়ক কল্যাণ ঘোষ প্রকাশ্যেই তাঁর বিরোধিতা করেন। এর পরে রাজীবের তৃণমূলে ফেরার জল্পনা অনেকটাই কমে যায়।
নতুন করে বিজেপি ঘনিষ্ঠতা বাড়ার লক্ষণ দেখা দেয় শনিবার। রাজ্য বিজেপি দফতরে জোড়া চিঠি পাঠান তিনি। শনিবার বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীকে মুখবন্ধ খামে একটি চিঠি পাঠান তিনি। ডোমজুড়ের বিজেপি প্রার্থী আর একটি খোলা চিঠিতে এলাকার ‘ঘরছাড়া’ কর্মীদের তালিকাও পাঠান এক অনুগামীর হাত দিয়ে।
একটা সময় বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব রাজীবের সঙ্গে যোগাযোগই বন্ধ করে দেয়। তিনি ফোন ধরছেন না বলেও অভিযোগ ওঠে। সেই সময় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং রাজ্যের পক্ষে অমিতাভ অবশ্য যোগাযোগ ছাড়েননি। বোঝানোর পালা চলে। মুকুল চলে যাওয়ার পরে রাজীবও তৃণমূলে ফিরলে দলের অস্বস্তি বাড়বে বলেই এই চেষ্টা চালায় বিজেপি। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সেই চেষ্টার কথা স্বীকারও করেন। তবে তাঁর সঙ্গে খোঁচাও ছিল। উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে গত ২০ জুন দিলীপ বলেন, ‘‘সাফল্য না মেলায়ে হতাশা থেকে এ সব করছেন ওঁরা। আমরা কথা বলছি সকলের সঙ্গে। বোঝানোর চেষ্টা করছি। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। এই ধরনের বিষম পরিস্থিতিতে যাঁরা লড়াই করেননি, তাঁদের একটু কষ্ট হচ্ছে। চেষ্টা করছি মনের জোর বাড়ানোর।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy