প্রতীকী চিত্র।
সাত মাস আগে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিধানসভার একমাত্র এবং রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হিসাবে উঠে এসেছিল তারা। গত অক্টোবর এবং নভেম্বর মিলিয়ে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে শোচনীয় হার হয়েছে তাদের। একাধিক আসনে জামানতও জব্দ হয়েছে। আর ১৯ ডিসেম্বরের কলকাতা পুরনির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের হারে তৃতীয় স্থানে নেমে গেল বিজেপি। তাদের দখলে থাকা দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল বামফ্রন্ট। কলকাতায় এ বার ৪৮টি ওয়ার্ডে বিজেপি এবং ৬৫টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বামেরা। যা দেখে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ব্যাখ্যা, বিজেপি ধীরে ধীরে প্রান্তিক হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অবশ্য বলেন, “এই ভোটের ফল জনমানসের প্রতিফলন বলে আমরা মনেই করি না। ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। ভোট লুঠ করে কিছু মানুষ ভুয়ো কাউন্সিলর হয়েছেন।”
২০১৯-এর লোকসভা ভোটের ফল অনুযায়ী কলকাতা পুরসভার ২২টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল বিজেপি। আর চলতি বছরের বিধানসভা ভোটের ফলের নিরিখে শহরের ১২টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল তারা। ভবানীপুর বিধানসভার উপনির্বাচনে পরাজয়ের পরে কলকাতার ১০টি ওয়ার্ডে বিজেপির ভোট ছিল সর্বোচ্চ। মঙ্গলবার কলকাতা পুরভোটের ফল বেরনোর পরে তাদের হাতে রইল শহরের তিনটি ওয়ার্ড— ২২, ২৩ আর ৫০। তার মধ্যে ২২ নম্বর ওয়ার্ডে টানা ছ’বার জিতলেন বিজেপির মীনাদেবী পুরোহিত। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ের হ্যাটট্রিক হল বিজয় ওঝার। আর ৫০ নম্বর ওয়ার্ড এ বার প্রথম বিজেপির দখলে এল। সেখানে জিতলেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা সজল ঘোষ। ২০১৫ সালে কলকাতার পুরভোটে বিজেপি জিতেছিল ২২, ২৩, ৪২, ৮৬ এবং ৮৭— এই সাতটি ওয়ার্ডে। ১৯৯৫ সাল থেকে দখলে রাখা ৪২ নম্বর ওয়ার্ড এ দিন তাদের হাতছাড়া হয়েছে। ৮৬ এবং ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডেও এ বার হেরেছে তারা। ১১৬টি ওয়ার্ডে বিজেপির জামানত জব্দ হয়েছে।
ভোটের হারের নিরিখে বিধানসভা নির্বাচনে কলকাতায় বিজেপির ঝুলিতে ছিল প্রায় ২৯% ভোট। এ বার কলকাতা পুরসভার নির্বাচনে তারা পেয়েছে ৯.২১% ভোট। আর যাদের ‘অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়া রাজনৈতিক দল’ বলে কটাক্ষ করে থাকে তারা, সেই বামফ্রন্ট এই নির্বাচনে পেয়েছে ১১.৮৯% ভোট। ভোটের হার এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকারের নিরিখে বামপন্থীরা এগিয়ে গিয়েছে বিজেপির চেয়ে।
কিন্তু বিধানসভা ভোটের সাত মাসের মধ্যে বিজেপির ২০% ভোট ক্ষয়ের কারণ কী? বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্তের কথায়, “কলকাতায় আমাদের সংগঠন শক্তিশালী নয়। জেলাশহরের পুরসভাগুলিতে ভোট হলেই বোঝা যাবে, আমরাই দ্বিতীয় শক্তি। আর তা ছাড়া, কলকাতায় তো কোনও ভোটই হয়নি। অবাধ ছাপ্পা ভোট হয়েছে।” আর বামেদের দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা প্রসঙ্গে সুকান্তের ব্যাখ্যা, “কে প্রধান বিরোধী, সে বিষয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে বিরোধী ভোট ভাগ করার কৌশল করেছে তৃণমূল। তার জন্য ভোটের দিন তৃণমূল ছাপ্পা দেওয়ার সময় তিনটে করে ভোট জোড়াফুলে দিয়ে একটা করে ভোট সিপিএমে দিয়েছে।”
রাজ্য বিজেপির অন্দরে দলের একাংশ অবশ্য এই ফলের জন্য নেতৃত্বের পারস্পরিক দ্বন্দ্বকে দায়ী করছে। তাদের মতে, কলকাতা পুরভোট পরিচালনার দায়িত্ব যাঁদের দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের অনেকেই নানা ক্ষোভের জন্য কাজে সময় দেননি। তা ছাড়া, দল প্রার্থী বাছাই এবং প্রচার শুরু করেছে অনেক পরে। বিধানসভা ভোট থেকে একের পর এক পরাজয়ে এবং সন্ত্রাসের ধাক্কায় কর্মীরাও অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছেন। সব কিছুর প্রতিফলন ঘটেছে কলকাতার পুর-ফলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy