৪৮ ঘণ্টা আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছেন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে দেশকে দ্বিতীয় আইসিসি ট্রফি জিতিয়েছেন রোহিত শর্মা। কিন্তু এক দিনে এই সাফল্য আসেনি। তার জন্য পরিশ্রম করতে হয়েছে কয়েক বছর। ২০১৯ সালের এক দিনের বিশ্বকাপ থেকে শিক্ষা নিয়েছেন তিনি। সেই শিক্ষা কাজে লাগিয়েই সফল হয়েছেন রোহিত। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে বুর্জ খলিফার সামনে দাঁড়িয়ে জিয়োহটস্টার অ্যাপে একটি সাক্ষাৎকারে সেই শিক্ষার কথাই জানালেন ভারত অধিনায়ক।
সাদা বলের ক্রিকেটে অন্যতম সেরা ওপেনার ধরা হয় রোহিতকে। এক দিনের ক্রিকেটে তিনটি দ্বিশতরান রয়েছে তাঁর। রোহিতের খেলার ধরন বদলেছে। আগে ব্যাট করতে নেমে সময় নিতেন। শুরুতে ধীরে খেলতেন। কিন্তু এক বার থিতু হয়ে যাওয়ার পরে তাঁকে থামানো যেত না। কিন্তু এখন রোহিত সে ভাবে খেলেন না। শুরু থেকেই ব্যাট চালান। ফলে শতরানের সংখ্যা কমেছে। কিন্তু ছোট ছোট যে ঝোড়ো ইনিংসগুলি তিনি খেলছেন তাতে দল জিতছে। সেই বদলের কথা শোনা গিয়েছে রোহিতের মুখে।
২০১৯ সালে এক দিনের বিশ্বকাপে পাঁচটি শতরান করেছিলেন রোহিত। একটি বিশ্বকাপে কোনও ক্রিকেটারের এতগুলি শতরান নেই। তার পরেও সে বার সেমিফাইনালে এই নিউ জ়িল্যান্ডের কাছেই হারতে হয়েছিল। ম্যাচ শেষে ধরা পড়েছিল রোহিতের হতাশা। তার পরেই রোহিত ঠিক করে নিয়েছিলেন, ট্রফি জেতার লক্ষ্যেই ঝাঁপাবেন। তিনি বলেন, “খুব খারাপ লেগেছে। বার বার এত কাছে এসেও হারতে হয়েছে। এর কোনও আলাদা কারণ নেই। যে ভুল আগে করিনি, সেই ভুলই গুরুত্বপূর্ণ সব ম্যাচে করেছি। ২০১৫, ২০১৯ প্রত্যেক বার এক ঘটনা ঘটেছে।” দলকে কী ভাবে চ্যাম্পিয়ন করতে হয় সেই মন্ত্র আত্মস্থ করেছিলেন রোহিত। তিনি বলেন, “বুঝেছিলাম, ভাল দল থেকে চ্যাম্পিয়ন দল হতে হবে। তাই ২০২৩ বিশ্বকাপের আগেই নিজেকে বুঝিয়েছিলাম, মাইলফলক নিয়ে ভেবে কিছু হবে না। ২০১৯ বিশ্বকাপে তো পাঁচটা শতরান করেছিলাম। কী হল? শতরানগুলো সব রাখা আছে। ট্রফি তো নেই।”
তিনি নিজে যেটা বুঝেছিলেন, অধিনায়ক হিসেবে সেই মন্ত্র তিনি দলকেও বোঝাতে পেরেছিলেন। সেখানেই রোহিতের সাফল্য। ভারত অধিনায়ক বলেন, “এই মন্ত্র দলকেও বোঝাতে পেরেছিলাম। মাইলফলক আজ আছে, কাল থাকবে না। কিন্তু ট্রফি থেকে যাবে। বুঝেছিলাম, ট্রফি না জিতলে কোনও মজা নেই। দলের সকলকে বাচ্চাদের মতো বুঝিয়েছি। বার বার ওদের সঙ্গে কথা বলেছি। ওরা আমার কথা মেনে নিয়েছে। ২০১৯ বিশ্বকাপ আমাকে শিখিয়েছে, রান করলেও ট্রফি না জিতলে কোনও লাভ নেই।”
সাক্ষাৎকারে আরও নানা বিষয়ে মুখ খুলেছেন রোহিত। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জসপ্রীত বুমরাহের না খেলা থেকে শুরু করে দলের ভবিষ্যৎ, সব বিষয়েই নিজের মতামত জানিয়েছেন ভারত অধিনায়ক।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেরা তৃপ্তি
রোহিত বলেন, “সব ম্যাচ জিতে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এটাই সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি দিচ্ছে। এই দল খুব শক্তিশালী। এই দলের হয়ে খেলার একটা আলাদা মজা আছে।”
বুমরাহের না থাকা
রোহিতেরা বুঝে গিয়েছিলেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বুমরাহকে তাঁরা পাবেন না। তাই তাঁর অভাব মেটানোর পরিকল্পনা শুরু থেকেই করেছিলেন তাঁরা। রোহিত বলেন, “আমরা জানতাম বুমরাহকে পাওয়া যাবে না। ওর যে রকম চোট লেগেছিল, তাতে আমরা আগে থেকেই বুঝে গিয়েছিলাম যে সময়ের মধ্যে ও সুস্থ হতে পারবে না। এখনও ওর পুরো কেরিয়ার পড়ে রয়েছে। তাই ওকে খেলানোর ঝুঁকি আমরা নিইনি। প্রাথমিক দল ঘোষণার সময়ই ঠিক করেছিলাম বুমরাহের জায়গা কী ভাবে ভরব। তখনই মনে হয়েছিল, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শামির ১০০ শতাংশ ফিট থাকা খুব দরকার। ইংল্যান্ড সিরিজ়ে বুঝেছিলাম, বুমরাহ না থাকলেও আমাদের শামি আছে। পাশাপাশি অর্শদীপ, হর্ষিত তো আছেই।”
আরও পড়ুন:
মাঠে মেজাজ হারানো
মাঠে মাঝে মাঝেই মেজাজ হারাতে দেখা যায় রোহিতকে। সতীর্থের উপর চিৎকার করেন। গালাগালও দেন। কিন্তু সবই যে তিনি দলের জন্য করেন, সে কথা জানিয়েছেন ভারত অধিনায়ক। রোহিত বলেন, “মাঝে মাঝে মাঠে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। সতীর্থদের গালাগাল দিই। কিন্তু কাউকে ছোট বা হেয় করার জন্য বলি না। দলের সকলে সেটা জানে। এটা এমন একটা দল যার সকলে আমার কথা শোনে। যাকে যা বলেছি সে সেটাই করেছে। ওরা জানে যা বলি ওদের ভালর জন্যই বলি। কোনও ওভারে যদি কারও ওপর চিৎকার করি তা হলে সেটা ওই ওভারেই শেষ হয়ে যায়। পরের ওভারে আর কিছু মনে থাকে না।”
দলে বেশি স্পিনার রাখা
রোহিত জানিয়েছেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরু হওয়ার আগে থেকেই পিচ বোঝার চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। সেই কারণেই সফল হয়েছেন। রোহিতের কথায়, “ঘরে বসে ইন্টারন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি লিগের অনেক ম্যাচ দেখেছি। উইকেট বোঝার চেষ্টা করেছি।” রোহিতেরা বুঝতে পেরেছিলেন, দুবাইয়ের উইকেট মন্থর। সেখানে স্পিনারের সুবিধা পাবেন। সেই কারণেই এতগুলি স্পিনার খেলিয়েছে ভারত।
ব্যাটিংয়ের ধরন বদলানো
নিজের ব্যাটিংয়ের ধরন বদলেছেন রোহিত। অনেক বেশি আগ্রাসী ব্যাট করেন। এমন নয় যে আগের ধরনে তিনি রান পাচ্ছিলেন না। তার পরেও একটি বিশেষ কারণে ব্যাটিংয়ের ধরন বদলেছেন ভারত অধিনায়ক। তিনি বলেন, “কাজটা সহজ ছিল না। এমন হয়নি যে রান পাচ্ছিলাম না। রান করেছি। ম্যাচও জিতেছি। আমি সফল ছিলাম। তার পরেও কেন ব্যাটিংয়ের ধরন বদলালাম? তার কারণ, আমি অধিনায়ক। তাই প্রথমে আমাকেই বদল করতে হত। দলের কথা ভেবে খেলেছি। তবে দলকে নিয়ে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল। এটা এমন একটা দল যার আট নম্বরে ব্যাট করতে নামে জাডেজা। তাই একটা আত্মবিশ্বাস ছিল যে আমি আউট হলেও কোনও সমস্যা হবে না।”
দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
তিনি আর কত দিন এক দিনের ক্রিকেট খেলবেন তা নিয়ে এখনও কিছু জানাননি রোহিত। তিনি অবসর নেওয়ার আগে দলকে কোথায় ছেড়ে যেতে চান ভারত অধিনায়ক? রোহিত বলেন, “এমন একটা দল তৈরি করতে চাই যারা কঠিন পরিস্থিতিতেও হাল ছাড়বে না। পাঁচ উইকেট পড়লেও হাল ছাড়বে না। লড়াই থেকে ফিরবে না।”