মুকুল রায় (বাঁ দিকে)। সিদ্ধার্থনাথ সিংহ (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
প্রায় সাত বছর আগে ২০১৪ সালের নভেম্বরে তোলা স্লোগান ২০২৩ সালেও ভোলেনি বাংলা। রাজ্য বিজেপির তৎকালীন পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ ধর্মতলার মোড়ে দাঁড়িয়ে স্লোগান তুলেছিলেন, ‘‘ভাগ মুকুল ভাগ!’’ মানে, ‘‘পালা, মুকুল পালা!’’ তাঁর তোলা স্লোগান সত্যি হয়নি। কিন্তু ‘স্মরণীয়’ হয়ে গিয়েছে। কারণ, মুকুল রায় তৃণমূলে পালাননি। উল্টে এসে পড়েছিলেন সিদ্ধার্থেরই দল বিজেপিতে। এখনও মুকুল খাতায়কলমে বিজেপিরই বিধায়ক।
মাঝের দীর্ঘ সময়ে দেশ, রাজ্য, বিজেপি, তৃণমূল— সবই বদলে গিয়েছে। বদলেছেন মুকুল। বদলেছেন সিদ্ধার্থও। একটা সময়ে এই রাজ্যে বিজেপির মধ্যেই ‘ভাগ সিদ্ধার্থ ভাগ’ স্লোগান উঠেছিল। তাঁর মাথার উপরে প্রথমে মধ্যপ্রদেশ থেকে কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে নিয়ে আসা হয়। তার পরে সিদ্ধার্থকে সরিয়েও দেওয়া হয়। বিজেপিতে অবশ্য গুরুত্ব কমেনি তাঁর। এখন তিনি উত্তরপ্রদেশের বিধায়ক। প্রথম যোগী আদিত্যনাথ সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন। মঙ্গলবার তিনি নিজের পুরনো কর্মভূমি কলকাতায় এসেছেন নরেন্দ্র মোদী সরকারের ন’বছর পূর্তির প্রচারে। তার অঙ্গ হিসাবে সকালে দক্ষিণেশ্বরে ভবতারিণী মন্দিরে পুজো দিয়ে বিকেলে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। তার পরে কলকাতা মেট্রোয় চাপেন। সবই মোদী সরকারের ন’বছর পূর্তি পালনের কর্মসূচি। তবে তার মধ্যেই উঠেছিল ‘ভাগ মুকুল ভাগ’ স্লোগান প্রসঙ্গ। তার কী উত্তর দিলেন সিদ্ধার্থ? উত্তর দিলেন? না কি এড়িয়ে গেলেন?
রাজ্যের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার পরেও কলকাতায় এসেছিলেন সিদ্ধার্থ। গত বিধানসভা ভোটের সময় বিজেপি হেস্টিংসের নির্বাচনী দফতরে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। কিন্তু রাজ্য দফতরে অনেক দিন পর। নিজেই বললেন, ‘‘অনেক দিন পরে এলাম। সাত বছর পরে এই দফতরে।’’ কেন্দ্রের মোদী সরকারের ‘সাফল্য’ তুলে ধরার পরেই প্রশ্ন এল, তিনি ‘ভাগ মুকুল ভাগ’ স্লোগান তুলেছিলেন। তার পরে মুকুল বিজেপিতে এসেছেন, সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হয়েছেন, বিধায়ক হয়েছেন, তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন এবং এখন বিজেপিতে ফিরতে চাইছেন। কী বলবেন? হাসি-হাসি মুখে সিদ্ধার্থ বললেন, ‘‘আমি তো এই রাজ্য থেকে তৃণমূল সরকারকে উৎখাত করার কথা বলেছিলাম! আমাদের দল তিন থেকে ৭৭ বিধায়কে পৌঁছেছে। এটা কম বড় সাফল্য নয়। আগামী দিনে আমরা আরও বেশি জনসমর্থন পাব।’’
বিজেপি বিধানসভা নির্বাচনে ৭৭ আসনে জিতলেও পরে উপনির্বাচনে হেরে আসন সংখ্যা ৭৫ হয়ে যায়। এর পরে মুকুল-সহ ছয় বিজেপি বিধায়ক তৃণমূলে ফেরেন। ফলে খাতায়কলমে আসনসংখ্যা যা-ই থাকুক না কেন, বিধানসভায় বিজেপির ‘আসল’ শক্তি এখন ৬৯। যদিও মুকুল এখন বলছেন, তিনি বিজেপিতে ছিলেন এবং আছেন। তৃণমূলও রায়সাহেবের থেকে দূরত্ব তৈরি করে ফেলেছে। সে সব নিয়ে অবশ্য কোনও প্রশ্নের সুযোগ দেননি সিদ্ধার্থ। তাঁর আগেই সাংবাদিক বৈঠক শেষ করে দেন। তবে সে সবের মধ্যেই হাবেভাবে বুঝিয়ে দেন, বাংলা তাঁর স্লোগান ‘ভাগ মুকুল ভাগ’ মনে রাখায় তিনি খুব অখুশি নন।
সিদ্ধার্থের অখুশি হওয়ার কথাও নয়। সাত বছর আগে বিজেপি কর্মীদের মধ্যে ওই স্লোগান সাড়া ফেলে দিয়েছিল। সেই সময়ে বিজেপির সভায় সিদ্ধার্থ গেলে নেতারাও ঘোষণা করতেন, “‘ভাগ মদন ভাগ! ভাগ মুকুল ভাগ! ভাগ মমতা ভাগ’ বলে যিনি আমাদের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন, তিনি এ বার ভাষণ দেবেন।” বস্তুত, মুকুলকে সিদ্ধার্থের ভোলার কথাও নয়। বিজেপির অনেকেই মনে করেন, মুকুলকে দলে নেওয়ার বিষয়ে কৈলাসের সঙ্গে মতভেদ সিদ্ধার্থের বাংলার দায়িত্ব হারানোর অন্যতম কারণ ছিল। সিদ্ধার্থকে বাংলা থেকে সরিয়ে উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী করার পরেই দিল্লিতে মুকুলকে স্বাগত জানিয়েছিল বিজেপি। তবে এখন শোনা যাচ্ছে, আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে কলকাতা সংলগ্ন কয়েকটি আসনের সংগঠন দেখভালের দায়িত্ব পেতে পারেন সিদ্ধার্থ। তবে মুকুল সম্ভবত তখন বলবেন না, ‘‘ভাগ সিদ্ধার্থ ভাগ!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy