Advertisement
E-Paper

আধ ঘণ্টার ব্যবধানে নির্বাচন কমিশনের মুখোমুখি যুযুধান তৃণমূল-বিজেপি, বৈঠক শেষে তোপ কল্যাণের, আশ্বস্ত সুকান্ত

গত শুক্রবারই সুকান্ত ঘোষণা করেছিলেন, ১১ মার্চ বিজেপির প্রতিনিধি দল মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে যাবে। তবে কমিশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল তারও কয়েক দিন আগে।

BJP-TMC meets CEC’s full bench on same day regarding WB Electoral Roll correction issue

(বাঁ দিকে) কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সুকান্ত মজুমদার (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৫ ২১:১১
Share
Save

একই দিনে আধ ঘণ্টার ব্যবধানে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের মুখোমুখি যুযুধান দু’পক্ষ। শাসক তৃণমূলের ১০ জন এবং বিরোধী বিজেপির ১২ জন মঙ্গলবার দেখা করলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে। দু’পক্ষই ‘স্বচ্ছ’ ভোটার তালিকার দাবি পেশ করল কমিশনের কাছে। কিন্তু বৈঠক সেরে বেরিয়ে দু’দলের প্রতিক্রিয়া দু’রকম! কমিশনের দেওয়া আশ্বাসের কথা উল্লেখ করে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সন্তোষ প্রকাশ করলেন। আর তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, তৃণমূলের তোলা প্রশ্নের ‘সদুত্তর’ দিতে পারেনি কমিশনের ফুল বেঞ্চ। কমিশনের তরফে মঙ্গলবার বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে যে, নির্বাচন ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে সব দলের পরামর্শই স্বাগত।

গত শুক্রবারই সুকান্ত ঘোষণা করেছিলেন, ১১ মার্চ বিজেপির প্রতিনিধি দল মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে যাবে। তবে কমিশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল তারও কয়েক দিন আগে। অমিত শাহের সঙ্গে অমিত মালবীয় এবং সুকান্তের বৈঠকের দিনেই। প্রথমে বিজেপি জানিয়েছিল, চার জনের প্রতিনিধি দল কমিশনে যাবে। সুকান্ত, মালবীয়, ওম পাঠক এবং শমীক ভট্টাচার্য। কিন্তু মঙ্গলবার দেখা যায়, এই চার জনের সঙ্গে রয়েছেন বঙ্গ বিজেপির আরও আট সাংসদ। অর্থাৎ, মোট ১২ জন। তৃণমূল যে হেতু ১০ জনের প্রতিনিধি দল পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছিল, সে হেতু সুকান্তরাও দল ভারী করে নিলেন কি না, সে প্রশ্নের জবাব মেলেনি। বিকেল ৪টেয় নির্বাচন সদনে ঢুকে প্রায় এক ঘণ্টা পরে বা‌ইরে আসেন বিজেপি নেতারা। তার মধ্যে মিনিট চল্লিশ ধরে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে কমিশনের ফুল বেঞ্চের বৈঠক হয় বলে বিজেপি সূত্রের দাবি।

বৈঠক সেরে বেরিয়ে গোটা প্রতিনিধি দলকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন সুকান্ত। তিনি জানান, ‘‘তৃণমূল বাংলার ভোটার তালিকায় বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গাদের নাম ঢুকিয়েছে বলে ‘তথ্যপ্রমাণ’-সহ অভিযোগ জানানো হয়েছে। মৃত ভোটারদের নাম বাদ না-দেওয়া, একই ভোটারের নাম একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার তালিকায় রাখার অভিযোগও জানানো হয়েছে।’’ সুকান্তের দাবি, ‘‘নির্বাচন কমিশনের সাড়া অত্যন্ত সদর্থক। পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকাকে ভুয়ো ভোটার মুক্ত করতে যা যা করা দরকার, কমিশন তা করবে বলে আমরা আশ্বাস পেয়েছি।’’ বিজেপি এর আগে জানিয়েছিল, ১৭ লক্ষের বেশি ভুয়ো ভোটার বাংলার ভোটার তালিকায় রয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুকান্ত আনন্দবাজার ডট কমকে বলেন, ‘‘তথ্যপ্রমাণ-সহ আমাদের অভিযোগ কমিশনের কাছে আগেই জমা পড়েছিল। তাই গত কয়েক দিনে প্রায় চার লক্ষ ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করে কমিশন তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। এখনও ১৩ লক্ষের মতো ভুয়ো ভোটার রয়েছে। তা-ও বাদ দেওয়া হবে বলে কমিশন আমাদের আশ্বাস দিয়েছে।’’

কমিশনের সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে তৃণমূলের লোকসভা মুখ্য সচেতক কল্যাণ বলেন, ‘‘একই এপিক নম্বরে বিভিন্ন রাজ্যে কী ভাবে ভোটারের নাম থাকতে পারে? এটা তো সরাসরি নির্বাচনের ২৮ নম্বর নিয়মকে লঙ্ঘন করছে!’’ কল্যাণের এ-ও প্রশ্ন, ‘‘শুধু তো ভিন‌্‌রাজ্যের বিষয় নয়। বাংলার বিভিন্ন জেলাতেও একই জিনিস দেখা যাচ্ছে। কমিশন তো বাংলার বিষয়ে বেশি নজর দেয়। সাত-আট দফায় ভোট করায়। তা হলে এই ধরনের বিষয় ঘটছে কী ভাবে?’’ তৃণমূলের আগেই বিজেপির প্রতিনিধি দলের কমিশন-যাত্রা নিয়েও কল্যাণের মুখে কটাক্ষ শোনা গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘দিল্লিতে বিজেপির একটা বড় ঘর রয়েছে। তার এক দিকে বিজেপি বসে, এক দিকে নির্বাচন কমিশন, এক দিকে সিবিআই, এক দিকে ইডি। বিজেপি এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় এসেছিল। আমরা এসেছি বলেই ওরা এসেছে।’’ সুকান্তের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল এসেছে বলে আমরা কেন আসব! কমিশনের কাছে সময় চেয়ে কারা আগে মেল করেছে একটু খোঁজ নিন তো। বিজেপি আগে মেল করেছিল, না কি তৃণমূল, সেটা কল্যাণবাবুকে দেখাতে বলুন।’’

‘ভূতুড়ে’ ভোটার তথা একই এপিক নম্বরে একাধিক জনের নাম থাকার বিষয়টি প্রথমে সামনে এনেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোরের সভায় মমতা একাধিক উদাহরণ দিয়ে ওই অভিযোগ তুলেছিলেন। মঙ্গলবার কমিশনকে দেওয়া স্মারকলিপির তৃতীয় পৃষ্ঠায় তৃণমূল লিখেছে, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি না-উত্থাপন করা পর্যন্ত কেন বছরের পর বছর ধরে বিষয়টি চেপে রাখা হয়েছিল?’’

নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে অবশ্য মঙ্গলবার বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সকল জাতীয় ও রাজ্য দলের পরামর্শ স্বাগত। প্রতিটি দলের সভাপতি এবং উচ্চ নেতৃত্বকে চিঠি দিয়ে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে বলে ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। তবে পরামর্শ দিতে হবে ‘প্রচলিত আইন ও বিধির সীমার মধ্যে থেকে’। আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে এই সব পরামর্শ পাঠাতে হবে বলে কমিশনের বিবৃতিতে মঙ্গলবার জানানো হয়েছে।

BJP Bengal TMC Chief Election Commissioner Voter Lists Sukanta Majumdar Kalyan Banerjee

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}